চলতি অর্থবছরের গেল ৬ মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) বেনাপোল কাস্টমস হাউজে লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে রাজস্ব ঘাটতি হয়েছে ৩২৭ কোটি ৯২ লাখ টাকা। এসময় আমদানি কমেছে গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১ লাখ ৬৫ হাজার ৩৯০ মেট্রিক টন পণ্য। গত ১৩ বছর ধরে বেনাপোল কাস্টমসে রাজস্ব আদায়ে বড় ধরনের ঘাটতি হয়ে আসছে।
কাস্টমস সূত্রে জানা যায়, ভারত থেকে যেসব পণ্য আমদানি হয় তার উপর প্রতিমাসে নির্দিষ্ট পরিমাণে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের গেল ৬ মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) বেনাপোল কাস্টমসে এ লক্ষ্যমাত্রার পরিমাণ ছিল ৩ হাজার ১০৫ কোটি টাকা। কিন্তু আদায় হয়েছে ২ হাজার ৭৭৭ কোটি ৯ লাখ টাকা। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩২৭ কোটি ৯১ লাখ টাকা কম আদায় হয়েছে। এসময় ভারত থেকে পণ্য আমদানি হয়েছে ৮ লাখ ২৪ হাজার ১২৩ মেট্রিক টন বিভিন্ন ধরনের পণ্য। সূত্র একুশেটিভি।
এর আগে ২০২২-২৩ অর্থ বছরের একই সময়ে (জুলাই-ডিসেম্বর) রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল দুই হাজার ৯৩৯ কোটি টাকা। সে সময় আদায় হয়েছিল দুই হাজার ৬৩২ কোটি এক লাখ টাকা। এখানে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ঘাটতি ছিল ৩০৬ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। এসময় আমদানির পরিমান ছিল ৯ লাখ ৮৯ হাজার ৫১৩ মেট্রিক টন পণ্য।
২০২২-২৩ অর্থ বছরের ৬ মাসের তুলনায় ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে এখানে আমদানি কমেছে এক লাখ ৬৫ হাজার ৩৯০ মেট্রিক টন পণ্য এবং রাজস্ব ঘাটতি ২১ কোটি ৯১ লাখ টাকা।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, ডলারের দামের ঊর্ধ্বগতিতে কোনভাবে নিয়ন্ত্রণে না আসায় ও কাস্টমস কর্তৃপক্ষ প্রতিটি পণ্যের শুল্কায়ন মূল্য বাড়িয়ে দেওয়ায়, ভুল এইচএস কোড হলে শতকরা ২০০ ভাগ জরিমানা আদায়- এসব কারণে লোকসানের শঙ্কায় আমদানি বন্ধ রেখেছে আমদানিকারকেরা। দ্রুত সংকট না কাটলে বছর শেষে আমদানির পরিমাণ আরও কমে বড় ধরনের রাজস্ব ঘাটতির কবলে পড়তে হতে পারে এই বন্দর।
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট এ্যাসোসিয়েশনের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক সুলতান মাহামুদ বিপুল জানান, বিএনপি, জামায়াতের হরতাল, অবরোধ আর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের খেসারত দিতে হচ্ছে বাংলাদেশকেও। খাদ্য দ্রব্যসহ শিল্প, কলকারখানার কাঁচামাল ও মেশিনারিজ দ্রব্য আমদানি করতে চাহিদা ডলারের মেটাতে হয় বাংলাদেশকে। কিন্তু বৈশ্বিক মন্দায় ডলারের দাম ঊর্ধ্বগতি আর সংকটের কারণ দেখিয়ে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো কয়েক মাস ধরে এলসির সংখ্যা কমিয়েছেন। এতে আমদানি কমায় দেখা গেছে রাজস্ব ঘাটতি।
সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট এ্যাসোসিয়েশনের কাস্টমস বিষয়ক সম্পাদক আব্দুল লতিফ জানান, বেনাপোল বন্দর দিয়ে আমদানি কমেছে ৩০ শতাংশ। যদি এ সংকট কাটাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ না করা হলে বিপুল পরিমাণে বাণিজ্য ও রাজস্ব ঘাটতির মুখে পড়তে হতে পারে এ বন্দর।
বেনাপোল আমদানি-রফতানি সমিতির সহসভাপতি আমিনুল হক জানান, বৈশ্বিক মন্দায় ডলার সংকটের কারণে এলসি খুলতে পারছিনা। সরকারের নির্ধারিত ডলার রেট থাকলেও বর্তমানে ১০০ ডলারের বিপরীতে ব্যাংক ১২৫ থেকে ১২৮ টাকা পর্যন্ত কাটছে। এর উপরে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ প্রতিটি পণ্যের উপর মূল্য বাড়িয়ে দিচ্ছে। এইচএস কোড ভুলের কারণে ২০০ ভাগ জরিমানা আদায় করছে। এর বিরূপ প্রভাব পড়েছে।