১,৫৩০ মিলিয়ন ডলার বৈদেশিক বিনিয়োগ পাওয়ার ও ১,৮৩৬ মিলিয়ন ডলার রপ্তানির লক্ষ্য নিয়ে পটুয়াখালীতে গড়ে তোলা হচ্ছে বাংলাদেশের নবম রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা (ইপিজেড)।
এ লক্ষ্যে বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষ (বেপজা) ইতিমধ্যে ১,৪৭৫ কোটি টাকার একটি প্রকল্প প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনা কমিশনে পাঠিয়েছে।
অনুমোদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে এ বছরই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন কাজে হাত দিতে চায় বাস্তবায়নকারী সংস্থা বেপজা।
বেপজার কর্মকর্তারা জানান, পদ্মা সেতুর চালু হওয়ার পর থেকে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে বিনিয়োগের সম্ভাবনা বেড়েছে। এ সুযোগ কাজে লাগাতে পটুয়াখালী ইপিজেড বাস্তবায়নের কাজ দ্রুত শেষ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
বেপজার নির্বাহী পরিচালক (পাবলিক রিলেশনস) নাজমা বিনতে আগলমগীর দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, ‘প্রস্তাবিত ইপিজেডের কাছাকাছি দুটি সমুদ্র বন্দর রয়েছে—একটি পায়রা, অপরটি মোংলা সমুদ্র বন্দর। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর মোংলায় বিনিয়োগের ব্যাপক সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। আমার বিনিয়োগকারীদের বরিশাল এলাকায় ইপিজেডের কথা বলা শুরু করেছি, তারা ওই এলাকায় বিনিয়োগে মৌখিকভাবে তাদের আগ্রহের কথা জানাচ্ছে।’
‘এ কারণে প্রস্তাবিত প্রকল্পটি দ্রুত শেষ করা জরুরি,’ বলেন তিনি।
ইতিমধ্যে প্রকল্পের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা শেষ হয়েছে। সমীক্ষা অনুযায়ী, পটুয়াখাালীর পচাকোড়ালিয়া ও কুয়াকাটার ৪১৮ একর জমিতে প্রস্তাবিত ইপিজেডে ৩০৬টি শিল্প প্লট তৈরি করা যাবে।
সম্ভাব্যতা সমীক্ষা অনুযায়ী, প্রস্তাবিত ইপিজেডে ১ লাখ বাংলাদেশি নাগরিকের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে। এছাড়া আরও ২ লাখ বাংলাদেশির পরোক্ষ কর্মসংস্থান হবে ।
প্রকল্পের কাজে অগ্রগতি হলেই বিদেশি বিনিয়োগকারীদের পটুয়াখালী ইপিজেডে বিনিয়োগের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে প্রস্তাব দেওয়া হবে বলে জানান বেপজা কর্মকর্তা নাজমা।
এদিকে পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তারা জানান, ইতিমধ্যে বেপজার প্রকল্প প্রস্তাব যাছাই-বাছাইয়ের কাজ শুরু করেছেন তারা।
প্রকল্প প্রস্তাবের ওপর আগামী ৫ জুলাই প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হবে। এর পরই প্রকল্প প্রস্তাব চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভায় (একনেক) উপস্থাপন করা হবে।
নাজমা বিনতে আলমগীর বলেন, ‘একনেকে অনুমোদনের পরই ভূমি অধিগ্রহণ কার্যক্রম শুরু করা হবে। ভূমি অধিগ্রহণ হওয়ার পরই আরম্ভ হবে মূল নির্মাণ কাজ। ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে ইপিডেজ স্থাপনের কাজ শেষ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।’
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, প্রকল্পটি বাস্তবায়নে যে অর্থ ব্যয় হবে, সরকারি তহবিল থেকে তা ২ শতাংশ সুদে ঋণ হিসেবে দেওয়া হবে।
এ প্রকল্পের আওতায় পরিবেশবান্ধব শিল্প প্লট তৈরি করা হবে। ইপিজেডে ভূমি উন্নয়ন, নিজস্ব রাস্তা, সীমানাপ্রাচীর, বৈদ্যুতিক ও গ্যাস সংযোগ লাইন, সৌরবিদ্যুৎ, পানি সরবরাহ ও বৃষ্টির পানির জলাধার এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় স্থাপনা নির্মাণ করা হবে। প্লট তৈরি শেষে সেগুলো বিনিয়োগকারীদের বরাদ্দ দেওয়া হবে।
বাংলাদেশের ইপিজেডগুলো
১৯৮০ সালে গঠন করা হয় বেপজা। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীনে কার্যক্রম পরিচালনা করা এই সংস্থা দেশের সব ইপিজেডের ব্যবস্থাপনা করে। সংস্থাটির দায়িত্ব দেশে সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণ করা।
বর্তমানে দেশে আটটি ইপিজেড রয়েছে। বেপজা ১৯৮৩ সালে চট্টগ্রামে দেশের প্রথম ইপিজেড স্থাপন করে। এর সফলতায় পরে দেশের অন্যান্য ইপিজেডগুলো পর্যায়েক্রমে চালু করা হয়।
১৯৯৩ সালে ঢাকা ইপিজেডের কাজ শুরু হয় এবং সম্ভাব্য বিনেয়োগকারীদের কাছ থেকে ইতিবাচক সাড়া পাওয়ায় ঢাকা ইপিজেড সম্প্রসারণ প্রকল্প গ্রহণ করা হয় ১৯৯৭ সালে।
এরপর মোংলা, কুমিল্লা, ঈশ্বরদী ও উত্তরা (নীলফামারী) ইপিজেড বাস্তবায়ন করা হয়। আমদজী জুট মিলস এবং চ্টগ্রাম স্টিল মিলস এলাকায় স্থাপন করা হয় আরও দুটি ইপিজেড। সব মিলিয়ে তিন দশকে সরকার এই আটটি ইপিজেড স্থাপন করে।
বর্তমানে এই ইপিজেডগুলোতে ৪৫৬টি শিল্পে বিনিয়োগ হয়েছে ৬.০৪ বিলিয়ন ডলার। ইপিজেডগুলো থেকে বছরে রপ্তানি হচ্ছে ৯৫.৮৭ বিলিয়ন ডলারের পণ্য।
দেশের ইপিজেডগুলোতে পাঁচ লাখের বেশি দক্ষ শ্রমিক বিশ্ববিখ্যাত ব্র্যান্ডগুলোর জন্য বহুমুখী-বৈচিত্র্যময় পণ্য তৈরি করছেন।
দেশের বিভিন্ন ইপিজেডকে কেন্দ্র করে স্বয়ংক্রিয়ভাবে গড়ে উঠেছে স্যাটেলাইট টাউন। এছাড়া ইপিজেডকে কেন্দ্র করে পশ্চাৎপদ ও অগ্রজ শিল্পকারখানা, অ্যাকসেসরিজ শিল্পসহ পরিবহন, খাদ্য সরবরাহ, বাজার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল ইত্যাদি গড়ে উঠেছে।