চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের নবনির্মিত ‘পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনাল’ সরকারি বেসরকারি অংশীদারত্বের (জি২জি) ভিত্তিতে পরিচালনার জন্য চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ (চবক) ও রেড সী গেটওয়ে টার্মিনাল ইন্টারন্যাশনালের (আরএসজিটিআই) মধ্যে চুক্তি সই হয়েছে।
আজ বুধবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের করবী হলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে এই চুক্তি সই হয়। চুক্তিতে সই করেন চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম সোহায়েল এবং রেড সি গেট ওয়ের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) জেন্স ও ফলেএ।
অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সৌদি আরব বাংলাদেশের বন্ধুপ্রতীম রাষ্ট্র এবং একটি গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন অংশীদার। বাংলাদেশের জনগণের প্রতি রয়েছে গভীর শ্রদ্ধা ও আস্থা। আমরা সৌদি আরবকে সবসময় আমাদের হৃদয়ের কাছাকাছি পেয়েছি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজ আমরা সরকারি বেসরকারি আংশীদারত্ব ও জি২জি ভিত্তিতে সৌদি সরকার মনোনীত বেসরকারি গ্লোবাল অপারেটর আরএসজিটিআই এবং চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের মধ্যে পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনাল পরিচালনার জন্য কনসেশন চুক্তি স্বাক্ষর করতে যাচ্ছি। এই প্রকল্পটি বাংলাদেশ এবং সৌদি আরবের মধ্যে একটি শক্তিশালী এবং টেকসই অংশীদারত্বের দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।’
সরকার প্রধান বলেন, ‘এই কনসেশন চুক্তি অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও সমৃদ্ধির জন্য আমাদের দুই দেশের যৌথ দৃষ্টিভঙ্গি এবং অটল অঙ্গীকারের উদাহরণ। এটি দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক বিশেষ করে ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্র আরও জোরদার করবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘চট্রগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনাল প্রকল্পটি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের আশার বাতিঘর। স্বয়ংসম্পূর্ণ এই আধুনিক টার্মিনালটি আমাদের বন্দরের সক্ষমতা আরও বৃদ্ধি করবে এবং নিরবচ্ছিন্ন বাণিজ্য সহজতর করার পাশাপাশি কর্মসংস্থান ও নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টির পথও সুগম করবে। এটি বিশ্ব বাণিজ্যের প্রবেশদ্বার হিসেবে কাজ করবে এবং আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণে বিশ্বের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের নতুন সুযোগ উন্মুক্ত করবে।’
সরকার প্রধান বলেন, ‘রেড সী গেটওয়ে টার্মিনাল ইন্টারন্যাশনাল সৌদি সরকার মনোনীত একটি স্বনামধন্য গ্লোবাল টার্মিনাল অপারেটর। এই টার্মিনাল অপারেটরকে পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনাল পরিচালনায় মনোনীত করার জন্য আমি সৌদি সরকারকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানাই। সৌদি সরকারের এই উদ্যোগ নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের চলমান উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক সম্ভাবনার স্বীকৃতি।’
আরএসজিটিআই আগামী ২২ বছরের জন্য পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনালটি পরিচালনা করবে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আরএসজিটিআই যে সুনামের সঙ্গে জেদ্দা পোর্ট টার্মিনালসহ অন্যান্য টার্মিনাল পরিচালনা করছে, সেই দক্ষতা ও প্রযুক্তিজ্ঞান কাজে লাগিয়ে পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনালটি পরিচালনা করবে বলে আমি আশা করি। এতে চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যক্রম পরিচালনার দক্ষতা বৃদ্ধি পাবে এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে উন্নীত হবে। ফলে দেশের আমদানি-রপ্তানি ব্যয় উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাসের মাধ্যমে আমাদের অর্থনীতি লাভবান হবে।’
বাংলাদেশের সরকার ও জনগণের প্রতি আস্থা ও সহযোগিতার জন্য সৌদি সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান প্রধানমন্ত্রী। এছাড়া নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, পিপিপি কর্তৃপক্ষ, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ এবং রেড সী গেটওয়ে টার্মিনাল কর্তৃপক্ষকে সাধুবাদ জানান সরকার প্রধান। সরকার প্রধান বলেন, ‘আমি আশা করি, এই চুক্তি বাংলাদেশে সৌদি বিনিয়োগ উত্তরোত্তর বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে।’
এ সময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে সফররত সৌদি আরবের বিনিয়োগবিষয়ক মন্ত্রী খালিদ আল ফালি, বাংলাদেশের নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, ঢাকায় নিযুক্ত সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূত ইসা বিন ইউসুফ আল দুহাইলানসহ সৌদি বাণিজ্য প্রতিনিধিদলের সদস্যরা।