সংকট কাটাতে ধারাবাহিকভাবে রিজার্ভ থেকে ডলার ছাড়ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে ব্যাপক পতন শুরু হয়। সম্প্রতি এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) আমদানি বিল ১১৮ কোটি ডলার পরিশোধ করলে রিজার্ভ নেমে যায় ২৯ ডলারের ঘরে। তবে বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে বাজেটের ঋণ সহায়তার ৫০৭ মিলিয়ন ডলার যুক্ত হওয়ায় রিজার্ভ আবারও বেড়ে ৩০ বিলিয়ন ডলারের উপরে উঠেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক অর্থসূচককে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, বিশ্বব্যাংক থেকে ৫০৭ মিলিয়ন ডলার পেয়েছি। এটা রিজার্ভে যোগ হয়েছে। যার ফলে রিজার্ভ বেড়ে ৩০ দশমিক ৩৬ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন সংস্থা থেকে আমাদের ঋণ সহায়তা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। খুব শিগগিরই আমরা তাদের থেকে ঋণ সহায়তা পাবো।
এদিকে গত সোমবার (৮ মে) আকুর ১১৮ কোটি ডলার পরিশোধের পর রিজার্ভ কমে দাঁড়ায় ২ হাজার ৯৮৩ কোটি ডলার। এরপর আবার কিছু ঋণ ও অনুদানের অর্থ দেশে আসে। ফলে রিজার্ভ আবারো ৩০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যায়।
আকু হলো একটি আন্তঃদেশীয় লেনদেন নিষ্পত্তি ব্যবস্থা। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, ইরান, মালদ্বীপ, মিয়ানমার, নেপাল, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার মধ্যকার লেনদেনের দায় পরিশোধ করা হয়। ইরানের রাজধানী তেহরানে আকুর সদর দপ্তর। এ ব্যবস্থায় সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রতি দুই মাস অন্তর আমদানির অর্থ পরিশোধ করে। তবে এখন আকুর সদস্য পদ নেই শ্রীলঙ্কার। অর্থনৈতিক সংকটের কারণে দীর্ঘদিন ধরে আমদানি ব্যয় পরিশোধের বিভিন্ন শর্ত পূরণে ব্যর্থ হওয়ায় দেশটির আকু সদস্য পদ সাময়িক স্থগিত করা হয়েছে।
এর আগে করোনার সময়ে রিজার্ভ ব্যাপকহারে বেড়ে যায়। বিশ্বব্যাপী লকডাউন থাকায় পণ্য সরবরাহ ব্যাপকহারে বিঘ্নিত হয়। এতে দেশের আমদানিও কমে যায়। একইসঙ্গে বেড়ে যায় ব্যাংকিং চ্যানেলে বা বৈধ পথে রেমিট্যান্স আসার পরিমাণ।
এর ফলে ২০২১ সালের আগস্ট মাসে প্রথমবারের মতো রিজার্ভ বেড়ে ৪ হাজার ৮০০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যায়।
করোনার পরবর্তী সময়ে কিছুটা ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে দেশের অর্থনীতি। তবে গত বছরের শুরুতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হলে বিশ্বব্যাপী অস্থিরতা তৈরি হয়। জ্বালানিসহ খাদ্যপণ্যের দাম বেড়ে যায়। এর ফলে আমদানি খরচও বাড়ে। তবে সেই তুলনায় বাড়েনি রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয়। ধারাবাহিকভাবে দেশের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি বজায় রয়েছে। ডলার সংকট কোনোভাবেই কাটছে না। বাংলাদেশ ব্যাংককে প্রতিনিয়ত রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করছে।
এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে রিজার্ভ ৩ হাজার ৩৬ কোটি ডলার। তবে এই হিসাব মানতে নারাজ আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। সংস্থাটির মতে, বাংলাদেশ ব্যাংকের দেখানো রিজার্ভের ৬০০ কোটি ডলার ব্যবহারযোগ্য নয়। আইএমএফ গত মার্চে সর্বনিম্ন ২২ দশমিক ৯৫ বিলিয়ন ডলার নিট রিজার্ভ রাখার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিল, যা পূরণ করতে পারেনি বাংলাদেশ। আগামী জুনে নিট রিজার্ভ রাখার লক্ষ্য নির্ধারণ করে দিয়েছে আইএমএফ। যার পরিমাণ ২৪ দশমিক ৪৬ বিলিয়ন ডলার।