নভেম্বর ১৫, ২০২৪

সরকার ভোগ্যপণ্যের মূল্য স্বাভাবিক রাখতে সব কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে বলে সংসদকে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, সরকারি উদ্যোগের প্রভাবে শিগগিরই মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে বলে আশা করা যাচ্ছে। বুধবার সংসদের বৈঠকে প্রশ্নোত্তরে তিনি এ কথা বলেন। এর আগে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের বৈঠক শুরু হলে প্রশ্নোত্তর টেবিলে উপস্থাপিত হয়।

জাতীয় পার্টির মহাসচিব ও বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ মুজিবুল হক তার প্রশ্নে জানতে চান, সরকারের সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ অর্থনৈতিক দুর্বলতা কাটিয়ে ওঠা। একদিকে আমদানি নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে, অন্যদিকে গার্মেন্টসের রপ্তানি কমে আসছে। এ ছাড়াও বৈদেশিক মুদ্রার অপ্রতুলতা, ডলারের মূল্য বৃদ্ধি, মূল্যস্ফীতি এবং পর্যাপ্ত গ্যাসের অভাবে অনেক কল-কারখানার উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। এছাড়াও ঋণখেলাপি ও মন্দ ঋণের কারণে অনেকগুলো ব্যাংকে তারল্য সংকট দেখা দিয়েছে, বাজারে নিত্যপণ্যের ওপর কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই, অবৈধভাবে বিদেশে টাকা পাচার হচ্ছে। এসব কারণে অর্থনীতি সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এই সংকট কাটাতে কী পদক্ষেপ নেওয়ার চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে?

জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাত ও যুদ্ধকেন্দ্রিক নিষেধাজ্ঞার ফলে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে যে বিরূপ প্রভাব পড়েছে তার কারণে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক বিভিন্ন সংকট অনুভূত হচ্ছে। এর উল্লেখযোগ্য প্রভাব পড়েছে মূল্যস্ফীতি, ভর্তুকি ব্যয়, লেনদেনের ভারসাম্য, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এবং মুদ্রা বিনিময় হারের ওপর। তবে মূল্যস্ফীতি, নিত্যপণ্যের বাজার, আমদানি পণ্যের আমদানি নিরবচ্ছিন্ন রাখা, গার্মেন্টসের রপ্তানি, বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবস্থাপনা, ব্যাংক তারল্য, টাকা পাচার রোধ, গ্যাস সরবরাহ, টাকার বিপরীতে মার্কিন ডলারের মূল্য বৃদ্ধি নিয়ে সরকার অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করে চলেছে।

তিনি বলেন, সামষ্টিক অর্থনীতিতে নানা চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও বাংলাদেশ এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে একটি দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশ হিসেবে অবস্থান বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর তার জবাবে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকারের নেওয়া নানা পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন।

শেখ হাসিনা বলেন, দেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থ উদ্ধারের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় তথ্য, সাক্ষ্য-প্রমাণ ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় সহায়তা নিতে ১০টি দেশের সঙ্গে আইনগত সহায়তা চুক্তির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নসনহ গুরুত্বপূর্ণ অর্থনীতিগুলোতে ২০২৪ সালে মূল্যস্ফীতি উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমে আসবে বলে পূর্বাভাস রয়েছে। এমতাবস্থায় বিশ্ববাজারে জ্বালানি, খাদ্যপণ্য ও সারের মূল্য কমে আসা, দেশে জ্বালানি তেলের মূল্য সমন্বয় এবং খাদ্য সরবরাহ পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার জন্য সরকারি উদ্যোগের প্রভাবে শিগগিরই মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে বলে আশা করা যায়।

চট্টগ্রাম-১১ আসনের সংসদ সদস্য এম আবদুল লতিফের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের আওতায় গত ১৫ বছরে ৩৫ লাখ ৮ হাজার পরিবারকে স্বাবলম্বী করেছি। ১৯৯৭ সাল থেকে এ পর্যন্ত গৃহ নির্মাণের মাধ্যমে অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাসহ ৮ লাখ ৫২ হাজার ভূমিহীন, গৃহহীন পরিবারের ৪২ লাখ ৩৮ হাজার মানুষকে পুনর্বাসিত করা হয়েছে। মানবিক ও জনবান্ধব এ উদ্যোগ ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে।

ঢাকা-১৯ আসনের সংসদ সদস্য মুহম্মদ সাইফুল ইসলামের প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্ববাজারের কয়েকটি পণ্য যেমন জ্বালানি তেল, ভোজ্যতেল, গম, সারসহ বিভিন্ন খাদ্যপণ্য, ভোগ্যপণ্য ও শিল্পের কাঁচামালের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় আমাদের দেশে আমদানিজনিত মূল্যস্ফীতির ওপর চাপ অনুভূত হচ্ছে। সরকার বর্তমানে ভোগ্যপণ্যের মূল্য স্বাভাবিক রাখতে সকল প্রকার কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। উদ্যোগগুলোর কার্যকর প্রভাব অল্প সময়ের মধ্যেই পাওয়া যাবে বলে আশা করছি।

তিনি বলেন, জনসাধারণের জীবনযাত্রাকে সহজ করার জন্য সরকারের প্রচেষ্টা ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে এবং এর ফলে চলমান সাময়িক সংকট কেটে জনমনে স্বস্তি ফিরে আসবে।

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন...