উচ্চ মূল্যস্ফীতি, রাজস্ব আহরণে ঘাটতি, সঞ্চয়পত্র বিক্রি কম— এমন পরিস্থিতিতে ব্যাংক থেকে বাড়তি ঋণ নিয়ে গত অর্থবছরে বাজেটের ব্যয় মেটাতে হয়েছে সরকারকে। সদ্য সমাপ্ত এ অর্থবছরে ব্যাংক খাত থেকে সর্বমোট এক লাখ ২৪ হাজার ১২২ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে সরকার। যা একক অর্থবছরের বিবেচনায় বাংলাদেশের ইতিহাসে সরকারের সর্বোচ্চ ঋণ। বাজেটের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় নয় হাজার কোটি টাকা বেশি ঋণ নিয়েছে সরকার।
খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, একদিকে সরকারের খরচ বেড়েছে, বিপরীতে রাজস্ব আদায় আশানুরূপ হচ্ছে না। অন্যদিকে, নানা শর্তের কারণে সঞ্চয়পত্র বিক্রির চেয়ে পরিশোধ করতে হচ্ছে বেশি। এ দুই কারণে বাড়তি ব্যয় মেটাতে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি ঋণ নিয়েছে সরকার।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০২২-২৩ অর্থবছরের শেষ কর্মদিবস ২৬ জুন পর্যন্ত এক লাখ ২৪ হাজার ১২২ কোটি ৬৭ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছে সরকার। এ অঙ্ক বাজেটের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আট হাজার ৬৯৭ কোটি টাকা বেশি।
এদিকে, অর্থবছর শেষে সরকারের বর্তমান ঋণস্থিতি দাঁড়িয়েছে তিন লাখ ৯৮ হাজার ৪৩৫ কোটি টাকা।
২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে ব্যাংক খাত থেকে সরকার ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য ঠিক করেছিল এক লাখ ছয় হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা। কিন্তু সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ কমে যাওয়া এবং রাজস্ব আহরণ কম হওয়ায় সংশোধিত বাজেটে ব্যাংক ঋণের লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়ে এক লাখ ১৫ হাজার ৪২৫ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়। শেষ পর্যন্ত এ লক্ষ্যমাত্রায়ও থিতু হয়ে থাকতে পারেনি সরকার। বাড়তি ব্যয় মেটাতে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আট হাজার ৭০০ কোটি টাকা বেশি ঋণ নিতে হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত অর্থবছরের ২৬ জুন পর্যন্ত সরকারের ঋণের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক সরবরাহ করেছে ৯৮ হাজার ৮২৬ কোটি টাকা। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে নিয়েছে ২৫ হাজার ২৯৬ কোটি টাকা। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরাসরি সরকারকে ঋণ সরবরাহ করা মানে টাকা ছাপিয়ে অর্থ দেওয়া।
সরকার ট্রেজারি বিল ও বন্ড ইস্যু করে ৯১ দিন থেকে শুরু করে ২০ বছর পর্যন্ত মেয়াদে ঋণ নেয়। সর্বশেষ তথ্য বলছে, ২৬ জুন পর্যন্ত ব্যাংক ব্যবস্থায় সরকারের ঋণস্থিতি দাঁড়িয়েছে তিন লাখ ৯৮ হাজার ৪৩৫ কোটি টাকায়। এর মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকে রয়েছে এক লাখ ৫৮ হাজার ৮২০ কোটি টাকা। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছে ঋণ দুই লাখ ৩৯ হাজার ৬১৫ কোটি টাকা।