গত ফেব্রুয়ারিতে পাকিস্তানে পরিবহন ও খাদ্যপণ্য বাবদ ব্যয় বেড়েছে ৩১ শতাংশেরও বেশি। মাত্র এক মাসের মধ্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দামের এই পরিমাণ উল্লম্ফণ গত ৫৮ বছরে দেখা যায়নি বলে জানিয়েছে দেশটির অর্থনীতি গবেষণা সংস্থা আরিফ হাবিব লিমিটেড।
পাকিস্তানের জাতীয় দৈনিক ডনকে আরিফ হাবিব লিমিটেডের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কনজিউমার প্রাইস ইনডেক্স (সিপিআই) নামের একটি সূচকের মাধ্যমে পাকিস্তানের মাসিক মূল্যস্ফীতি রেকর্ড করা হয়। সিপিআই সূচক বলছে, ফেব্রুয়ারি মাসে পাকিস্তানে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্য আটা, চাল, ভোজ্যতেল, ডিম, মুরগির মাংসের মূল্য বেড়েছে ৩১ দশমিক ৬ শতাংশ এবং পরিবহন, কোমল পানীয়, অ্যালকোহল, সিগারেট প্রভৃতির দাম বেড়েছে সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ।
কর্মকর্তারা আরও জানান,তাদের কাছে থাকা তথ্য অনুযায়ী—সর্বশেষ পাকিস্তানে এই পরিমাণ মূল্যস্ফীতি দেখা গিয়েছিল ১৯৬৫ সালের জুলাই মাসে। ওই বছর কাশ্মির ইস্যুতে ভারতের সঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছিল পাকিস্তান, তার জেরেই জুলাই মাসে ৩০ শতাংশ মূল্যস্ফীতি দেখা গিয়েছিল।
চলতি বছর ফেব্রুয়ারির আগ পর্যন্ত এটিই ছিল এক মাসে সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতির রেকর্ড। সেই হিসেবে গত মাসে ইতিহাসের সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতি দেখেছে পাকিস্তান।
দেশটির বৈদেশিক মুদ্রার মজুত প্রতিদিন কমছে। দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তানের ৩ ফেব্রুয়ারি দেওয়া হিসাব অনুসারে, চলতি ২০২৩ সালের শুরু থেকে এ পর্যন্ত পাকিস্তানের বৈদেশিক মুদ্রার মজুত ১৭ কোটি ডলার কমে গেছে। এখন এর পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৯০ কোটি ডলার।
পাকিস্তান আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছে ঋণ সহায়তা চায়। এ নিয়ে কথাবার্তাও শুরু হয়েছিল। তবে বর্তমানে সেই আলোচনা ‘ঝুলে যাওয়ায়’ অত্যন্ত প্রয়োজনীয় এ অর্থের ছাড় এখনো হয়নি।
পাকিস্তানের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সরকারের সঙ্গে আলোচনায় অগ্রাধিকার পরিবর্তন করেছে আইএমএফ। ফলে, দু’পক্ষের ঐকমত্য আবারও পিছিয়ে যাচ্ছে। এই খবর ছড়িয়ে পড়ায় গত ২৮ ফেব্রুয়ারি দেশটির শেয়ারবাজারে বড় ধরনের দরপতন হয়েছে। সেদিন সকালে দেশটির প্রধান শেয়ার সূচক কেএসই-১০০ সূচক ৪৩৫ দশমিক শূন্য ৮ পয়েন্ট বা ১ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ কমেছে।
এসব কারণে পাকিস্তান ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে পাকিস্তান। পাকিস্তানি রুপির দাম পড়তে পড়তে এখন ডলারপ্রতি ২৬৫ রুপিতে পৌঁছেছে । বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ তলানিতে ঠেকেছে। ১৯৯৮ সালের পর থেকে এখন সর্বনিম্ন স্তরে নেমে এসেছে রিজার্ভ।
রিজার্ভ নেমে যাওয়ায় পাকিস্তানে এখন নিয়ন্ত্রণহীনভাবে বাড়ছে খাদ্য-জ্বালানি-বিদ্যুৎসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সব পণ্যের দাম। আটা, ডাল, চাল, দুধ—সবকিছুরই দাম এখন সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। ফলে সীমাহীন ভোগান্তির মধ্যে আছেন দেশটির সাধারণ মানুষ।
গত মাসে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ জানিয়েছেন, কৃচ্ছ্রসাধনের অংশ হিসেবে পাকিস্তানের মন্ত্রী-উপদেষ্টাদের ভাতা ও ভ্রমণ ব্যয় কাটছাঁট করছে দেশটির সরকার। তার সরকার কৃচ্ছ্রসাধন অভিযানের মাধ্যমে বার্ষিক ২০০ বিলিয়ন পাকিস্তানি রুপি সাশ্রয় করতে চায়।