২০২৩ সালে বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতির উল্লেখযোগ্য কোনো পরিবর্তন হয়নি বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। বৈশ্বিক মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে দেশটির পররাষ্ট্র দপ্তরের প্রতিবেদনে বাংলাদেশের বিষয়ে একথা বলা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় সোমবার (২২ এপ্রিল) এই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ বছর বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতির উল্লেখযোগ্য কোনো পরিবর্তন হয়নি। এতে আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশে বিচারবহির্ভূত হত্যাসহ নির্বিচারে বা বেআইনি হত্যা, জোরপূর্বক গুম, সরকার কর্তৃক নির্যাতন বা নিষ্ঠুর, অমানবিক বা অবমাননাকর আচরণ বা শাস্তি; কারাগারের করুণ অবস্থা, নির্বিচারে গ্রেপ্তার বা আটক; বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিয়ে গুরুতর সমস্যা; রাজনৈতিক বন্দি; অন্য দেশে ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিকভাবে দমনপীড়ন; গোপনীয়তার সাথে স্বেচ্ছাচারী বা বেআইনী হস্তক্ষেপ; কারও অভিযুক্ত অপরাধের জন্য তার পরিবারের সদস্যদের শাস্তি; সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে সহিংসতা বা সহিংসতার হুমকি, সাংবাদিকদের অযৌক্তিকভাবে গ্রেপ্তার বা বিচার, সেন্সরশিপ এবং মতপ্রকাশ সীমিত করার জন্য ফৌজদারি মানহানি আইন কার্যকরকরণ বা হুমকির সাথে মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর গুরুতর বিধিনিষেধ; ইন্টারনেট স্বাধীনতার ওপর গুরুতর নিষেধাজ্ঞা; শান্তিপূর্ণ সমাবেশের স্বাধীনতা এবং সংগঠন করার স্বাধীনতার ওপর উল্লেখযোগ্য হস্তক্ষেপসহ নানা ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিশ্বাসযোগ্য খবর রয়েছে।
এছাড়া চলাচলের স্বাধীনতার ওপর বিধিনিষেধ; অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে শান্তিপূর্ণভাবে সরকার পরিবর্তনে নাগরিকদের অক্ষমতা; রাজনৈতিক অংশগ্রহণের ওপর গুরুতর এবং অযৌক্তিক বিধিনিষেধ; গুরুতর সরকারি দুর্নীতি; দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর ওপর গুরুতর সরকারি বিধিনিষেধ বা হয়রানি; ব্যাপক লিঙ্গ-ভিত্তিক সহিংসতা, যৌন সহিংসতা, কর্মক্ষেত্রে সহিংসতা, শিশু, বাল্য, এবং জোরপূর্বক বিবাহ; স্বাধীন ট্রেড ইউনিয়ন এবং শ্রমিকদের সংগঠনের স্বাধীনতার ওপর উল্লেখযোগ্য বিধিনিষেধ এবং শিশুশ্রমের সবচেয়ে খারাপ রূপের অস্তিত্ব বাংলাদেশে রয়েছে বলেও এতে বলা হয়েছে।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের এই রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য ব্যাপক দায়মুক্তির অসংখ্য খবর রয়েছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে, সরকার মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী কর্মকর্তা বা নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের চিহ্নিত করতে এবং শাস্তি দেওয়ার জন্য বিশ্বাসযোগ্য কোনও পদক্ষেপ নেয়নি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সরকার বা সরকারি সংস্থা বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডসহ বিধিবহির্ভূত নানা হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে বলে খবর রয়েছে। নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের হাতে মোট কতজন নিহত হয়েছে, সরকার সেই সংখ্যা প্রকাশ করেনি, আবার ঘটনাগুলো তদন্তে স্বচ্ছ পদক্ষেপও নেয়নি।
বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বিগত বছরের তুলনায় কমেছে উল্লেখ করে প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত আটজনের বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে থাকাকালে মৃত্যু হওয়ার কথা বলেছে।
অন্যদিকে আরেকটি মানবাধিকার সংগঠন একই সময়ে ১২ জনের বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হওয়ার খবর দিয়েছে। রিপোর্টে ২৬ মার্চ র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) হেফাজতে সুলতানা জেসমিনের মৃত্যুর কথাও উল্লেখ করা হয়েছে।
বাংলাদেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের হাতে গুম ও অপহরণের ঘটনা অব্যাহত রয়েছে বলেও প্রতিবেদন উল্লেখ করা হয়েছে।