ডিসেম্বর ২৬, ২০২৪

আজ বিশ্ব মেরিটাইম দিবস। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও দিবসটি পালিত হচ্ছে। এ উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। তারা ‘এমএআরপিওএল অ্যাট ৫০-আওয়ার কমিটমেন্ট গো অন’– এই প্রতিপাদ্য নিয়ে পালিত দিবসটির সব কর্মসূচির সাফল্য কামনা করেন।

এমএআরপিওএল মানে ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন ফর প্রিভেনশন অব পোল্যুশন ফ্রম শিপ, যা ১৯৭৩ সালে ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম অর্গানাইজেশন (আইএমও) দ্বারা গৃহীত ও ১৯৭৮ সালে কার্যকর হয়।

রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী তাদের বাণীতে প্রতিপাদ্যের সঙ্গে দিবসটি উদযাপনের জন্য জাহাজ শিল্প সংশ্লিষ্ট সম্প্রদায়, কর্তৃপক্ষ ও সংস্থাসহ সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।

রাষ্ট্রপতি তার বাণীতে বিশ্বের অন্যান্য আইএমও সদস্য দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশ ‘বিশ্ব মেরিটাইম দিবস ২০২৩’ উদযাপন করছে জেনে সন্তোষ প্রকাশ করেন।

সামুদ্রিক শিল্প আন্তর্জাতিক ব্যবসা-বাণিজ্যের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে উল্লেখ করে সাহাবুদ্দিন বলেন, বিশ্বব্যাপী খাদ্য, চিকিৎসা সামগ্রী, জ্বালানি, কাঁচামাল ও উৎপাদিত পণ্যসহ মোট বাণিজ্যের ৯০ শতাংশেরও বেশি পরিবহনের জন্য শিপিংয়ের ওপর নির্ভর করে।

রাষ্ট্রপতি বলেন, এই ব্যাপক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা বা দুর্ঘটনাজনিত কারণে জাহাজের মাধ্যমে সামুদ্রিক পরিবেশ দূষণের ঝুঁকি বাড়ায়।

তিনি আরও বলেন, প্রতিষ্ঠার পর থেকে এমএআরপিওএল (জাহাজ থেকে দূষণ প্রতিরোধের জন্য ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন) পরিবেশগত দায়িত্বের আলোকবর্তিকা হিসেবে কাজ করেছে। পাশাপাশি এটি সামুদ্রিক দেশগুলোকে পরিচ্ছন্ন সমুদ্র ও আরও টেকসই ভবিষ্যতের দিকে পরিচালিত করছে।

মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, এমএআরপিওএলের সুবর্ণজয়ন্তীতে ‘এমএআরপিওএল অ্যাট ৫০-আওয়ার কমিটমেন্ট গো অন’ থিমটি সময়োপযোগী, যা অবশেষে সামুদ্রিক দূষণ রোধ ও সামুদ্রিক পরিবেশ সংরক্ষণে জাতির নিবেদনেরই সারসংক্ষেপ।

তিনি আরও বলেন, ‘একটি সমৃদ্ধ সামুদ্রিক ঐতিহ্যে ঋদ্ধ বাংলাদেশ একটি দূষণমুক্ত সামুদ্রিক পরিবেশ ও আমাদের জনগণের কল্যাণের মধ্যে সংযোগকে দৃঢ়ভাবে স্বীকৃতি দেয়।’

রাষ্ট্রপতি বলেন, বাংলাদেশ গর্বিতভাবে সেসব দেশের মধ্যে দাঁড়িয়ে আছে, যারা এমএআরপিওএল’র নীতিগুলোকে গ্রহণ করেছে এবং বৃহত্তর মঙ্গলের জন্য বাস্তবসম্মতভাবে তাদের বাস্তবায়ন করেছে।

মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, ‘বছরের পর বছর ধরে আমরা কনভেনশন অনুযায়ী নিয়মনীতিগুলো মেনে চলার মাধ্যমে পরিষ্কার বাতাস, পরিষ্কার পানি ও সামুদ্রিক আবর্জনা হ্রাস করার দিকে অগ্রসর হয়েছি।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ আরও টেকসই সামুদ্রিক ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার জন্য সামুদ্রিক দূষণ ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কাজ করছে।’

রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, সরকার সমুদ্র খাতের উন্নয়নের সুবিধার্থে বন্দরের সক্ষমতা ও অন্যান্য অবকাঠামো সম্প্রসারণ করছে।

মো. সাহাবুদ্দিন আশা প্রকাশ করেন, সব কর্তৃপক্ষ এবং স্টেকহোল্ডাররা নির্গমন হ্রাস, বর্জ্য হ্রাস ও পরিবেশবান্ধব সামুদ্রিক পরিবেশ সংরক্ষণের হাতিয়ার হিসেবে উদ্ভাবন এবং প্রযুক্তি গ্রহণ করবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বার্তায় বিশ্বের অন্যান্য আইএমও সদস্য দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশ ২৪ সেপ্টেম্বর ‘বিশ্ব মেরিটাইম দিবস ২০২৩’ উদযাপন করছে জেনে সন্তোষ প্রকাশ করেন।

তিনি বলেন, ‘এই উপলক্ষটি আমাদের জন্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ, আমরা সামুদ্রিক ক্ষেত্রটির সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে এগিয়ে যাচ্ছি।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সমুদ্রের সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে ‘দ্য টেরিটোরিয়াল ওয়াটারস অ্যান্ড মেরিটাইম জোনস অ্যাক্ট ১৯৭৪’ প্রণয়ন করেছিলেন।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকার পূর্ববর্তী এই আইনের একটি আধুনিক সংস্করণ হিসেবে ‘টেরিটোরিয়াল ওয়াটারস অ্যান্ড মেরিটাইম জোনস (সংশোধিত) আইন ২০২১’ গ্রহণ করেছে।

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সামুদ্রিক সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহারের মাধ্যমে অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন এবং আইন ও বিধি প্রণয়ন করেন।

শেখ হাসিনা বলেন, আমরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি প্রতিষ্ঠা করেছি।

প্রধানমন্ত্রী বিশ্বাস করেন, এ বছরের ‘মারপোল অ্যাট ৫০-আওয়ার কমিটমেন্ট গো অন’ এই প্রতিপাদ্যটি টেকসই উন্নয়নের জন্য সামুদ্রিক দূষণ থেকে সমুদ্রকে রক্ষা ও সংরক্ষণে রাষ্ট্রগুলোর অভিন্ন দায়িত্বে গভীরভাবে অনুপ্রাণিত।

তিনি বলেন, অর্ধশতাব্দী ধরে জাহাজ থেকে দূষণ প্রতিরোধের জন্য আন্তর্জাতিক কনভেনশন (এমএআরপিওএল) একটি পরিচ্ছন্ন, দূষণমুক্ত ও স্বাস্থ্যকর সামুদ্রিক পরিবেশের জন্য আশার আলোকবর্তিকা হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা এমএআরপিওএলের ৫০তম বার্ষিকী উদযাপন করার সময় জাহাজ থেকে দূষণ হ্রাস এবং বিশ্বব্যাপী টেকসই শিপিং অনুশীলনের প্রচারে অগ্রগতি স্বীকার করি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিস্তৃত উপকূলরেখা ও সমৃদ্ধ সামুদ্রিক ইতিহাসে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ আমাদের পরিবেশের ওপর সামুদ্রিক কার্যকলাপের গভীর প্রভাব বুঝতে পারে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন ধরে জাহাজ থেকে দূষণরোধ করতে এবং আমাদের সমুদ্রের নিরাপত্তা ও স্থায়িত্ব বাড়াতে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করছি।’

শেখ হাসিনা আরও বলেন, এমএআরপিওএলের নীতিগুলো সমুন্নত রাখার মাধ্যমে আমরা কেবল আমাদের জাতির মঙ্গলই নয়, বরং পরিবেশ সংরক্ষণের বৈশ্বিক অঙ্গনেও অবদান রাখি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই বিশ্ব মেরিটাইম দিবসে, আসুন আমরা নিজেদের এমএআরপিওএলের আদর্শের সঙ্গে পুনরায় অঙ্গীকার করি। আমাদের প্রতিশ্রুতি যেন স্থায়ী হয় এবং আমাদের সমুদ্রগুলো যেন আগামী প্রজন্মের জন্য জীবন, অনুপ্রেরণা এবং সমৃদ্ধির উৎস হয়ে থাকে তা নিশ্চিত করার জন্য আমরা একসঙ্গে কাজ করি।’

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন...