করোনা মহামারির সময় বিশ্ব থমকে যায়। ব্যবসায়ীরা তখন কোনো কূল-কিনারাই করতে পারেননি। ওই সময়ে নিত্যপণ্যের ব্যবসায়ীরা কিছুটা ব্যবসা করতে পারলেও গাড়ি ও লাক্সারি গাড়ির বিক্রি ছিল শূন্যের কোঠায়। এরপর অবশ্য দেশের বাজারে গাড়ির ব্যবসা কিছুটা মাথা উঁচু করে দাঁড়ায়। কিন্তু রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর আবারও কমতে থাকে গাড়ির ব্যবসা। সাম্প্রতিককালে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর একেবারে থমকে গেছে দেশের গাড়ির ব্যবসা।
চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ২০২৩ সালে আগের বছরের তুলনায় গাড়ি আমদানি কমে গেছে প্রায় ২২ শতাংশ। আর ৫ বছরের ব্যবধানে দেশের গাড়ি আমদানি কমেছে সর্বোচ্চ ৬০ শতাংশ। ৫ বছর আগে ২০১৯ সালে সব ধরনের কার আমদানি হয়েছিল ৬১ হাজার ৪৬৭টি। ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে কার আমদানি কমে ৬০.৭০ শতাংশ।
চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের তথ্যানুযায়ী, চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ২০২৩ সালে সবধরনের কার আমদানি হয়েছে ২৪ হাজার ১৫০টি। ২০২২ সালে গাড়ি আমদানির পরিমাণ ছিল ৩০ হাজার ৮৮০টি। অর্থাৎ ২০২৩ সালে ২০২২ সালের তুলনায় গাড়ি আমদানি কম হয়েছে ৬ হাজার ৭৩০টি বা ২১.৭৯ শতাংশ।
ব্যবসায়ীরা জানান, বাংলাদেশে দীর্ঘ প্রায় ১৬ বছরের স্বৈরাচারী শাসনের অবসানের পর বিলাসবহুল সেডান ও স্পোর্ট ইউটিলিটি ভেহিকেল কেনাবেচা কমে নেমেছে প্রায় ৯৫ শতাংশে। টয়োটার ল্যান্ড ক্রুজার, পাজেরো ও হ্যারিয়ার সিরিজের গাড়িও বিক্রি নেই। যদিও ৫ আগস্টের আগে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে প্রতি মাসে ৮০০-র মতো গাড়ি কেনাবেচার রেকর্ড ছিল দেশে।
জুলাইয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন শুরু থেকে একটি গাড়িও বিক্রি হয়নি প্রোগ্রেস মোটরস’র। এতে প্রায় এক কোটি টাকা লোকসান গুনতে হয়েছে বলে জানান রাজধানী তেজগাঁওয়ের প্রোগ্রেস মোটরস’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাদ নুসরাত খান।
তিনি জানান, দেশে চলমান অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যে ব্যবসায়িক কার্যক্রমে ধীরগতি আসায় বিলাসবহুল পণ্যের পেছনে অনেকে এতো টাকা খরচ করার অবস্থায় নেই। রাজনৈতিক পালাবদলে অর্থনীতি নিয়ে মানুষ শঙ্কিত। গত জুলাই থেকে বিলাসবহুল গাড়ির বিক্রি অনেক কমেছে দেশে। সূত্র একুশে টিভি।
অন্য আরেক গাড়ী ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত দামি গাড়ির ক্রেতা হয়ত পাওয়া যাবে না।
এদিকে, বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, চলতি বছরের শুরু থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রতি মাসে প্রায় ৭৩৪টি এসইউভি নিবন্ধিত হয়েছে সারা দেশে। যার মধ্যে সাধারণ গাড়ি হিসেবে সেডান গাড়ি গণ্য করায় অন্যান্য দামি গাড়ির নিবন্ধনের বিষয়ে আলাদা পরিসংখ্যান নেই। এছাড়াও, নতুন গাড়ি নিবন্ধনে দেরি করা ব্যক্তিরা এসব পরিসংখ্যানে বাদ পড়েন।
দেশের মাটিতে হঠাৎ বিলাসবহুল গাড়ি বিক্রি থমকে যাওয়ার কারণ উল্লেখ্য করে বাংলাদেশ রিকন্ডিশন্ড ভেহিক্যালস ইম্পোটার্স এন্ড ডিলারস এসোসিয়েশনের (বারভিডা) সভাপতি হাবিব উল্লাহ ডন বলেন, আমদানি শুল্ক বাড়িয়ে দেওয়ার পাশাপাশি টাকার বিপরীতে ডলারের দাম বেশি হওয়ায় দামি গাড়ির দাম আরও বেড়েছে। ফলে গত দুই মাসে এসব গাড়ির দাম ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা বেড়েছে।
হাবিব উল্লাহ ডনের ভাষ্য, এটি সুখবর যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির দিন দিন ভালো হচ্ছে। আগামীতে ক্রেতারা শোরুমে আসতে আরও স্বচ্ছন্দ বোধ করবেন। তবে তিনি দেশের দ্রুত অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
বাংলাদেশ রিকন্ডিশন্ড ভেহিক্যালস ইমপোর্টার্স অ্যান্ড ডিলার অ্যাসোসিয়েশনের (বারভিডা) তথ্যমতে, বর্তমানে দেশের ৬০ শতাংশ গাড়ি আমদানি করা হয় মোংলা বন্দর দিয়ে। বাকি ৪০ শতাংশ হয় চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে।
বাংলাদেশে আমদানি হওয়া গাড়ির প্রায় ৭৫ শতাংশ রিকন্ডিশনড বা পুরাতন গাড়ি। ১ থেকে ৫ বছরের পুরোনো এসব গাড়ি আমদানি খাতে কাস্টমসের শুল্ক বাবদ আয় হয় প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা। আমদানির বাকি ২৫ শতাংশ গাড়িগুলো ‘ব্র্যান্ড নিউ’।
তথ্য অনুসারে, রিকন্ডিশনড গাড়ি আমদানি খাতে বিনিয়োগ প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা। এই খাত থেকে বছরে কাস্টমসের রাজস্ব আদায় হয় প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা।