নভেম্বর ২৬, ২০২৪

পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সহিংসতার ঘটনায় ৬০০ জনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা হয়েছে। সহিংসতার ঘটনার সময় পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে মিঠুন রায় (৩২) ও দীনবন্ধু রায় (৩৩) নামের দুই যুবককে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠিয়েছে।

গ্রেপ্তারকৃত মিঠুন রায় দেবীগঞ্জ উপজেলার শালডাঙ্গা ইউনিয়নের বন্দিগ্রাম এলাকার রাজকুমার রায়ের ছেলে ও দীনবন্ধু রায় দামিনীগ্রাম এলাকার দীনেশ চন্দ্র দায়ের ছেলে। তারা ভোটে নির্বাচিত হেলিকপ্টার প্রতীকের প্রার্থী মদন মোহন রায়ের কর্মী বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

জানা যায়, নির্বাচনের দিন ভোটগ্রহণ শেষে রাতে ফলাফল প্রকাশে দেরি হওয়ায় শালডাঙ্গা ইউনিয়নের দামানিগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে সহিংসতার ঘটনা ঘটে। এতে সরকারি ৩টি গাড়ি ও ৮-১০টি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়। একই সঙ্গে ভোট কক্ষের দিকে ইট-পাটকেল ছুড়ে মারা হয়েছে। এ হামলায় আহত হন নির্বাচনে দায়িত্বে থাকা মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব আবু আউয়াল, ওই কেন্দ্রের সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার কাদেরুল ইসলাম, উপ-সচিবের সহকারী জাহাঙ্গীর আলম, গাড়িচালক আবু বক্কর সিদ্দিক, আটোয়ারী থানার উপ-পরিদর্শক বুলু মিয়া, গোয়েন্দা পুলিশের কনস্টেবল আব্দুল বারী ও পোলিং অফিসার কাদেরুল ইসলামসহ অনেকে। এ ঘটনায় ওই কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার গোলাম আজম বাদী হয়ে দেবীগঞ্জ থানায় দুইজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ৫০০-৬০০ জনের বিরুদ্ধে মামলার এজাহার দাখিল করেছেন।

জানা যায়, গত মঙ্গলবার দেবীগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দামানিগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের ফলাফল ঘোষণা করার সময় চেয়ারম্যান প্রার্থী মদন মোহন রায়ের সমর্থক ও হাসনাৎ জামান চৌধুরী জর্জের সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এ উত্তেজনায় বিক্ষুব্ধ সমর্থকরা নির্বাচনে দায়িত্বরত উপসচিব আবু আউয়ালসহ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ওপর হামলা করে ও তাদের অবরুদ্ধ করে রাখে। এ সময় উপসচিবের ব্যবহৃত গাড়িটি তারা ভাঙচুর করে। পরে বিজিবি, পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অতিরিক্ত সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছলে তাদের ওপরও হামলা করে।

মামলার এজাহার ও প্রত্যক্ষদর্শীদের মাধ্যমে জানা যায়, নির্বাচনের দিন সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ চলে। ভোটগ্রহণ শেষে বিকেল ৫টা থেকেই ভোট কক্ষে ভোট গণনা চলাকালীন বাইরে উত্তেজনা শুরু হয়। ফলাফলে যেন কোনো ত্রুটি না হয় সেজন্য একাধিকবার ভোট গণনা করা হয়। সন্ধ্যা সাড়ে ৬-৭টার দিকে ফল ঘোষণা করা হলে তাতে দেরি হওয়ায় হেলিকপ্টার প্রতীকের কর্মী-সমর্থকরা ক্ষীপ্ত হয়ে পড়েন।

তাদের দাবি, এ কেন্দ্রে চেয়ারম্যান প্রার্থী হেলিকপ্টার প্রতীক আরও বেশি ভোট পাওয়ার কথা ছিল। কেন্দ্রটিতে বেশি ভোট পেয়েছে হেলিকপ্টার প্রতীকও। ফলাফল ঘোষণার পূর্বে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে ফল ঘোষণা করা হবে বলে বাইরে প্রচার করা হয়। যা পরিস্থিতিকে আরও উত্তপ্ত করে তোলা হয়। ভোট কক্ষের দিকে কর্মী-সমর্থকরা ইটপাটকেল ছুড়তে থাকেন। বাইরে থাকা সরকারি গাড়ি ও মোটরসাইকেলে ভাঙচুর করা হয়।

নির্বাচনে ফলাফল অনুযায়ী, দেবীগঞ্জ উপজেলায় ৩৪ হাজার ৭৪২ ভোট পেয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন হেলিকপ্টার প্রতীকের প্রার্থী মদন মোহন রায়। তিনি শালডাঙ্গা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাবেক সভাপতি। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হাসনাৎ জামান চৌধুরী (জর্জ)। তিনি আনারস প্রতীকে পেয়েছেন ২৯ হাজার ৭০৩ ভোট।

পঞ্চগড়ের পুলিশ সুপার এস.এম. সিরাজুল হুদা বলেন, ভিডিও ফুটেজ, বিভিন্ন তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্তদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এই ঘটনায় নিরপরাধ কাউকে হয়রানি করা হবে না বলেও পুলিশ সুপার নিশ্চিত করেন।

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন...