নভেম্বর ১৫, ২০২৪

পুঁজিবাজারের ট্রেকহোল্ডার বা ব্রোকারেজ হাউজগুলোকে তাদের ব্যাকঅফিস সফটওয়্যারে ধারণকৃত শেয়ারের অবস্থান জানাতে নির্দেশ দিয়েছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। প্রতি প্রান্তিক শেষ হওয়ার ১০ কার্যদিবসের মধ্যে ব্রেকারেজ হাউসগুলোকে এ সংক্রান্ত তথ্য নির্দিষ্ট নিয়ম বা ফরম্যাটে স্টক এক্সচেঞ্জের কাছে জমা দিতে বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে ব্রোকরেজ হাউজের ডিপজেটরিতে থাকা শেয়ারধারণের তথ্য জমা দিতে বলেছে ডিএসই।

সম্প্রতি সকল ট্রেকহোল্ডার বা ব্রোকারেজ হাউজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বা প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে এ সংক্রান্ত চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেছে।

এ বিষয়ে ব্রোকরেজ হাউজগুলোকে ২০২১ সালের ১ এপ্রিল ডিএসইর দেওয়া চিঠি এবং সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ রুলস, ২০২০ এর বিধি ৭ এবং পূর্বের বিধি ৭(২) অবহিত করেছে।

সেই সঙ্গে চলতি বছরের ৩০ জুন শেষ হওয়া ত্রৈমাসিক ব্রোকারেজ হাউজগুলোর ধারণকৃত শেয়ারের তথ্য জমা দেওয়ার বিষয়ে জানিয়ে ডিএসইর চিঠিতে বলা হয়েছে, সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ রুলস অনুযায়ী, প্রত্যেক স্টক ব্রোকার সময়ে সময়ে এক্সচেঞ্জের নির্ধারিত একটি ফর্মে তার ব্যাকঅফিসে ধারণ করা সিকিউরিটিজের সবশেষ অবস্থা এবং ডিপোজিটরিতে থাকা সিকিউরিটিজ ধারণের তথ্যসহ এ সম্পর্কিত প্রয়োজনীয় নথি স্টক এক্সচেঞ্জে জমা দিতে হবে। সেক্ষেত্রে ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে প্রতি প্রান্তিক শেষ হওয়ার ১০ কার্যদিবসের মধ্যে এ তথ্য জমা দিতে হবে।

তাই এ বিষয়ে ব্রোকারেজ হাউজ ও ডিপজেটরির ধারণকৃত শেয়ারের তথ্য একটি প্রতিবেদন আকারে জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হলো। সেক্ষেত্রে চলতি বছরের ৩০ জুন শেষ হওয়া প্রান্তিকে ব্যাকঅফিসে থাকা সিকিউরিটিজের সঙ্গে ডিপোজিটরিতে থাকা সিকিউরিটিজের বর্তমান অবস্থার তথ্য স্টক এক্সচেঞ্জের দেওয়া নির্ধারিত ফরম্যাটে ই-মেইলের মাধ্যমে ১৩ জুলাইয়ের মধ্যে জমা দেওয়ার জন্য নির্দেশ প্রদান করা হলো। সেই সঙ্গে পরবর্তী প্রতি ত্রৈমাসিক শেষ হওয়ার পর একইভাবে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তথ্য জমা দিতে বলা হয়েছে।

গত কয়েক বছরে তামহা সিকিউরিটিজ, ক্রেস্ট সিকিউরিটিজ ও বানকো সিকিউরিটিজসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগকারীদের অর্থ আত্মসাৎ, অনিয়ম এবং জালিয়াতির ঘটনা ঘটে। এরপর ডিএসই ও সিএসই‘র সকল ব্রোকারেজ হাউজ পরিদর্শন ও তদন্তের নির্দেশনা দেয় বিএসইসি। এরই ধারাবাহিকতায় তদন্ত সাপেক্ষে ১০৮টি প্রতিষ্ঠানের সমন্বিত গ্রাহক হিসাবে বড় অঙ্কের ঘাটতি পাওয়া যায়। এর পরিমাণ দাঁড়ায় ৫৮৫ কোটি ২১ লাখ ৭০ হাজার টাকা। পরবর্তীতে ব্রোকারেজ হাউজগুলোকে এ বিষয়ে চিঠি দিয়ে দ্রুত ঘাটতি সমন্বয় করতে বলা হয়। এর পর থেকে ১০২টি প্রতিষ্ঠান ৫৩৫ কোটি ৯৩ লাখ ৫৪ হাজার টাকা সমন্বয় করেছে। বাকি ৬টি ব্রোকারেজ হাউজ ৪৯ কোটি ২৮ লাখ ১৫ হাজার টাকা ঘাটতি এখনো সমন্বয় করেনি।

এর মধ্যে সিনহা সিকিউরিটিজের ঘাটতি আছে ৯ কোটি ৮২ লাখ ২৪ হাজার টাকা, ফারইস্ট স্টকস অ্যান্ড বন্ডের ঘাটতি আছে ১ কোটি ২৪ লাখ ১৮ হাজার টাকা, ৩৩ কোটি ৪ লাখ ৬৫ হাজার টাকা ঘাটতি আছে পিএফআই সিকিউরিটিজের, এশিয়া সিকিউরিটিজের ৬২ লাখ ৪৭ হাজার টাকা ঘাটতি রয়েছে। এছাড়া, লতিফ সিকিউরিটিজের ৩২ লাখ ৫৩ হাজার টাকা এবং মডার্ন সিকিউরিটিজের ৫ কোটি ২৭ লাখ ২৯ হাজার টাকা ঘাটতি আছে বলে জানা গেছে।

প্রসঙ্গত, বিএসইসি গত বছর ২২ মার্চ সমন্বিত গ্রাহক হিসাবে ঘাটতি থাকা প্রতিষ্ঠানগুলোর বিষয়ে কয়েকটি নির্দেশনা দিয়েছে। এই নির্দেশনাগুলোর মধ্যে আছে—স্টক এক্সচেঞ্জকে লিমিটি সুবিধা স্থগিত করা হবে, যোগ্য বিনিয়োগকারী হিসাবে আইপিও কোটা সুবিধা বাতিল হবে, স্টক এক্সচেঞ্জের মালিকানার বিপরীতে পাওয়া লভ্যাংশ স্থগিত থাকবে এবং ডিপোজিটরি অংশগ্রহণকারীর নিবন্ধন এবং নতুন শাখা ও বুথ খোলা বন্ধ রাখা হবে। তার আগে ২১ মার্চ বিনিয়োগকারীদের আমানত অর্থাৎ শেয়ার ও অর্থ সরিয়ে নেওয়া তামহা সিকিউরিটিজ, ক্রেস্ট সিকিউরিটিজ ও বানকো সিকিউরিটিজসহ ২৫টি ব্রোকারেজ হাউজের নিবন্ধন সনদ নবায়ন বন্ধসহ নানা সুযোগ-সুবিধা স্থগিত করা হয়।

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন...