ভারতের বেশ কয়েকটি তেল শোধনকারী প্রতিষ্ঠান চীনা ইউয়ানের বিনিময়ে রাশিয়া থেকে তেল আমদানি শুরু করেছে। পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার মধ্যে মস্কো ও তার গ্রাহকেরা বিনিময়ের জন্য এখন ডলারের বিকল্প হিসেবে ইউয়ান ব্যবহার করছে।
ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের জন্য পশ্চিমারা অসংখ্য নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। কিন্তু সেই সব নিষেধাজ্ঞার কারণে রাশিয়া বাণিজ্যনীতিতেও এনেছে পরিবর্তন। এমন পরিস্থিতিতে দেশটির বড় তেল ক্রেতা আবির্ভূত হয়েছে ভারত। তবে জলপথে রপ্তানি করা এসব তেলের দাম পরিশোধ করা হবে কীভাবে তা নিয়ে সংকট দেখা দেয়।
কেননা, বিশ্ববাজারে তেল কেনাবেচার ক্ষেত্রে মার্কিন ডলার দীর্ঘকাল ধরে রাজত্ব করে আসছিল। ভারতও ডলারই ব্যবহার করত তেল কেনার ক্ষেত্রে। কিন্তু ইউয়ান এখন রাশিয়ার অর্থব্যবস্থায় দিনে দিনে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান নিচ্ছে। কারণ নিষেধাজ্ঞার কারণে ডলার ও ইউরো দিয়ে বাণিজ্য করতে পারছে না মস্কো।
এদিকে চীনও রাশিয়া থেকে বেশির ভাগ আমদানির জন্য ইউয়ানে মূল্য পরিশোধ করছে, যা এ বছরের প্রথম তিন মাসে চীনের শীর্ষ অপরিশোধিত তেল সরবরাহকারী সৌদি আরবকে ছাড়িয়ে গেছে।
ভারত সরকারের একটি সূত্র জানিয়েছে, ‘ভারতের ব্যাংকগুলো ডলারে মূল্য পরিশোধে ইচ্ছুক না হলে কিছু তেল শোধনকারী ইউয়ানের মতো মুদ্রায় অর্থ প্রদান করছে।
ইন্ডিয়ান অয়েল করপোরেশন রাশিয়ান অপরিশোধিত তেলের বৃহত্তম ক্রেতা। জুনে সংস্থাটি রাশিয়াকে ইউয়ানে সবচেয়ে বেশি অর্থ পরিশোধ করেছে। বিষয়টির সঙ্গে জড়িত তিনটি সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।
অন্য দুটি সূত্র জানিয়েছে, ভারতের তিনটি বেসরকারি শোধনাগারের মধ্যে অন্তত দুটি ইউয়ানে আমদানির জন্য অর্থ প্রদান করছে। তবে বিষয়টির সংবেদনশীলতার কারণে নাম প্রকাশে অনিচ্ছা প্রকাশ করেছে এই তিন প্রতিষ্ঠান। ভারতের বেসরকারি তেল পরিশোধন কোম্পানি রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, রাশিয়া-সমর্থিত নায়ারা এনার্জি এবং এইচপিসিএল মিত্তাল এনার্জি লিমিটেড মন্তব্যের অনুরোধে সাড়া দেয়নি। ইন্ডিয়ান অয়েলও মন্তব্যের কোনো জবাব দেয়নি।
সূত্র জানিয়েছে, কতগুলো ভারতীয় পরিশোধক রাশিয়া থেকে ইউয়ানের বিনিময়ে তেল কিনেছে তা এখনো নির্ধারণ করা যায়নি। যদিও ইন্ডিয়ান অয়েল একাধিক কার্গোর জন্য ইউয়ানে মূল্য পরিশোধ করেছে বলে জানা গেছে।
বেইজিং ইউয়ানকে আন্তর্জাতিকীকরণের প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। এখন পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার সুযোগ নিয়ে সেটি যেন বাস্তব রূপ নিচ্ছে। চীনা ব্যাংকগুলো বিশেষ করে রাশিয়ান তেল বাণিজ্যের জন্য এর ব্যবহারকে উৎসাহিত করছে।
রয়টার্সের শিপিং ডেটা অনুসারে মস্কোর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর থেকে ভারতীয় তেল শোধনকারীরা বেশির ভাগই দুবাইভিত্তিক ব্যবসায়ীদের থেকে অপরিশোধিত তেল কিনছে। পাশাপাশি রাশিয়ার তেল কোম্পানি রোসনেফট, লুকোয়েলের লিটাস্কো ইউনিট এবং গ্যাজপ্রম নেফটের কাছ থেকেও অপরিশোধিত তেল কিনেছে।
সূত্র জানিয়েছে, ভারতীয় শোধনকারীরা সংযুক্ত আরব আমিরাতের দিরহামেও কিছু তেলের মূল্য পরিশোধ করেছে।
সরকারি সূত্রটি বলেছে, ‘প্রথম অগ্রাধিকার হলো ডলারে মূল্য পরিশোধ করা। তবে ক্রেতারা কখনো কখনো বিক্রেতাদের দিরহাম ও ইউয়ানে মূল্য পরিশোধ করে।’ তবে সূত্রটি আর বিশদ বিবরণ দেয়নি এবং রাশিয়ান তেলের জন্য ইউয়ানে অর্থ পরিশোধের বিষয়টিও অস্বীকার করেছে।
ভারতের তেল ও অর্থ মন্ত্রণালয়, যারা আগে রুপি দিয়ে রাশিয়ার সঙ্গে তেল বাণিজ্যের চেষ্টা করেছিল, তারা মন্তব্যের অনুরোধে সাড়া দেয়নি।
এর আগে রয়টার্স মার্চে ভারতের সরকারি কর্মকর্তা ও ব্যাংকিং সূত্রের বরাত দিয়ে রিপোর্ট করে, চীনের সঙ্গে দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক মতপার্থক্যের কারণে রাশিয়ান আমদানির জন্য ইউয়ান ব্যবহার এড়াতে ভারত ব্যাংক ও ব্যবসায়ীদের নির্দেশ দিয়েছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক বাণিজ্যর চিত্র সেই দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন কি না, তা এখনো স্পষ্ট নয়।
রাশিয়া থেকে ভারতের আমদানি মে মাসে রেকর্ড গড়েছে। এ সময় ভারতের সামগ্রিক তেল আমদানির ৪০ শতাংশ ছিল রাশিয়ার অপরিশোধিত তেল, যা এক বছর আগে ছিল মাত্র ১৬ দশমিক ৫। পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার পর থেকে ইরাক ও সৌদি আরব থেকে কেনা কমিয়েছে ভারত।