ছাত্র-জনতার অবিস্মরণীয় অভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা। এর মাধ্যমে টানা প্রায় ১৬ বছরের আওয়ামী লীগের নজিরবিহীন দুঃশাসন ও স্বেচ্ছাচারিতার অবসান ঘটে। ক্ষমতায় থাকাকালে বাছবিচার না করে একের পর এক বিদেশি ঋণ নিয়েছে আওয়ামী লীগ সরকার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের জুন শেষে দেশে বিদেশি ঋণের পরিমাণ ১০৩ দশমিক ৭৯ বিলিয়ন (১০ হাজার ৩৭৯ কোটি) ডলারে পৌঁছেছে। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ দাঁড়ায় (প্রতি ডলার ১২০ টাকা ধরে) ১২ লাখ ৪৫ হাজার ৪৭৮ কোটি টাকা।
২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে। ওই সময় অর্থাৎ ২০০৮-০৯ সাল শেষে সরকারের বিদেশি ঋণ ছিল ৫০ দশমিক ৩৬ বিলিয়ন ডলার। ১৫ বছর ৮ মাসের ব্যবধানে বিদেশি ঋণ বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। আর শুধু শেখ হাসিনা সরকারের আমলে বিদেশি ঋণ বেড়েছে ৫৩ দশমিক ৪২ বিলিয়ন ডলার।
সরকারি খাতের বিদেশি ঋণের মধ্যে সরকারের নিজস্ব, কেন্দ্রীয় ব্যাংক, রাষ্ট্রমালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংক ও সরকারি সংস্থার ঋণ রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০২৪ সালের জুন শেষে বাংলাদেশের বিদেশি ঋণের পরিমাণ ১০৩ দশমিক ৭৯ বিলিয়ন ডলার ঋণ। এর মধ্যে ৮৩.২১ বিলিয়ন (৯ লাখ ৯৮ হাজার ৫৮০ কোটি টাকা) সরকারের নেওয়া। বাকি ২০.৫৭ বিলিয়ন ডলার বেসরকারি খাতের দায়। বেশি হারে সুদ ও কঠিন শর্তে নেওয়া এসব ঋণ সরকারি সংস্থাগুলোর দেওয়া পণ্য ও সেবার মূল্য বাড়িয়ে দিচ্ছে। এতে চাপে পড়ছে মানুষ।
চলতি বছরের জুন শেষে বিদেশি ঋণের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ১০৪ বিলিয়ন বা ১০ হাজার ৩৭৯ কোটি ডলার। চলতি বছরের মার্চ মাস শেষে সরকার ও বেসরকারি খাতে বিদেশি ঋণের স্থিতি ছিল ৯৯ দশমিক ৩০ বিলিয়ন (৯ হাজার ৯৩ কোটি) ডলার। অর্থাৎ তিন মাসেই প্রায় ৪ দশমিক ৪৮ বিলিয়ন ডলার বিদেশি ঋণ নিয়েছে সরকার।
বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
বিশ্লেষকদের মতে, সাবেক সরকারের যথাযথ ঋণ ব্যবস্থাপনা না থাকায় দেশি উৎস থেকে বেশি পরিমাণে ঋণ নেওয়া হয়েছে। যদিও বৈদেশিক মুদ্রায় বিদেশি ঋণ নেওয়াকে সব সময় স্বাগত জানান অর্থনীতিবিদ ও বিশেষজ্ঞরা। গত ১৫ বছরে অনেক বিদেশি ঋণও নেওয়া হয়েছে। তবে এসব ঋণের বেশির ভাগই নেওয়া হয়েছে দর–কষাকষি ও বাছবিচারহীনভাবে; যা সরকারের দায়-দেনা পরিস্থিতিতে চাপ বাড়িয়েছে।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, করোনা মহামারির কারণে বিশ্বব্যাপী আর্থিক সংকট তৈরি হওয়ার পর মার্কিন সুদের হার বেড়ে যায়। এতে বিদেশি ঋণে সুদের হার বেড়ে যায়। পাশাপাশি দেশের টাকার বড় ধরনের অবমূল্যায়নের ফলে বিপাকে পড়ে বেসরকারি খাতের বিদেশি ঋণ নেওয়া ব্যবসায়ীরা। এজন্য বিদেশি ঋণ নেওয়ার চেয়ে পরিশোধে মনোযোগী হয় তারা। কিন্তু ডলারের দর স্থিতিশীল হওয়া ও দেশে ঋণে সুদের হার বাড়তে থাকায় ব্যবসায়ীরা ফের বিদেশি ঋণ নিতে শুরু
করেছে।