গৃহকর্মী নির্যাতনের ঘটনায় বিচারহীনতার সংস্কৃতি চলমান রয়েছে। জাতীয় মানবাধিকার কমিশন মনে করে, গৃহকর্মী নির্যাতনের ঘটনায় যদি মামলা হয়, অনেক ক্ষেত্রে অর্থের দাপট, পেশি শক্তি এবং রাজনৈতিক দাপটের কাছে পরাস্ত হতে হয় দুর্বলদের। কমিশন মনে করে, গৃহকর্মী নির্যাতনের ঘটনায় বিচারহীনতার সংস্কৃতি করছে। আজ৫ সোমবার কমিশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা ইউশা রহমানের স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানা গেছে।
গত ৩ নভেম্বর গণমাধ্যমে প্রকাশিত ‘এতিম রিয়া মনিকে ছ্যাঁকা দিতে দিতে কবিতা লিখতেন তিনি!’ শিরোনামে সংবাদটি জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের নজরে আসে।
এ ঘটনায় কমিশন মনে করে, পিতৃ-মাতৃহীন অসহায় শিশুর প্রতি বর্ণিত নির্যাতনের অভিযোগ অনভিপ্রেত ও মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। এ ঘটনায় দায়ী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিতে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন। তাই এ ঘটনায় কমিশন স্বপ্রণোদিত অভিযোগ (সুয়োমটো) গ্রহণ করেছে।
গৃহীত সুয়োমটোর প্রেক্ষিতে কমিশনের মাননীয় চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ মনে করেন, বাংলাদেশে গৃহকর্মীদের সুরক্ষার জন্য গৃহকর্মী সুরক্ষা নীতিমালা থাকলেও সাম্প্রতিক সময়ে গৃহকর্মী নির্যাতন একটি নিত্য নৈমিত্তিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। গৃহকর্মীরা অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে দুর্বল অবস্থানে থাকার কারণে নির্যাতনে জড়িতদের সাজা হয়না।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ পর্যালোচনায় জানা যায় যে, বন্দরনগরী চট্টগ্রামে রিয়া মনি (১৩) নামক এক গৃহকর্মী নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। নির্যাতনের শিকার ১৩ বছরের এই গৃহকর্মীকে শহরের অক্সিজেন মোড় এলাকার থেকে পুলিশ উদ্ধার করে। ভুক্তভোগী গৃহকর্মীর মা-বাবা, কেউই বেঁচে নেই।
প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যায়, সারাদিনের হাড়ভাঙা খাটুনির পর সামান্য ভুল কিংবা বিনাকারণে শরীরে গরম লোহার সেঁক দেওয়াসহ বর্বর নির্যাতনের চিহ্ন মিলেছে রিয়া মনির শরীরে। তার সঙ্গে কী ধরনের অমানবিক আচরণ এবং অত্যাচার করা হয়েছে তার বর্ণনা উঠে আসে রিয়া মনির কথায়।
অপরদিকে অভিযুক্ত নীলিমা শামীম একজন কবি। নির্যাতনের এসব তথ্য নির্যাতনকারীর পুত্রবধূ জানলেও ভয়ে মুখ খুলতেন না।
ভুক্তভোগীকে উদ্ধার করে থানায় আনার পর রিয়া জানায়, নির্যাতনের কারণে পালিয়ে গেলেও তাকে আবার ধরে আনা হয়। মায়ের মৃত্যু হলেও তাকে দেখতে যেতে দেওয়া হয়নি। বর্তমানে চিকিৎসার জন্য রিয়াকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে ভর্তি করা হয়েছে। নির্যাতনের ঘটনায় বায়োজিদ বোস্তামি থানায় মামলা দায়ের হয়েছে।
কমিশন কর্তৃক প্রস্তাবিত গৃহকর্মী সুরক্ষা আইনটি সরকার কর্তৃক পাশ করার দাবিসহ এই ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার সর্বশেষ অগ্রগতি কমিশনকে অবহিত করার জন্য পুলিশ কমিশনার, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ, চট্টগ্রামকে বলা হয়েছে। একইসঙ্গে হাসপাতাল সমাজসেবা কার্যক্রমের মাধ্যমে ভুক্তভোগীর চিকিৎসা-সেবা ও কাউন্সেলিংসহ পুনর্বাসন নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে কমিশনকে অবহিত করার জন্য মহাপরিচালক, সমাজসেবা অধিদফতরকে বলা হয়েছে।