ডিসেম্বর ২৩, ২০২৪

চলতি ২০২৩ সালের রমজান মাস উপলক্ষ্যে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ এবং ইংলিশ ফুটবল লীগে খেলা চলাকালে খেলোয়াড়দের বিরতি দেয়াসহ রেফারিদের বেশকিছু বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছে যুক্তরাজ্যের ফুটবল কর্তৃপক্ষ ব্রিটিশ ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন- বিএফএ।

নির্দেশনায় বলা হয়েছে, এখন থেকে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের প্রত্যেক ম্যাচের সময় রোজা রাখা মুসলিম ফুটবলার এবং ম্যাচ কর্মকর্তাদের জন্য বিশেষ বিরতি দেবেন রেফারিরা।

এর আগে ফুটবলাররা নিজে থেকে বিরতি বা ইফতারের সময় খুঁজে নিতেন, কিন্তু এবার রমজান শুরুর আগেই এফএ’র বিশেষ চার্টারে সবগুলো ক্লাব সম্মত হয়েছে। এর ফলে রোজা রাখবেন যেসব মুসলিম ফুটবলার ইফতারের সময় তাদের আনুষ্ঠানিকভাবে বিরতি দেয়া হবে।

২০২১ সালে ‘মুসলিম অ্যাথলিট চার্টার’ নামে একটি সনদে আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মতি জানিয়েছিল কয়েকটি ব্রিটিশ ক্লাব। মুসলিম খেলোয়াড়দের জন্যই তৈরি করা হয়েছিল সনদটি।

এবার এফএ’র নতুন নির্দেশনায় বলা হয়েছে, চলতি ২০২৩ সালের রমজান থেকে সনদটি দেশের সব ফুটবল ম্যাচের জন্য প্রযোজ্য হবে।

এর আগে ফুটবলাররা নিজে থেকে বিরতির সময় খুঁজে নিতেন মুসলিম ফুটবলারদের ‘বিশেষ চার্টার’

বিএফএ’র নতুন নির্দেশনায় রেফারিদের উদ্দেশে বলা হয়েছে, ম্যাচ শুরুর আগেই কোন কোন ফুটবলার রোজা রেখেছেন, সে সংক্রান্ত তথ্য যোগাড় করতে। তারপর ম্যাচ চলাকালে একটা আনুমানিক সময় বাছাই করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যখন খেলায় একটি বিরতি দেয়া হবে এবং ওই সময়ে রোজদার ফুটবলাররা রোজা শেষে ইফতার করতে পারবেন।

রেফারিদের আরও বলা হয়েছে, বিরতিতে রোজাদার ফুটবলাররা তরল, এনার্জি জেল কিংবা সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করতে পারবেন, যাতে রোজা রাখার পরেও শরীরে যথেষ্ট শক্তি থাকে এবং ধর্মীয় রীতিও পালন করতে পারেন একজন ফুটবলার।

ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ফুটবলার মুসলিম। তাদের মধ্যে লিভারপুলের মোহামেদ সালাহ, চেলসির এনগোলো কান্দে, ম্যানচেস্টার সিটির রিয়াদ মাহারেজরা রোজা রাখেন বলে জানা গেছে।

মাঠে এই ফুটবলারদের নানা ধরণের ধর্মীয় আচার পালন করতে দেখা যায়। বিশেষত খেলা শুরুর আগে দোয়া করা কিংবা গোল দেয়ার পর তা নিয়ে আনন্দ প্রকাশের সময়।

২০২১ সালে করা মুসলিম চার্টারে সব মিলিয়ে ১০টি পয়েন্ট ছিল। এসবের মধ্যে ম্যাচের আগে-পরে মুসলিম ফুটবলারদের অ্যালকোহল পরিহার (বিশেষ করে উদযাপনের সময়ে), প্রার্থনার জন্য উপযোগী স্থানের ব্যবস্থা করা, হালাল খাবার এবং রমজান মাসে রোজা রাখার অনুমতি দেওয়া প্রভৃতি ব্যাপারও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। সেসব পয়েন্ট এখনো বলবৎ আছে।

অলাভজনক সামাজিক সংস্থা নুজুম স্পোর্টসের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী এবাদুর রহমান বিবিসি স্পোর্টকে সেসময় বলেছিলেন, ‘আমি খেলাধুলার জগতে কাজ করার সুবাদে জানি যে এখানে আমার ধর্ম মেনে চলা কতটা কঠিন।’

‘খেলোয়াড় ও ক্লাবগুলোর সাথে কথা বলে আমরা এটা অনুভব করেছি যে যুক্তরাজ্যে একটি মুসলিম অ্যাথলিট চার্টার চালু করার এটাই সঠিক সময়। আমরা বিশ্বাস করি এটাই প্রথম এবং এর মতো কিছু আগে হয়নি,’ বিবিসিকে তিনি বলেন।

এবাদুর রহমান এই চার্টারকে সংহতি, সমতা এবং নিজেদের ক্লাব ও টিমে মুসলমান খেলোয়াড়রা যে অবদান রাখছে তাকে স্বীকৃতি দেয়ার ইতিবাচক আন্দোলন বলে বর্ণনা করেছিলেন।

অবশ্য এই চার্টার প্রণয়নের আগেও ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগে ইফতার করার জন্য বিরতি দেয়া হতো। ২০২০ সালে লেস্টার সিটি এবং ক্রিস্টাল প্যালেসের মধ্যকার একটি ম্যাচে রেফারি গ্রাহাম স্কট বিরতি দিয়েছিলেন, সেই ম্যাচে ওয়েসলি ফোফানা এবং শেইখো কোয়াটে সূর্য ডোবার সময় রোজা ভেঙ্গেছিলেন।

সেসময় ফোফানা টুইট করে প্রিমিয়ার লিগ কর্তৃপক্ষ এবং ক্রিস্টাল প্যালেসের গোলকিপার ভিসেন্তে গুয়াইতাকে ধন্যবাদ জানিয়েছিলেন। কারণ, এই গোলকিপার গোলকিকের সময় মুসলমান ফুটবলারদের অনুরোধে বিরতি দিয়েছিলেন এবং রেফারি অনুমোদন দিয়েছিলেন ইফতার করার জন্য।

চলতি বছর ২৩শে মার্চ থেকে ২২শে এপ্রিল পর্যন্ত রমজান মাস চলবে যুক্তরাজ্যে।

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন...