অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ‘বাংলাদেশ ক্লাইমেট অ্যাকশন ফোরাম’। আগামী ১০ অক্টোবর ঢাকায় রেডিসন ব্লু ওয়াটার গার্ডেন হোটেলে ফোরামটি অনুষ্ঠিত হবে।
বাংলাদেশ অ্যাপারেল এক্সচেঞ্জ (বিএই) কর্তৃক আয়োজিত এ ফোরামে শিল্পসংশ্লিষ্ট অংশীজনরা জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বিরূপ প্রভাব মোকাবিলার জন্য সামগ্রিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে বাংলাদেশের পোশাক শিল্পে পরিবেশসম্মত টেকসই উন্নয়নের পথকে কিভাবে সুগম ও ত্বরান্বিত করা যায় তা নিয়ে মতবিনিময় ও আলোচনা করবেন।
এ আয়োজনে সহযোগী হিসেবে রয়েছে অ্যাপারেল ইমপ্যাক্ট ইনস্টিটিউট, ক্যাসকেল, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জিআইজেড, এইচএন্ডএম, বাংলাদেশে নেদারল্যান্ডসের দূতাবাস, পিডিএস লিমিটেড এবং টার্গেট। পোশাক শিল্পের নেতারা, সরকারি প্রতিনিধি, জলবায়ু নিয়ে কাজ করা ব্যক্তি, ব্র্যান্ড, উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা, প্রতিষ্ঠান, নীতিনির্ধারক এবং শিক্ষাবিদগণ এ ফোরামে অংশগ্রহণ করবেন।
জলবায়ু পরিবর্তন রোধ ও এর প্রভাব মোকাবিলায় নীতি নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনকারী সরকারি সংস্থাসমূহ যেমন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়; এবং বাংলাদেশ পাওয়ার ম্যানেজমেন্ট ইনস্টিটিউট (বিপিএমআই) সমূহকে বাংলাদেশ ক্লাইমেট অ্যাকশন ফোরামের মাধ্যমে আলোচনার জন্য একত্রিত করবে।
বাংলাদেশে ডেনমার্ক, ফ্রান্স, সুইডেন ও জার্মানির দূতাবাসসহ মূল কূটনৈতিক মিশনগুলো এ ফোরামে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করবে। ইউরোপীয় কমিশনের অংশগ্রহণ ফোরামের বৈশ্বিক দৃষ্টিভঙ্গিকে আরও শক্তিশালী করবে। লডস ফাউন্ডেশন, ইউএসএআইডি বাংলাদেশ, অক্সফাম, ব্লুউইন, এবং কর্নেল ইউনিভার্সিটি, এপিক গ্রুপ, যমুনা গ্রুপ, প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ, শিন শিন গ্রুপ, টিমসহ শীর্ষস্থানীয় পোশাক প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানসমূহ এবং উদ্ভাবনী প্রতিষ্ঠান এসওএলশেয়ার এ আয়োজনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করবে।
বিশ্বব্যাপী কার্বন নির্গমনের প্রায় ১০% জন্য দায়ী ফ্যাশন শিল্প, যা সমস্ত আন্তর্জাতিক ফ্লাইট এবং শিপিং এর মিলিত কার্বন নিঃসরণের চেয়ে বেশি। এই কঠোর বাস্তবতা অবিলম্বে ডিকার্বনাইজেশন প্রচেষ্টার প্রয়োজনীয়তা তৈরি করেছে। স্বল্প-কার্বন প্রযুক্তি ব্যবহার করে আমরা কার্বন নির্গমন ৫০% হ্রাস করতে পারি, যা একটি টেকসই ভবিষ্যতের জন্য সম্মিলিত প্রয়াসের বিশাল শক্তির প্রতিফলন।
এবারের ফোরামের প্রতিপাদ্য হলো “বাংলাদেশ ফ্যাশন: ড্রাইভিং কালেক্টিভ ক্লাইমেট অ্যাকশন” যার লক্ষ্য ফ্যাশন এবং পোশাক খাতের মধ্যে সাসটেইনেবিলিটি বা টেকসইতার প্রয়োজনীয়তাকে তুলে ধরা। এ ফোরামে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে কার্যকরী আলোচনা মাধ্যমে ডিকার্বনাইজেশন এবং জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় আমাদের জ্ঞান, সক্ষমতা ও দক্ষতা বৃদ্ধি করতে পারি।
দিনব্যাপী বাংলাদেশ ক্লাইমেট অ্যাকশন ফোরাম ২০২৪-এ মূল বক্তব্য, প্যানেল আলোচনা, উপস্থাপনা, কর্মশালা এবং দুটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগের উদ্বোধন হবে। বাংলাদেশ ক্লাইমেট অ্যাকশন ফোরামের আলোচ্য বিষয়সমূহের মধ্যে থাকবে জলবায়ু সংকট এবং ফ্যাশন: বাংলাদেশের জন্য করণীয়, বাংলাদেশের জন্য ডিকার্বনাইজেশন বাস্তবায়নের উপায়, জলবায়ুর প্রভাব, বাংলাদেশে ফ্যাশন শিল্পের জন্য অভিযোজন সক্ষমতা বৃদ্ধিতে প্রয়োজনীয় অগ্রাধিকারমূলক কর্মপন্থা, ডিকার্বনাইজেশন বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় অর্থায়ন ইত্যাদি।
প্যানেল অধিবেশনগুলি ডিকার্বনাইজেশন বাস্তবায়নে বাধাসমূহ, বাংলাদেশে সিপিপিএএস বাস্তবায়ন, জলবায়ু অভিযোজন, প্রশমন ও টিকে থাকার সক্ষমতা, ক্লাইমেট জাস্টিস, ইক্যুইটি এবং সমন্বিত দায়িত্ববোধ, এবং ডিকার্বনাইজেশন বাস্তবায়নে অর্থায়নসহ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বিশেষজ্ঞগণ আলোচনা করবেন। সম্মেলনে দুটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগের উদ্বোধন হবে। একটি হচ্ছে সলিদারিদাদ এর “বেটার মিলস ইনিশিয়েটিভ” এবং আরেকটি হলো “ওয়ারট্রু সোলার এর (OnetrueSOLar) ফান্ড”।
বিশ্ববিখ্যাত প্রতিষ্ঠান আর্মস্ট্রং ফ্লুইড টেকনোলজি, ফোর্বস মার্শাল, গ্রান্ট থর্নটন ভারত এলএলপি, ইলুকুম্বুরা ইন্ডাস্ট্রিয়াল অটোমেশন (প্রাইভেট) লিমিটেড এবং জিনকো সোলারের বিশেষজ্ঞদের সহায়তায় ’ইন্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপ’ আয়োজন করা হবে। অংশগ্রহণকারী প্রতিটি প্রতিষ্ঠান সাসটেইনেবিলিটি, এনার্জি অপ্টিমাইজেশন, এবং অত্যাধুনিক সবুজ প্রযুক্তিতে নিজেদের উদ্ভাবন ও জ্ঞান প্রদর্শন করবে, যাতে অংশগ্রহণকারীরা তাদের উৎপাদন প্রক্রিয়ায় সেগুলো প্রয়োগের কার্যকরী কৌশলগুলো সম্পর্কে ধারণা লাভ করতে পারেন। পোশাক উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানসমূহ থেকে ৩০০ এর অধিক প্রকৌশলী এ ওয়ার্কশপে যোগ দেবেন এবং তাদের নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সাসটেইনেবিলিটি এবং ডিকার্বনাইজেশন বাস্তবায়নে ব্যবহারিক জ্ঞান ও কৌশলসমূহ আয়ত্ত করার সুযোগ পাবেন। জিআইজেড ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপের অংশ হিসেবে পরিবেশবান্ধব কুলিং সলিউশন নিয়ে একটি প্যানেল আলোচনার আয়োজন করবে।
বাংলাদেশ ক্লাইমেট অ্যাকশন ফোরাম ২০২৪ জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সম্মিলিত আকাঙ্ক্ষা অর্জনে কৌশলগত দূরদর্শিতার প্রতিশ্রুতি বহন করে। ভবিষ্যত জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা সংক্রান্ত উদ্যোগ ও কর্মকাণ্ড বাস্তবায়ন, নেতৃত্ব, সহযোগিতা এবং সকলের জন্য একটি টেকসই, কম কার্বন ভবিষ্যতের জন্য ভিত্তি স্থাপন করা এই উদ্যোগটির অন্যতম লক্ষ্য।
বাংলাদেশ অ্যাপারেল এক্সচেঞ্জের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোস্তাফিজ উদ্দিন বলেন, “একটি নেট-জিরো কার্বন ভবিষ্যত অর্জন করা কেবল একটি প্রয়োজনীয়তা নয়, এটি একটি অত্যন্ত গুরুতর দায়িত্বও বটে। আমাদের অবশ্যই আমাদের শিল্পগুলোকে, বিশেষ করে ফ্যাশন ও পোশাক খাতকে টেকসই অনুশীলনের প্রতি উদ্বুদ্ধ করতে হবে যাতে কার্বন নিঃসরণ কমানো ছাড়াও ভবিষ্যতে টেকসই অবস্থান তৈরিতে নিজেদের সক্ষমতা তৈরি করে যেতে পারে। এখন আমাদের পৃথিবী যেন আগামী প্রজন্মের জন্য সমৃদ্ধ হয় তা নিশ্চিত করার জন্য সম্মিলিত পদক্ষেপের সময় এসেছে।”
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. এম. ফৌজুল কবির খান; পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশেষ দূত লুৎফী সিদ্দিকী বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক জলবায়ু প্রতিশ্রুতির কৌশলগত দিক তুলে ধরবেন।
অনুষ্ঠানে গেস্ট অফ অনার হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বাংলাদেশে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি দলের প্রধান এবং রাষ্ট্রদূত এইচই মাইকেল মিলার, জার্মানির রাষ্ট্রদূত অচিম ট্রস্টার, এবং নেদারল্যান্ডস কিংডমের দূতাবাসের চার্জ ডি অ্যাফেয়ার্স থিজ ওয়াউডস্ট্রা। তাদের অংশগ্রহণ বাংলাদেশের টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যকে এগিয়ে নিতে প্রয়োজনীয় আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ওপর জোর দেয়।
প্যানেলের বক্তাদের মধ্যে রয়েছেন রিয়াজ হামিদুল্লাহ, অতিরিক্ত পররাষ্ট্র সচিব (বহুপাক্ষিক ও আঞ্চলিক), পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ; সার্জ গিয়াকোমোটো, পলিসি অফিসার অন সাসটেইনেবল ফাইনান্স, ইউরোপীয় কমিশন; এডউইন কোয়েকোক, ফার্স্ট কাউন্সেলর এবং টিম লিডার, গ্রীন ইনক্লুসিভ ডেভেলপমেন্ট, বাংলাদেশে ইউরোপীয় ইউনিয়ন প্রতিনিধিদল; আব্দুল্লাহ হিল রাকিব, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, টিম গ্রুপ ও সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট, বিজিএমইএ; মোহাম্মদ সোহেল সাদাত, চেয়ারম্যান, শিন শিন গ্রুপ ও পরিচালক, বিজিএমইএ; জিয়াউর রহমান, আঞ্চলিক কান্ট্রি ম্যানেজার, এইচএন্ডএম; সুজাত আলী, সিনিয়র ব্যবস্থাপনা পরিচালক, সোর্সিং এবং পিএসকিউএ টার্গেট সোর্সিং সার্ভিসেস বাংলাদেশ ও পাকিস্তান; লিসা ফ্রস্ট, ক্লাইমেট প্রোগ্রাম ডিরেক্টর, অ্যাপারেল ইমপ্যাক্ট ইনস্টিটিউট; বিধুরা রালাপানাওয়ে, এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট, এপিক গ্রুপ এবং বোর্ড অফ ডিরেক্টরস, ক্যাসকেল; টুওমো পাউটিয়ানেন, কান্ট্রি ডিরেক্টর, আইএলও বাংলাদেশ; কল্পনা আক্তার, প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী পরিচালক, বাংলাদেশ সেন্টার ফর ওয়ার্কার সলিডারিটি; নিশাত চৌধুরী, প্রোগ্রাম ম্যানেজার, পার্টনারশিপ ফর ক্লিনার টেক্সটাইল (প্যাক্ট) প্রোগ্রাম, ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স কর্পোরেশন (আইএফসি); ফয়সাল রাব্বি, এনার্জি বিশেষজ্ঞ, বিশ্বব্যাংক; শায়ান শফি, এনার্জি টিম লিডার, ইউএসআইডি এবং আরও অনেকে।