রাশিয়ার সীমান্তবর্তী অঞ্চল বেলগোরোদে ভয়াবহ ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইউক্রেন। শনিবার (৩০ ডিসেম্বর) চালানো এই হামলায় নিহতদের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২১ জনে। এর আগে হামলার পর প্রাথমিকভাবে শিশুসহ ১০ জনের নিহত হওয়ার কথা জানানো হয়েছিল।
প্রাণঘাতী এই হামলায় আহত হয়েছেন আরও শতাধিক মানুষ। রোববার (৩১ ডিসেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাশিয়ার প্রাদেশিক রাজধানী বেলগোরোদের কেন্দ্রে ইউক্রেনের হামলায় তিন শিশুসহ অন্তত ২১ জন নিহত এবং আরও ১১১ জন আহত হয়েছেন বলে রুশ জরুরি মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।
গভর্নর ব্যাচেস্লাভ গ্ল্যাডকভ শনিবার বলেছেন, ইউক্রেনের সীমান্ত থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার (১৯ মাইল) দূরে অবস্থিত বেলগোরোদে শনিবার একটি আবাসিক এলাকায় এই হামলা চালানো হয়। টেলিগ্রামে দেওয়া পোস্টে তিনি সাইরেন বাজানোর সাথে সাথে সমস্ত বাসিন্দাকে বিমান হামলার আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করেন।
আল জাজিরা বলছে, বেলগোরোদ অঞ্চলটি ইউক্রেনের লুহানস্ক, সুমি এবং খারকিভ অঞ্চলের সীমান্তবর্তী। ইউক্রেনের এসব অঞ্চলের কয়েকটিতে গত শুক্রবার রাশিয়া ভয়াবহ হামলা চালায়। ওই হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪১ জনে। এছাড়া একটি মাতৃত্বকালীন হাসপাতাল, অ্যাপার্টমেন্ট ব্লক এবং বেশ কিছু স্কুলও ওই হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
মূলত বেলগোরোদ রাশিয়ার রাজধানী মস্কো থেকে প্রায় ৬০০ কিলোমিটার (৩৭৩ মাইল) দূরে অবস্থিত এবং ইউক্রেনের দিকে আক্রমণ চালানোর ক্ষেত্রে রুশ বাহিনীর জন্য এই শহরটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘাঁটি হিসেবে কাজ করছে।
রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে ইউক্রেনের এই হামলার প্রতিশোধ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। রুশ এই মন্ত্রণালয় বলেছে, তাদের বিমান বিধ্বংসী ইউনিট শুক্রবার বেলগোরোদ অঞ্চলে ১৩টি ইউক্রেনীয় রকেট ধ্বংস করেছে।
রাশিয়ার বাহিনী সারা দেশে ৩২টি ইউক্রেনীয় ড্রোন গুলি করে ভূপাতিত করেছে বলে মস্কোর কর্মকর্তারা শনিবার জানান। মস্কো, ব্রায়ানস্ক, ওরিওল এবং কুরস্ক অঞ্চলের আকাশে ড্রোন দেখা গেছে বলেও মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে। আকাশ প্রতিরক্ষার মাধ্যমে সকল ড্রোনই ধ্বংস করা হয়েছে বলেও দাবি করেছে মন্ত্রণালয়।
এদিকে রাশিয়া শনিবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের (ইউএনএসসি) বৈঠকে প্রাণঘাতী এই হামলার বিষয়ে আলোচনার জন্য অনুরোধ করেছে। জাতিসংঘে নিযুক্ত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত ভ্যাসিলি নেবেনজিয়া বলেছেন, এটি বেসামরিক শহরে কিয়েভ সরকারের সন্ত্রাসী হামলা।
তিনি দাবি করেছেন, ক্রীড়া কেন্দ্র, বরফের রিঙ্ক এবং একটি বিশ্ববিদ্যালয়কে লক্ষ্য করে ইউক্রেন এই হামলা চালিয়েছে কিয়েভ। তার ভাষায়, ‘এটি বেসামরিক লক্ষ্যবস্তুর বিরুদ্ধে ইচ্ছাকৃত, নির্বিচারে হামলা।’
তবে ইউক্রেন এবং তার মিত্ররা তার কথার দ্রুত পাল্টা জবাব দিয়ে বলেছে, রাশিয়া এই যুদ্ধ শুরু করেছে। জাতিসংঘে নিযুক্ত ইউক্রেনের রাষ্ট্রদূত সের্হি ডভোর্নিক বলেছেন, ‘যতদিন এই যুদ্ধ ক্রেমলিনের স্বৈরশাসক চালিয়ে যাবে, ততদিন মৃত্যু ও দুর্ভোগের সংখ্যা বাড়তেই থাকবে।’
যুক্তরাজ্যের দূত থমাস ফিপস বলেছেন, হামলায় বেসামরিক হতাহতের ঘটনায় যুক্তরাজ্য ‘গভীরভাবে’ দুঃখিত। তবে তার দাবি, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন যুদ্ধ শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।
তিনি আরও বলেন, ‘ইউক্রেনে কয়েক হাজার রুশ সৈন্য রয়েছে। রাশিয়ায় ইউক্রেনের একজন সৈন্যও নেই। রাশিয়া যদি এই যুদ্ধে রাশিয়ানদের মৃত্যুর জন্য কাউকে দায়ী করতে চায় তবে তা প্রেসিডেন্ট পুতিনের নামের মাধ্যমে শুরু করা উচিত।’