‘আজকে অনেক কথা ব্যাপকভাবে প্রচার হচ্ছে, তাতে আপনারা বিভ্রান্ত হতে পারেন। তাতে বিভ্রান্ত হওয়ার কিছু নেই। একটা কথা মনে রাখতে হবে, বাংলাদেশের জন্য দুর্ভাগ্য যে, বাংলাদেশ যখন অগ্রগতির দিকে এগিয়ে যায়, তখন সেটা সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য হয় না বলে জানিয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ।
আজ সোমবার ‘ডিফেন্স কোর্স ও আর্মড ফোর্সেস ওয়ার কোর্সে’-এর গ্রাজুয়েশন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।
শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘আমরা যে অগ্রগতি শুরু করেছিলাম- একটা যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে জাতির পিতা গড়ে তুলে প্রবৃদ্ধি ৯ ভাগের ওপরে অর্জন করতে সক্ষম হয়েছিলেন। এরপর আমাদের প্রবৃদ্ধি আর কখনো বৃদ্ধি পায়নি। এরপর আওয়ামী লীগ পরপর ৩ বার ক্ষমতায় আসার পর আমাদের প্রবৃদ্ধি ৮ ভাগ পর্যন্ত বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘দুর্ভাগ্যের বিষয়, কোভিড-১৯ সারা বিশ্বে অর্থনৈতিক মন্দার সৃষ্টি করেছে। এরপর মরার ওপর খাড়ার ঘাঁ হিসেবে এসেছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। যুদ্ধের পর সরকারেরা স্যাংশন ফর দ্য স্যাংশন দিয়েছে, যার ফলে আন্তর্জাতিকভাবে আজ মুদ্রাস্ফীতি বৃদ্ধি পেয়েছে। আন্তর্জাতিকভাবে ধনী দেশগুলোও আজ বিপর্যস্ত হয়ে হিমশিম খাচ্ছে। তারা বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সাশ্রয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছে। তাদের খাদ্যপণ্যের দাম বেড়ে যাচ্ছে, তাদের রিজার্ভ কমে যাচ্ছে। সেই অবস্থায় আমি বলতে পারি, বাংলাদেশ স্থিতিশীল রাখতে আমরা সক্ষম হয়েছি।’
‘নানা কথা বলে ভয়-ভীতি দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা একটা মহল করে যাচ্ছে। সেখানে আমি একটা কথা বলতে পারি, যখন আমি সরকার গঠন করেছিলাম ১৯৯৬ সালে। তখন আমি রিজার্ভ পেয়েছিলাম ২ পয়েন্ট ৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। আমরা তখন উদ্যোগ নিয়েছিলাম এটা বৃদ্ধি করতে। দ্বিতীয়বার যখন আমরা সরকার গঠন করি ২০০৯ সালে, তখন আমরা রিজার্ভ পেয়েছিলাম মাত্র ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। আমরা সেই ৫ বিলিয়নকে ৪৮ বিলিয়েন উত্তীর্ণ করতে সক্ষম হয়েছিলাম।’
‘তবে, তার কারণ ছিল, তখন যেহেতু করোনার কারণে সব জায়গায় যাতায়াত বন্ধ ছিল, বিদেশে গমন বন্ধ ছিল, আমদানি বন্ধ ছিল। অন্যান্য দেশগুলোতেও যখন এই ধরনের অবস্থা, সেই কারণে এটা হয়েছে’, বলেন শেখ হাসিনা।
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা কিন্তু রিজার্ভ নিয়ে থাকিনি, বিনামূল্যে ভ্যাকসিন দিয়েছি। ভ্যাকসিন কিন্তু যারা অর্থনৈতিকভাবে উন্নত দেশ তারাও কিন্তু বিনামূল্যে দেয়নি। কিন্তু আমরা আমাদের টাকা খরচ করে ভ্যাকসিন কিনেছি। যখন ভ্যাকসিন নিয়ে গবেষণা শুরু হয়েছে, তখনই ১২ শ কোটি টাকা দিয়ে ভ্যাকসিন বুকিং দিয়েছি। আমি জানি তারা যদি সফল না হতো আমাদের টাকাটা নষ্ট হতো। দেশের মানুষের কথা চিন্তা করে ঝুঁকি নিয়েছিলাম।’
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘যে গম আমরা ২০০ ডলারে কিনতে পারতাম আজকে সেটা ৫০০-৬০০ ডলারে কিনতে হচ্ছে। যে পরিবহন খরচ মাত্র ৮০০ ডলারা ছিল, তা এখন ৩৮ শ ডলারে আনতে হচ্ছে, কিন্তু আমরা এখানে কোনো কার্পণ্য করিনি। আমাদের ডলার খরচা করতে হয়েছে, রিজার্ভ খরচা করতে হয়েছে আমরা করেছি। তারপরও আমাদের আমদানি-রপ্তানি বৃদ্ধি পেয়েছে, বিনিয়োগ হচ্ছে। আমাদের ফসল উৎপাদন হচ্ছে। আমরা সার থেকে শুরু করে সবকিছু আমাদের কৃষকদের কাছে স্বল্পমূল্যে দিচ্ছি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সকলের কাছে আমার আহ্বান, যার যেখানে যতটুকু জায়গা আছে, যা পারেন কিছু উৎপাদন করেন। নিজের খাবারের জোগানটা নিজে করেন। বিশ্বব্যাপী যে মন্দাটা দেখা দিচ্ছে বিশেষ করে খাদ্য মন্দা, সেটা যেন আমাদের দেশে কখনো না হয়।’
‘আমি যখন সরকার গঠন করি মাত্র ৬২ হাজার কোটি টাকার বাজেট ছিল। আজকে আমরা এই করোনা এবং এই যুদ্ধকালীন সময়েও আপনারা দেখেছেন, ২০২২-২৩ অর্থবছরে যে বাজেট দিয়েছি সেটা ছিল ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকার বাজেট এবং উন্নয়ন বাজেটও দিচ্ছি। আজকে মেট্রোরেল থেকে কর্ণফুলি টানেল, বিদ্যুৎকেন্দ্র, স্যাটেলাইট-১ আমরা সব দিকেই কিন্তু এগিয়ে যাচ্ছি। সেনাবাহিনী, বিমান বাহিনী ও নৌবিাহিনীর আধুনিকায়ন করতে কাজ করে যাচ্ছি।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘সকলের কাছে আমার একটা অনুরোধ থাকবে, আমাদের কোনো রকম বিলাসিতা আমাদের চলবে না। কারণ, বিশ্ব অর্থনীতির ধাক্কাটা আমাদের ওপর এসে পড়বে এবং পড়তে যাচ্ছে। সেটা মাথায় রাখতে হবে। আমাদের দেশ আমাদের সম্পদ আমাদের রক্ষা করে চলতে হবে।’
যে কোনো বিপদে আমাদের সশস্ত্র বাহিনী সব সময় মানুষের পাশে দাঁড়ায় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজকে তারা যেমন দেশের মানুষের কাছে আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করেছে, তেমনি বিদেশের মিশনেও অত্যন্ত দক্ষতার সাথে ভূমিকা রেখে যাচ্ছে আমাদের সশস্ত্র বাহিনী, পুলিশ বাহিনী। বিশেষ করে মেয়েদের কথা বলব, জাতিসংঘে তারা ভূয়সী প্রশংসা পাচ্ছে- পুলিশ এবং আর্মির।’
পদ্মা সেতু নিয়ে আমাকে ও আমার পরিবারকে অনেক অপবাদ দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘প্রমাণিত হয়েছে, এখানে কোনো দুর্নীতি তো হয়ইনি- নিজের অর্থে পদ্মা সেতু করব, অনেকে বলেছে কখনো সম্ভব না। এমনকি অনেক দেশের সরকারপ্রধানের সঙ্গেও যখন আলোচনা করেছি তারা বলেছে, এটা সম্ভব না। অসম্ভবকে সম্ভব করা বাঙালির চরিত্র, এটা আমরা করতে পেরেছি।’