ডিসেম্বর ২৮, ২০২৪

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কর্তৃক ভারতে ৩০০০ টন ইলিশ রপ্তানির অনুমতির বিরুদ্ধে দায়ের করা রিট খারিজ করে দিয়েছেন হাইকোর্ট।

সোমবার (২৬ নভেম্বর) বিচারপতি ফাহমিদা কাদের ও বিচারপতি মুবিনা আসাফের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মো. মাহমুদুল হাসান। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল একরামুল কবির।

এর আগে গত ২৫ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কর্তৃক ভারতে ৩০০০ টন ইলিশ রপ্তানির অনুমতির বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. মাহমুদুল হাসান এ রিট দায়ের করেন। রিট পিটিশনে ভারতে ৩০০০ টন ইলিশ রপ্তানির অনুমতি বাতিলসহ বাংলাদেশের পদ্মা, মেঘনা ও নদীর ইলিশ মাছ রপ্তানির বিরুদ্ধে স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা চাওয়া হয়।

রিট পিটিশনে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান ও আমদানি-রপ্তানির কার্যালয়ের প্রধান নিয়ন্ত্রককে বিবাদী করা হয়েছে।

রিটে বলা হয়েছে, ইলিশ মাছ একটি সামুদ্রিক মাছ। এটি মূলত বঙ্গোপসাগরের মাছ। এই বঙ্গোপসাগরের সঙ্গে বাংলাদেশ, ভারত, মিয়ানমার সংযুক্ত। বাংলাদেশের চেয়ে ভারত ও মিয়ানমারের সমুদ্রসীমা অনেক বেশি ও বিস্তৃত। এই ভারত ও মিয়ানমারের সমুদ্রসীমায় প্রচুর ইলিশ মাছ উৎপাদন হয়। এছাড়া ভারতের বিভিন্ন নদীতে ইলিশ মাছ পাওয়া যায়। মূলত বাংলাদেশ থেকে ভারতের ইলিশ মাছ আমদানির কোনো প্রয়োজন নেই। ভারত মূলত বাংলাদেশের পদ্মা নদীর ইলিশ আমদানি করে থাকে। এই ইলিশ মাছ সাগরের মাছ হলেও ডিম পাড়ার জন্য যখন এই মাছ পদ্মা নদীতে আসে তখন এই ইলিশ মাছ পদ্মা নদীর বিভিন্ন প্রাকৃতিক খাবার খেয়ে পরিপুষ্ট হয় এবং অত্যন্ত সুস্বাদু হয়ে উঠে। মূলত পদ্মা নদীর ইলিশ মাছই স্বাদে ও গন্ধে উৎকৃষ্ট। এই পদ্মা নদীর ইলিশ মাছ যখন রান্না করা হয় তখন এর সুঘ্রাণ চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে।

রিট পিটিশনে আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে যত ইলিশ ধরা পরে তার মাত্র ১০ (দশ শতাংশ) ইলিশ মাছ পদ্মা নদীতে পাওয়া যায়। অর্থাৎ পদ্মা নদীতে অত্যন্ত সীমিত পরিমাণ ইলিশ মাছ পাওয়া যায়। পদ্মা নদীতে যে পরিমাণ ইলিশ পাওয়া যায় তা বাংলাদেশের জনগণের চাহিদা পূরণে একেবারে অপ্রতুল। ভারত মূলত বাংলাদেশের পদ্মা নদীর ইলিশ আমদানি করে থাকে। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন গণমাধ্যমে ভারতের ‘ফিস ইম্পোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের’ নেতাদের বক্তব্য প্রকাশিত হয়েছে যেখানে তারা স্বীকার করেছেন যে, তারা বাংলাদেশ থেকে পদ্মার ইলিশ আমদানি করে থাকেন। প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশের পদ্মা নদীর সব মাছ ভারতে রপ্তানি হয় এবং বিপুল পরিমাণ ইলিশ মাছ ভারতে চোরাচালান হয়। বাংলাদেশে ভারতীয় এজেন্ট ও রপ্তানিকারকরা সারাবছর পদ্মা নদীর মাছ সংগ্রহ করে ফ্রিজিং করে রাখেন এবং পরে সুযোগ অনুযায়ী ভারতে রপ্তানি ও পাচার করে থাকেন। এর ফলে বাংলাদেশের জনগণ বাজারে গিয়ে পদ্মার ইলিশ পায় না এবং সামান্য পরিমাণ পেলেও তার দাম অত্যন্ত বেশি থাকে যা সাধারণ জনগণের পক্ষে কিনে খাওয়া সম্ভব নয়।

রিট পিটিশনে আরো বলা হয়েছে, ভারতে রপ্তানি ও চোরাচালানের জন্য ব্যবসায়ীরা সারা বছর বিপুল পরিমাণ ইলিশ মাছ ফ্রিজিং করে রাখেন। ফলে বাজারে ইলিশের দাম সবসময় বেশি থাকে এবং সাধারণ জনগণ এই ইলিশ মাছ কিনে খেতে পারে না। এছাড়া বিভিন্ন গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ইলিশ রপ্তানির ঘোষণার ফলে, বাংলাদেশে ইলিশ মাছের দাম ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, যার ফলে সাধারণ মানুষের পক্ষে ইলিশ মাছ কিনে খাওয়া সম্ভব হচ্ছে না।

বাংলাদেশের রপ্তানি নীতি ২০২১-২৪ অনুযায়ী, ইলিশ মাছ মুক্তভাবে রপ্তানিযোগ্য কোনো পণ্য নয়। এই মাছ রপ্তানির করতে চাইলে যথাযথ শর্ত পূরণ করতে হবে। এক্ষেত্রে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করেনি। এই ইলিশ মাছ হলো মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের এখতিয়ারাধীন বিষয়। এক্ষেত্রে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সুস্পষ্ট অনুমোদন ছাড়া বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এককভাবে এই ইলিশ মাছ রপ্তানির অনুমোদন দিতে পারে না । এটা এখতিয়ার বহির্ভূত কাজ। এক্ষেত্রে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ও সচিব বাংলাদেশের জনগণের স্বার্থবিরোধী কাজ করেছেন এবং বাংলাদেশের সংবিধানের ২১(২) অনুচ্ছেদ লঙ্ঘন করেছেন।

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন...