নভেম্বর ১৭, ২০২৪

পুঁজিবাজারকে অস্থিতিশীল করে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের উস্কানি দিয়ে কেউ যাতে স্বার্থ হাসিল করতে না পারে সেই বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।

শনিবার (২৭ এপ্রিল) সকালে রাজধানীর ডিবি কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মলনে এ তথ্য জানিয়েছেন অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।

সংবাদ সম্মেলনে হারুন অর রশীদ বলেন, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা সাইবার এন্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ সাধারণ বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষার্থে সর্বদা কাজ করে চলেছে। এ বিষয়ে নিয়মিত ভাবে অনলাইনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো নিয়মিত মনিটরিং এবং সাইবার পেট্রোলিং পরিচালিত হচ্ছে। কোনভাবেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অসৎ উদ্দেশে ব্যবহার করতে দেওয়া হবে না।

এই সময়ে তিনি বলেন, অনলাইন এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে পুঁজিবাজারে বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ারের দাম নিয়ে কারাসাজি এবং গুজব রটনাকারী চক্রের তিনজন সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। গ্রেফতারকৃত আসামীরা হলেন – মো. আমির হোসাইন ওরফে নুর নুরানী (৩৭), নুরুল হক হারুন (৫২) এবং আব্দুল কাইয়ুম (৩৯)। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে নুর নুরানীর বিরুদ্ধে বিস্ফোরক দমন ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে ১১টি মামলা রয়েছে। হারুনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন কোম্পানিতে চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে।

এর আগে শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) রাতে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে রাজধানীর একাধিক এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ডিবি সাইবার এন্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ (দক্ষিণ) এর উপ-পুলিশ কমিশনার মোঃ শহীদুল ইসলাম, পিপিএম (বার) এর নির্দেশনায় এবং অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মোঃ সাইফুর রহমান আজাদ, পিপিএম এর নেতৃত্বে অভিযান পরিচালনা করে উক্ত চক্রের ৩ জন আসামী গ্রেফতার করে।

এই বিষয়ে অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মোঃ সাইফুর রহমান আজাদ বলেন, গ্রেফতারকৃতের  পাঁচ দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়েছে। ঘটনা তদন্তে পুলিশের গোয়েন্দা সাইবার এন্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ কাজ শুরু করেছে। ইতোমধ্যে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটককৃতরা সংশ্লিষ্ট ঘটনায় নিজেদের সম্পৃক্ততা স্বীকার করেছে। এছাড়া তারা আরও বেশ কয়েকজনের নাম জিজ্ঞাসাবাদে বলেছে, যারা পেছন থেকে নেপথ্যের কারিগর হিসেবে কাজ করে থাকে। আশা করছি দ্রুত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যাবে।  

সংবাদ সম্মেলনে হারুন অর রশীদ বলেন, পুঁজিবাজার একটি স্পর্শকাতর জায়গা। দেশের  অর্থনীতির সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এখানে অনেক সাধারণ বিনিয়োগকারী তাদের সর্বস্ব  নিয়ে এসে বিনিয়োগ করে থাকেন। অল্পতেই এখানে ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক থাকে।

হারুন আরও বলেন, পুঁজিবাজারের একটি স্বার্থান্বেষী চক্র দীর্ঘদিন ধরে পুঁজিবাজার এবং দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন, কমিশনের চেয়্যারম্যানসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির বিরুদ্ধে ফেসবুক, হোয়াটস্যাপ, টেলিগ্রাম এ গোপনীয় গ্রুপ খুলে বিভিন্ন মিথ্যা, ভূয়া এবং প্রতারণামূলক তথ্য সরবরাহ করে নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য সাধারণ বিনিয়োগকারীদের প্রতারিত করে আসছে। সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ব্যবহার করে আন্দোলনের নামে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরী করছে। এ বিষয়ে পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন রমনা মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। গত ২৫ এপ্রিল রমনা থানায় সাইবার নিরাপত্তা আইনে মামলাটি দায়ের করা হয়। এই মামলা নং ১৬। উক্ত মামলায় ২৬ এপ্রিল গোয়েন্দা পুলিশ অভিযুক্তদের আটক করে। 

সংবাদ সম্মেলনে ডিবি প্রধান আরও বলেন, আটককৃতরা বিভিন্ন সময়ে আন্দোলনের নামে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ব্যবহার করে রাস্তা দখল করে উদ্দেশ্যমূলক ভাবে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি  তৈরি করেছে। একইসঙ্গে তালিকাভুক্ত কোম্পানীতে বিভিন্ন ইস্যুতে চাঁদা দাবী করতো তারা। আর কোম্পানি দাবিকৃত চাঁদা না দিলে ওই সব কোম্পানি সম্পর্কে অন-লাইনে নানাভাবে অপপ্রচার শুরু করতো তারা। অপপ্রচারের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট কোম্পানীর অফিসগুলোতেও হামলাও করেছে চক্রটি।

হারুন অর রশীদ আরও বলেন, গ্রেফতারকৃতরা অতীতে পুঁজিবাজারে বিভিন্ন শেয়ার নিয়ে মিথ্যা তথ্য প্রদান করে দাম বৃদ্ধি করে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে উচ্চ মূল্যে বিক্রি করে এবং এসব করার জন্য গোপনীয় হোয়াটস্যাপ/টেলিগ্রাম গ্রুপ ব্যবহার করে। এসব গ্রুপের সদস্যদের একটি নিদিষ্ট ফি প্রদান করে গ্রুপে যুক্ত হতে হয়। আবার শেয়ারে  লাভ হলে লভ্যাংশ অংশ দিতে হয়। লোকসান হলে তারা দায়িত্ব নেয় না। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন আইন অনুযায়ী যেকোন শেয়ারের মূল্য নিয়ে তথ্য আদান- প্রদান সম্পন্ন অবৈধ।

গ্রেফতারকৃত আসামী আমির হোসাইন (নূর নূরানী ছদ্মবেশ নাম ধারণ করে আছে) এর নামে বিস্ফোরক দ্রব্য দমণ আইন ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে ১১টি মামলা রয়েছে। নুরুল হক হারুন, বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের বিভিন্ন সদস্যদের একত্রিক হয়ে কোম্পানি গুলোতে চাঁদাবাজি করে। ফেসবুক, হোয়াটস্যাপ ও টেলিগ্রামে সব মিলিয়ে ৮-১০ টি গ্রুপ চালায় অন-লাইনে তার অনেক ফলোয়ার।

নুরুল হক হারুন বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদ এর সহ-সভাপতি পদে  আছে। বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের নামে বিভিন্ন কোম্পানির কাছে থেকে চাঁদাবাজি করে। কাউয়ুম রয়েল ক্যাপিটাল নামক ব্রোকারেজ হাউজের সাথে যুক্ত। হোয়াটস্যাপ এবং টেলিগ্রাম গ্রুপে টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন শেয়ার সম্পর্কে তথ্য প্রদান করে।

সংবাদ সম্মেলনে ডিবি হারুন বলেন, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা সাইবার এন্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ, সাধারণ বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষার্থে সর্বদা কাজ করে চলেছে। এ বিষয়ে নিয়মিত ভাবে অনলাইনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো নিয়মিত মনিটরিং এবং সাইবার পেট্রোলিং পরিচালিত হচ্ছে। পুঁজিবাজারকে অস্থিতিশীল করে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের উস্কানি দিয়ে কেউ যাতে স্বার্থ হাসিল করতে না পারে সে বিষয়ে অভিযান পরিচালনা করছে।

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন...