নভেম্বর ১৪, ২০২৪

স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, ন্যায় বিচার ও মানবাধিকার নিশ্চিত করে দুর্নীতিমুক্ত, গণতান্ত্রিক, সুশাসিত ‘নতুন বাংলাদেশ’ বিনির্মাণে রাষ্ট্রকাঠামোকে ঢেলে সাজাতে কৌশলগত নয়টি সুপারিশ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।

রাষ্ট্রকাঠামোতে প্রয়োজনীয় সংস্কারের লক্ষ্যে কৌশলগত বিষয়ের সন্নিবেশনে অন্তবর্তীকালীন সরকারের জন্য এই সুপারিশমালা পাঠিয়েছে সংস্থাটি।

বুধবার (২৮ আগস্ট) ঢাকার ধানমন্ডির কার্যালয়ে ‘নতুন বাংলাদেশ: গণতন্ত্র ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা এবং দুর্নীতি প্রতিরোধে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের করণীয়’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে সুপারিশগুলো তুলে ধরে টিআইবি।

সুপারিশমালায় বলা হয়, জনপ্রতিনিধিত্ব, সরকার ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা ও চর্চায় এমন আমূল পরিবর্তন আনতে হবে যেন জনগণের রায় ও অর্পিত ক্ষমতায় এবং জনগণের প্রতি কার্যকর জবাবদিহিতার মাধ্যমে রাষ্ট্র পরিচালিত হয়। কতৃত্ববাদী সরকার পতনের ফলশ্রুতিতে নতুন কর্তৃত্ববাদ ও দলীয় প্রভাবে পরিচালিত শাসনের উত্থানের ঝুঁকি প্রতিহত করতে দুর্নীতি প্রতিরোধ, গণতন্ত্র, সুশাসন ও শুদ্ধাচার প্রতিষ্ঠার জন্য রাষ্ট্রকাঠামোতে প্রয়োজনীয় সংস্কারের লক্ষ্যে এ সুপারিশমালা প্রস্তুত করেছে টিআইবি।

গণতান্ত্রিক চর্চা, আইনের শাসন ও মানবাধিকার, অনিয়ম-দুর্নীতি প্রতিরোধ ও অর্থপাচার রোধ, সাংবিধানিক, সংবিধিবদ্ধ, সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, নাগরিক সমাজ ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, তথ্য অধিকার ও ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষা, স্থানীয় সরকারব্যবস্থা, ব্যাংক খাত এবং বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও পরিবেশ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কৌশলগত সুপারিশ করেছে টিআইবি।

সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য দলনিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারব্যবস্থা প্রবর্তন করতে হবে।

নির্বাচন আয়োজনে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার স্থায়ী করা, দলীয় মনোনয়নে এক-তৃতীয়াংশ তরুণদের জায়গা দেওয়া, জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে গণ-অনাস্থা আনার ব্যবস্থা রাখার কথা বলছে টিআইবি।

ইফতেখারুজ্জামান বলেন, নিরপেক্ষ ও স্বার্থের দ্বন্দ্বমুক্তভাবে সংসদ ও নির্বাহী বিভাগের কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য একই ব্যক্তি একইসঙ্গে সরকারপ্রধান (প্রধানমন্ত্রী), দলীয় প্রধান ও সংসদ নেতা থাকতে পারবেন না এবং দুই মেয়াদের বেশি একই ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না- এমন বিধান সৃষ্টির পরামর্শ দিচ্ছে টিআইবি।

অন্যদিকে, আইনের শাসন ও মানবাধিকার নিশ্চিতে মাসদার হোসেন মামলার রায় অনুযায়ী বিচার বিভাগের পৃথকীকরণ-প্রক্রিয়া অনতিবিলম্বে সম্পন্ন করতে সুপারিশ করেছে টিআইবি।

বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও মর্যাদা নিশ্চিত করা এবং প্রশাসনিক কার্যক্রম স্বাধীনভাবে পরিচালনার জন্য বিচার বিভাগের পরিপূর্ণ ক্ষমতায়িত নিজস্ব সচিবালয় স্থাপন ও কার্যকর করা, উচ্চ এবং অধস্তন আদালতের নিয়োগ, পদোন্নতি ও বদলিসহ সার্বিক নিয়ন্ত্রণ ও তত্ত্বাবধান এককভাবে সুপ্রিম কোর্টের কর্তৃত্বাধীন সচিবালয়ের ওপর ন্যস্ত করতে পরামর্শ দিয়েছে টিআইবি।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে একটি স্বচ্ছ, জবাবদিহিমূলক, দুর্নীতিমুক্ত, বৈষম্যহীন নতুন বাংলাদেশ গড়ে তোলার উপযোগী রাষ্ট্রকাঠামো তৈরির পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করেন ইফতেখারুজ্জামান।

পাচার হওয়া অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনা প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, “এ ক্ষেত্রে আমরা দুদক, সিআইডি, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বিএফআইইউ- এসব সংস্থাকে একত্রে কাজ করার জন্য টাস্কফোর্স গঠনের প্রস্তাব করছি।

ছাত্র-জনতার আন্দোলনসহ বিভিন্ন সময়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাগুলোর সদস্যদের বিরুদ্ধে উত্থাপিত বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম ও অন্যান্য মানবাধিকার লঙ্ঘন, অনিয়ম-দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের তদন্তপূর্বক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে এবং সকল আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী (পুলিশ, র‌্যাব, গোয়েন্দা সংস্থা) এবং প্রশাসনকে দলীয় প্রভাবমুক্ত করার জন্য ঢেলে সাজাতে সুপারিশ করেছে টিআইবি।

প্রস্তাবিত সুপারিশমালায় আশু প্রাধান্যের ক্ষেত্র হিসেবে শান্তি-শৃঙ্খলা, জননিরাপত্তা ও প্রশাসনিক স্বাভাবিকতা নিশ্চিত করা; নজিরবিহীন প্রাণহানিসহ বহুমাত্রিক মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য সরাসরি ও হুকুমের অপরাধে দায়ী সকলকে জাতিসংঘের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য জবাবদিহি নিশ্চিত করা; অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনা; উচ্চ পর্যায়ের দুর্নীতি ও অর্থপাচারের কার্যকর জবাবদিহির অনুকরণীয় উদাহরণ স্থাপনে দুদক, বিএফআইইউ, এনবিআর, সিআইডি ও অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ের সমন্বয়ে টাস্কফোর্স গঠন করা; ‘‘নতুন বাংলাদেশ’’ এর অভীষ্ট ও লক্ষ্য অর্জনে রাষ্ট্র-সংস্কারের অপরিহার্য কাঠামো বিনির্মাণের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কৌশলগত পথরেখা প্রকাশ করার কথা বলেছে টিআইবি।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপদেষ্টা-নির্বাহী ব্যবস্থাপনা অধ্যাপক ড. সুমাইয়া খায়ের, গবেষণা ও কর্মকর্তাদের মধ্যে মুহাম্মদ বদিউজ্জামান, শাহজাদা এম আকরাম, মো. জুলকারনাইন ও মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন...