নভেম্বর ২৪, ২০২৪

অসন্তোষ কমাতে রেশন কার্ডের মাধ্যমে গার্মেন্ট শ্রমিকদের চাল-ডাল-তেলসহ নিত্যপণ্য স্বল্প মূল্যে দিতে সরকারের কাছে প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ টেক্সটাইল-গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ফেডারেশন।একটি সদস্যের শ্রমিক পরিবারের মাসিক ৩৫ হাজার টাকা খরচ হয় জানিয়ে সংগঠনটি বলছে, নিম্মতম মজুরি ১২ হাজার ৫০০ টাকা নির্ধারণ হলেও মুদ্রাস্ফীতির কারণে শ্রমিকদের অবস্থা আগের চেয়েও খারাপ।

শনিবার (২৩ নভেম্বর) সকালে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত গোল টেবিল আলোচনায় এ প্রস্তাবনা তুলে ধরা হয়।

তবে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেছেন, শ্রমিকদের নিত্যপণ্য স্বল্প মূল্যে দেওয়ার দাবি মেনে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু টিসিবি কার্ডের মাধ্যমে ১০ লাখ শ্রমিককে স্বল্পমূল্যে নিত্যপণ্য দেওয়ার ব্যবস্থা করা হলেও এখনও শ্রমিকদের তালিকা দেওয়া হয়নি। ফলে তা বাস্তবায়ন করা যায়নি।

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ টেক্সটাইল-গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের পক্ষ থেকে ৮ দফা প্রস্তাবনা তুলে ধরেন সংগঠন ও অনুষ্ঠানের সভাপতি মাহাবুবুর রহমান ইসমাইল।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি কাজী মনিরুজ্জামান মনির, বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম, সিনিয়র সাংবাদিক কাজী আজিজুর ইসলাম, সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম, বিলসের নির্বাহী পরিচালক সুলতান উদ্দিন আহমেদ, শ্রমিক নেতা আবুল হোসেনসহ অনেকে।

আট দফা প্রস্তাবনায় বলা হয়-

রেশন কার্ডের মাধ্যমে গার্মেন্টস শ্রমিকদের চাল-ডাল-তেলসহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য সামগ্রী স্বল্প মূল্যে দিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করতে হবে।

আইএলও কনভেনশনের আলোকে ইপিজেডসহ সকল গার্মেন্টস কারখানায় শ্রমিকদের অবাধ ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার নিশ্চিত করতে হবে এবং একই আইন প্রচলন করতে হবে। ট্রেড ইউনিয়ন রেজিস্ট্রেশনে সকল আইনী বাধা দূর করতে হবে।

সংবিধান সংস্কারে সকল শ্রমিকের খাদ্য নিরাপত্তা রাষ্ট্রীয়ভাবে নিশ্চিত করার ধারা অন্তর্ভূক্ত করতে হবে।

শ্রমিকের স্বাস্থ্য ও জীবিকা নিরাপত্তায় মালিক, সরকার, বায়ার উদ্যোগী হয়ে ‘জরুরী স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা’ তহবিল গঠন করতে হবে। যে তহবিল থেকে স্বাস্থ্য নিরাপত্তাসহ শ্রমিকের জীবিকার উপর হুমকী আসলে তা মোকাবিলা করা হবে।

অনানুষ্ঠানিক বা অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কর্মরত শ্রমজীবীসহ কর্মহীন ও কর্মঅক্ষম শ্রমিকদের জীবন- জীবিকা নিশ্চিত করতে ‘সার্বজনীন কল্যাণ তহবিল’ গঠন করতে হবে।

ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, সাভার, আশুলিয়া এবং চট্টগ্রাম ৬টি গুরুত্বপূর্ণ শিল্প অঞ্চলে আন্তর্জাতিক মানের হাসপাতাল নির্মাণ করতে হবে। যেখানে দেশি-বিদেশি ডাক্তার থাকবে, যার ব্যয় বহন করবে গার্মেন্টস মালিক, বিদেশি বায়ার ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

২০১২ সালের ২৪ নভেম্বর তাজরীন ফ্যাশনসে অগ্নিকাণ্ড এবং ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল রানা প্লাজা ভবন ধসে নিহত-আহত শ্রমিকদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ, আহতদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। তাজরীন গার্মেন্টসের ১২৫ জন শ্রমিক হত্যার অভিযোগে কৃষক লীগের ঢাকা উত্তরের সহ-সভাপতি তাজরীন গার্মেন্টসের মালিক দেলোয়ারের জামিন বাতিল করে অবিলম্বে গ্রেফতার ও বিচার করতে হবে।

রানা প্লাজা ভবন ধসে ১ হাজার -১৩৮ জন শ্রমিক হত্যাকারী ভবন মালিক সোহেল রানার জামিন বাতিল ও বিচার এবং ওই ভবনের গার্মেন্টস কারখানার মালিকসহ সকল দায়ী-দোষিদের শ্রমিক হত্যার অভিযোগে বিচার করতে হবে।

স্বৈরাচারী সরকারের আমলে শ্রম মন্ত্রণালয়ের অধীনে সকল কমিটিতে মালিক-সরকারের মনোনীতদের বাদ দিয়ে যোগ্য ব্যক্তিদের নিয়ে সকল কমিটি করতে হবে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামান শ্রমিকদের সঙ্গে শ্রমিক নেতাদের দূরত্ব নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেন।

তিনি বলেন, “শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে তাদের ১৮ দফা মেনে নেওয়া হলেও এর পরদিন শ্রমিকরা মজুরি দ্বিগুণ না করায় সড়ক অবরোধ করেন। শ্রমিক নেতারা যদি শ্রমিকদের সঙ্গে থাকতেন তাহলে এমনটি হত না।

“তাহলে আপনারা কেন ১৮ দফায় স্বাক্ষর করলেন,” শ্রমিক নেতাদের দিকে প্রশ্ন ছুড়ে দেন সচিব।

তিনি বলেন, “শ্রমিক পরিবারের খরচ ৩৫ হাজার টাকার যে হিসাব এখানে দেওয়া হয়েছে, সেটি কতটা বাস্তবসম্মত তা ভেবে দেখতে হবে। আমরা একটা অধিদপ্তর করে কর্মসংস্থানের দায়িত্বটা নিতে চাচ্ছি। এ অধিদপ্তর দেশের অভ্যন্তরীণ কর্মসংস্থানের দায়িত্বটা নেবে।”

সচিব বলেন, “শ্রমিকদের জন্য আলাদা হাসপাতাল হলে রিসোর্সের অপচয় হওয়ার সম্ভাবনা আছে। এর বদলে শিল্প অঞ্চলের হাসপাতালগুলোতে শ্রমিকদের জন্য আলাদা ডেস্ক করা যেতে পারে, যাতে শ্রমিকরা ওই ডেস্কে গেলে সরাসরি সেবা পেতে পারেন।

সংবিধান সংস্কারে সকল শ্রমিকের খাদ্য নিরাপত্তা রাষ্ট্রীয়ভাবে নিশ্চিত করার ধারা অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাবনার বিষয়ে সফিকুজ্জামান বলেন, “শুধু শ্রমিক নয়, সব নাগরিকের মৌলিক অধিকার নিশ্চিতের দায়িত্ব রাষ্ট্রের নেওয়া উচিত।”

তিনি বলেন, রানা প্লাজার মালিকের জামিন হাই কোর্ট থেকে দেওয়া হলেও পরে চেম্বার আদালত সে আদেশ বাতিল করেছে।

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন...