ডিসেম্বর ২৬, ২০২৪

গত ১৫ বছরে বাংলাদেশের অভূতপূর্ব উন্নতি হয়েছে। পাকিস্তান বা শ্রীলঙ্কার মতো হওয়ার শঙ্কা বাংলাদেশের নেই বলে দাবি করেছেন আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় বিভাগের প্রধান রাহুল আনন্দ।

বুধবার (৯ নভেম্বর) সচিবালয়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সঙ্গে বৈঠকের পর এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।

সংবাদ সম্মেলনে রাহুল আনন্দ বলেন, বাংলাদেশ কখনো ঋণখেলাপি হয়নি। মহামারি করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর বাংলাদেশের অর্থনীতি যেভাবে পুনরুদ্ধার হয়েছে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে তা ব্যাহত হয়েছে। এতে বাণিজ্য ঘাটতি বেড়েছে, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও দ্রুত কমে যাচ্ছে। মুদ্রাস্ফীতি বেড়েছে, প্রবৃদ্ধি মন্থর হয়ে পড়েছে। যদিও এসব প্রতিকূলতা বাংলাদেশ ভালোভাবেই মোকাবিলা করেছে, কিন্তু দীর্ঘস্থায়ী অবকাঠামো সংকট রয়ে গেছে।

রাহুল আনন্দ বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনীতিও হুমকিতে রয়েছে। ২০৩১ সালের মধ্যে সফলভাবে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে পৌঁছাতে হলে বাংলাদেশকে অতীতের সাফল্যের ওপর ভিত্তি করে প্রবৃদ্ধির চাকাকে আরও গতিশীল করার জন্য কাঠামোগত সমস্যাগুলোতে নজর দিতে হবে এবং সেই সঙ্গে বেসরকারি বিনিয়োগ আকর্ষণ, উৎপাদন সুসংহত করা এবং জলবায়ু সহিষ্ণুতা গড়ে তুলতে হবে।

এর আগে আইএমএফ প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক শেষে সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জানান, কঠিন কোনো শর্ত ছাড়াই বাংলাদেশকে ঋণ দিতে সম্মত হয়েছে আইএমএফ।

আইএমএফের ঋণ আমরা পেতে যাচ্ছি ইনশাল্লাহ। ঋণের পরিমান ৪৫০ কোটি ডলার। সাত কিস্তিতে ২০২৬ পর্যন্ত ঋণ আসবে। প্রথম কিস্তি আসবে আগামী বছরের (২০২৩) ফেব্রুয়ারিতে। ৫ বছরের গ্রেস পিরিয়ডে ১০ বছরে পরিশোধ করতে হবে। তিন মাসের মধ্যে সকল আনুষ্ঠানিকতা শেষ করবে এবং বোর্ড চূড়ান্ত অনুমোদন দেবে।

অর্থমন্ত্রী জানান, আইএমএফ মিশন জানিয়েছে, তাদের কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী আগামী তিন মাসের মধ্যে ঋণ প্রস্তাবের সকল আনুষ্ঠানিকতা ও চূড়ান্ত বোর্ড অনুমোদন সম্পন্ন হবে। ঋণটি ২০২৬ সাল পর্যন্ত চার বছর মেয়াদী। মোট ঋণের পরিমান হবে ৩ দশমিক ৪৬৮ বিলিয়ন এসডিআর, যা বর্তমান বিনিময় হার অনুযায়ী প্রায় সাড়ে ৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এ ঋণ মোট সাত কিস্তিতে পাওয়া যাবে। আগামী ফেব্রুয়ারি নাগাদ আইএমএফ প্রথম কিস্তি ৩৫২ দশমিক ৩৫ মিলিয়ন এসডিআর অর্থ ছাড় করতে পারবে বলে আশা করছি। বাকি ঋণ প্রতি ছয় মাস অন্তর ৫১৯ মিলিয়ন এসডিআর হিসেবে ছয়টি সমান কিস্তিতে ২০২৬ সালের ডিসেম্বর এর মধ্যে পাওয়া যাবে। সুদের হার হবে ফ্লোটিং বর্তমান এসডিআর ইন্টারেস্ট রেট অনুযায়ী মোট ঋণের ওপর গড় সুদের হার হবে ২.২ শতাংশ।

এছাড়া এই ঋণের তিনটি অংশ, প্রথম অংশের ৮২২ দশমিক ৮২ মিলিয়ন এসডিআর এর জন্য কোনো সুদ দিতে হবে না অর্থাৎ সম্পূর্ণ সুদমুক্ত। দ্বিতীয় অংশে ১৬৮২ দশমিক ৬৮ মিলিয়ন এসডিআর এর ফ্লোটিং এর সাথে আরো এক শতাংশ সুদ হার যোগ হবে এবং তৃতীয় অংশে এক বিলিয়ন এসডিআর এর ফ্লোটিং এর সাথে আরো শূন্য দশমিক ৭৫ শতাংশ সুদ হার যোগ হবে।

উল্লেখ্য, গত ২৪ জুলাই ৪৫০ কোটি ডলার ঋণ চেয়ে আইএমএফকে চিঠি দেয় বাংলাদেশ। প্রাথমিক সম্মতি জানানোর পর শর্ত নিয়ে আলোচনার জন্য রাহুল আনন্দের নেতৃত্বে আইএমএফ প্রতিনিধিরা ২৬ অক্টোবর ঢাকায় আসেন। গত দুই সপ্তাহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তর, নিয়ন্ত্রক সংস্থা এবং অংশীজনদের সঙ্গে তারা ধারাবাহিক বৈঠক করেছেন।

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন...