উৎপাদন করা সোনার পাহাড় নিয়ে বড় বিপদে পড়ে যাচ্ছিল রাশিয়া৷ বছরে উৎপাদিত ৩২৫ টন সোনার পুরোটাই দেশের সীমানায় বন্দি থাকলে বড় বিপর্যয় নামতো রুশ অর্থনীতিতে৷ সুকৌশলে সেই বিপদ এড়িয়েছে রাশিয়া৷ তাতে লাভ হয়েছে সংযুক্ত আমিরাত, চীন এবং তুরস্কের৷
রাশিয়ার আবগারি বিভাগের তথ্য বলছে, পশ্চিমা দেশগুলোর নিষেধাজ্ঞা নেমে আসার পর দেশটি থেকে প্রায় এক হাজার সোনার চালান গেছে সংযুক্ত আরব আমিরাতে৷ এই সময়ে সেখানে রুশ সোনার আমদানি না কমে বরং বেড়েছে৷ নিষেধাজ্ঞা আরোপের আগের বছর, অর্থাৎ ২০২১ সালে ৭৪.৩ টন সোনা রাশিয়া থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাতে গিয়েছিল, ২০২২ সালে সেখানে আমদানিকৃত সোনা ১.৩ টন বেড়ে হয়ে গেছে ৭৫.৭ টন৷
ইউক্রেনে হামলা চালিয়ে নিষেধাজ্ঞার চাপে পড়া রাশিয়ার সোনার সবচেয়ে বড় ক্রেতা এখন সংযুক্ত আরব আমিরাত৷ তার ঠিক পরেই রয়েছে চীন এবং তুরস্ক৷ ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০২৩ সালের ৩ মার্চ পর্যন্ত এই দুটি দেশে ২০ টন করে সোনা রপ্তানি করেছে রাশিয়া৷
রাশিয়ার কাস্টমস বিভাগের নথিভুক্ত তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের সবচেয়ে বড় দেশটি নিষেধাজ্ঞা শুরুর পর থেকে যে পরিমান সোনা রপ্তানি করেছে তার ৯৯.৮%-ই গেছে এই তিন দেশ অর্থাৎ সংযুক্ত আরব আমিরাত, চীন এবং তুরস্কে৷ তবে তিন দেশে রপ্তানি অব্যাহ রাখতে পারলেও উৎপাদিত সব সোনা যে রাশিয়া বিক্রি করতে পারছে, ব্যাপারটা সেরকম নয়৷ ২০২২ সালে মোট ৩২৫ টন সোনা উৎপাদন করেছে রাশিয়া৷ সেখান থেকে এ পর্যন্ত রপ্তানি হয়েছে মাত্র ১১৬. ৩ টন৷
নিষেধাজ্ঞার খড়গ নেমে আসার আগে রাশিয়ার সোনা সবচেয়ে বেশি যেতো ব্রিটেনে৷ কিন্তু পশ্চিমা দেশগুলো নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর বিশ্বের অনেক বহুজাতিক ব্যাংক, ধাতু পরিশোধন ও ক্রয়-বিক্রয় প্রতিষ্ঠান মস্কোর দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়৷ ২০২২ সালের ৭ মার্চ লন্ডন বুলিয়ন মার্কেট অ্যাসোসিয়েশনও রাশিয়া থেকে সোনার বার আমদানি পুরোপুরি বন্ধ করে৷ ২০২২ সালের আগস্টের মধ্যে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, সুইজারল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা এবং জাপানও রাশিয়ার সঙ্গে সব ধরনের বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিন্ন করার ঘোষণা দেয়৷
নিষেধাজ্ঞা শুরুর পরপরই টিকে থাকার কৌশল ঠিক করে নেয় রাশিয়া৷ পুতিন আক্রমণ থামাবেন না, তাই নিষেধাজ্ঞা থাকবেই৷ এ অবস্থায় যেসব দেশ নিষেধাজ্ঞা দেয়নি তাদের সঙ্গে আগের চেয়ে বেশি হারে সোনা রপ্তানির চেষ্টা শুরু করেন রুশ উৎপাদনকারীরা৷ ক্রেতাদের প্রকৃত বাজারমূল্যের চেয়ে ১% কমে ক্রয়ের সুযোগ দেন তারা৷
রাশিয়ার এ কৌশলকে অকার্যকর করার চেষ্টা হয়েছে অনেক, কিন্তু তাতে কাজ হয়নি৷ যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি হুমকি দিয়েছিল তুরস্ক আর সংযুক্ত আরব আমিরাতকে৷ ওয়াশিংটন বলেছিল, যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে এমন কোনো দেশ বা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক টিকিয়ে রাখলে দেশ দুটি জি-৭ অঞ্চলের বাজারে প্রবেশাধিকার হারাবে৷
অর্গ্যানাইজেশন ফর ইকোনমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট-এর স্বর্ণ বিষয়ক বিশেষজ্ঞ লুইস ম্যারেচাল মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রের তখন বড় দুর্ভাবনা ছিল, রাশিয়া থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাত, চীন এবং তুরস্কে যাওয়া সোনা গলিয়ে নতুন চেহারায় বাইডেনের দেশেও পাঠানো হতে পারে!
তবে সংযুক্ত আরব আমিরাতের গোল্ড বুলিয়ন কমিটি জানিয়েছে, তারা সবসময় এক রত্তি অবৈধ সোনাও যেন আমদানি বা রপ্তানি না হয় সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখে৷ এক বিবৃতিতে তারা জানায়, ‘ইউএই খোলামেলাভাবে এবং সৎভাবে জাতিসংঘের ঘোষণা করা নিয়ম মেনে আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে ব্যবসার এ ধারা অব্যাহত রাখবে৷’ সূত্র: ডিডাব্লিউ