আজ শনিবার (২ ডিসেম্বর) সকাল ৯টা ৩৫ মিনিটে রাজধানী ঢাকা এবং টাঙ্গাইল, ফরিদপুর, চাঁদপুর, রাজশাহী, পঞ্চগড়, নারায়ণগঞ্জ, জামালপুর ও কুষ্টিয়াসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। রিখটার স্কেলে ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৫ দশমিক ৬। এর উৎপত্তিস্থল ছিল লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলায়।
যে কোনো স্থানে ভূমিকম্পের জন্য অন্যতম ভূমিকা রাখে ফল্ট লাইন। ভূত্বকের বড় খণ্ডকে টেকটোনিক প্লেট বলা হয়। দুটি টেকটোনিক প্লেটের মাঝে থাকা ফাটলই হলো ফল্ট লাইন। অর্থাৎ যেসব স্থানে একটি প্লেট এসে আরেকটি প্লেটের কাছাকাছি মিশেছে বা ধাক্কা দিচ্ছে বা ফাটলের তৈরি হয়েছে, সেটিই ফল্ট লাইন। ফল্ট লাইন দ্বারা দুটি প্লেটের সংঘর্ষ হলে ভূমিকম্প হয়।
গত কয়েক মাসে তিন থেকে চারটি ভূমিকম্প জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। কেন বারবার ভূমিকম্প হচ্ছে ঢাকাসহ আশেপাশের জেলায়? এসব ছোট ছোট ভূমিকম্প কি কোনো বিশেষ পূর্ভাবাস দিচ্ছে?
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক এবং বাংলাদেশ নেটওয়ার্ক অফিস ফর আরবান সেফটির (BNUS) পরিচালিত ড. মেহেদী আহমেদ আনসারী এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য এবং ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. সুলতান আল ইসলামের সঙ্গে।
ড. মেহেদী আহমেদ আনসারী বলেন, এর আগেও ১৮৮৫, ১৮৯৭, ১৯৩০ সালে দেশে এমন সময়ে ৭টা বড় রকমের ভূমিকম্প হয়েছে। এরপর গত দেড়শ বছরে ভূমিকম্প কিন্তু সেরকম হয়নি। এখন আবার ভূমিকম্প হচ্ছে। সাধারণত প্রায় ১৫০ বছর পরপর বাংলাদেশে বড় মাত্রার ভূমিকম্প হয়ে থাকে।
এই অধ্যাপক উদাহরণ টেনে বলেন, ১৮৬৯ সালে আমাদের দেশে ৭.৫ মাত্রার এবং ১৯১২ সালে ৭.৬ মাত্রার এবং ১৯১৮ সালে ৭.৬ মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছে। ৫.২ মাত্রার ছোট ছোট ভূমিকম্প পূর্বাভাস দেয় যে, আমাদের দেশে একটা বড় ভূমিকম্প হতে পারে। সেটা কবে হবে কেউ সঠিক বলতে পারে না। এটা প্রাকৃতিক। অদূর ভবিষ্যতে সেটা ৫-১৫ বছরের মধ্যেও হতে পারে; এবং আশঙ্কা হলো এর মাত্রা ৭ ছাড়িয়ে যেতে পারে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের এখন পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে যদি এমন হয় তাহলে কীভাবে ক্ষতির পরিমাণ কমানো যায়। ঝুকিপূর্ণ ভবনগুলো বাছাই করে সেসব ঠিক করতে হবে। ভবন নির্মাণের জন্য দেওয়া আইন মানতে হবে। মানুষকে ভূমিকম্প সম্পর্কে সতর্ক থাকতে হবে।
এ বিষয়ে ড. মো. সুলতান আল ইসলাম বলেন, এসব ছোট ছোট ভূমিকম্প আমাদের জন্য পূর্ভাবাস নিয়ে আসছে। বড় ভূমিকম্প হতে পারে যে কোন সময়ে। আল্লাহ না করুক একটা বড় ভূমিকম্প হলে ঢাকা এবং বড় বড় শহরে অনেক ক্ষয়ক্ষতি হবে এবং উদ্ধারকাজ করাও কষ্টকর হবে।
তিনি আরও বলেন, ঢাকা শহরসহ বিভিন্ন জায়গায় যেভাবে অপরিকল্পিত নগরায়ন হচ্ছে এগুলো ভূমিকম্পে ভেঙে গেলে উদ্ধারকাজ করা যাবে না। কেউ নিয়ম অমান্য করে ভবন যেন বানাতে না-পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। ভূমিকম্প প্রাকৃতিক বিষয়। ফলে আমাদের হাত নেই। চাইলেও আমরা ফেরাতে পারবো না। কিন্তু আমাদের সতর্ক থাকতে হবে যেন ক্ষয়ক্ষতি কমানো যায়। বাড়ি বানানোসহ যে কোনো স্থাপনা বানানোর ক্ষেত্রে নিয়ম মানা জরুরি।
উল্লেখ্য, এর আগে গত দুই অক্টোবর সন্ধ্যায় সারাদেশে ভূমিকম্প অনুভূত হয়। এই ভূমিকম্পের উৎসস্থল ভারতের মেঘালয় রাজ্য। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৫ দশমিক ২। গত সেপ্টেম্বর মাসে দেশে তিনটি ভূমিকম্প অনুভূত হয়। এর মধ্যে ১৭ সেপ্টেম্বর ঢাকাসহ দেশের নানা স্থানে হওয়া ভূমিকম্প রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৪ দশমিক ২। এর উৎপত্তিস্থল ছিল ঢাকা থেকে ৫৯ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে টাঙ্গাইলে।
এর আগে ১১ সেপ্টেম্বর সিলেট অঞ্চলে ভূমিকম্প অনুভূত হয়। এর উৎপত্তিস্থল ছিল ভারত-মিয়ানমার সীমান্ত। এ ছাড়া ৯ সেপ্টেম্বর আরেকটি ভূমিকম্প অনুভূত হয়। এর উৎপত্তিস্থল ছিল ভারতের আসামে। চলতি বছরের আগস্ট মাসে বাংলাদেশে দুটি ভূমিকম্প হয়। ২৯ আগস্টের ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল সিলেট এবং ১৪ আগস্টের ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল ছিল বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তবর্তী সিলেটের কানাইঘাট এলাকা।