বাংলাদেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি পদে বসতে যাচ্ছেন মো. সাহাবুদ্দিন। সোমবার নতুন রাষ্ট্রপতিকে স্বাগত এবং বর্তমান রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদকে বিদায় জানাতে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে বঙ্গভবন। জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী নতুন রাষ্ট্রপতিকে শপথ বাক্য পাঠ করাবেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রিপরিষদের সদস্যসহ সহস্রাধিক অতিথি অংশ নেবেন।
চলতি বছরের গত ১৩ ফেব্রুয়ারি মো. সাহাবুদ্দিনকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত করার প্রজ্ঞাপন জারি করে নির্বাচন কমিশন।
জানা গেছে, সোমবার (২৪ এপ্রিল) বেলা ১১টায় শপথ নেবেন নবনির্বাচিত এ রাষ্ট্রপতি। তার শপথ নেওয়ার পর আনুষ্ঠানিক বিদায় জানানো হবে পরপর দুই মেয়াদে ১০ বছর শেষ করে ইতিহাস সৃষ্টিকারী মো. আবদুল হামিদকে। দুপুর সাড়ে ১২টায় শুরু হবে তার বিদায় অনুষ্ঠান। এই প্রথম কোনো রাষ্ট্রপতিকে এত বড় আয়োজনে বিদায় দেওয়া হচ্ছে। ঐতিহাসিক এই সময়টিকে স্মরণীয় করে রাখতে বিদায়ী সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত হবে। নতুন রাষ্ট্রপতিকে স্বাগত এবং বিদায়ি রাষ্ট্রপতিকে বিদায় জানাতে প্রস্তুত বঙ্গভবন।
এদিকে নতুন রাষ্ট্রপতির শপথ অনুষ্ঠানকে সফল করতে পাঁচটি উপ-কমিটি গঠন করা হয়েছে। গত ৬ মার্চ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব (সমন্বয় ও সংস্কার) মাহমুদুল হাসান খানের নেতৃত্বে সমন্বয় কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটির মূল কাজ শপথ অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে গঠিত বাকি চারটি উপ-কমিটির কার্যক্রম সমন্বয় এবং মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে সার্বিক চিত্র অবহিত করা। অন্য কমিটিগুলো হলো অতিথি তালিকা প্রণয়ন কমিটি, আমন্ত্রণপত্র প্রাপ্তি যাচাই কমিটি, আসন ব্যবস্থাপনা কমিটি ও অভ্যর্থনা কমিটি।
শপথ অনুষ্ঠানে অংশ নিতে ১ হাজার ২৩৮ জনকে আমন্ত্রণপত্র দেওয়া হয়েছে। রাষ্ট্রপতির শপথ অনুষ্ঠান বঙ্গভবনে হয়ে থাকে। রুলস অব বিজনেস অনুযায়ী, শপথ অনুষ্ঠান আয়োজনের দায়িত্ব মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এবং রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের আপন বিভাগের। অতিথিদের দাওয়াত দেওয়া থেকে শুরু করে প্রটোকলসংক্রান্ত সার্বিক দায়িত্ব দেখভাল করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। বঙ্গভবনকেন্দ্রিক অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থাপনা ও আপ্যায়নের নেতৃত্ব দেয় আপন বিভাগ। রাষ্ট্রপতিকে শপথ বাক্য পাঠ করান স্পিকার। প্রস্তুতির প্রাথমিক কাজ সম্পন্ন হলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে মহড়ার আয়োজন করে চূড়ান্ত প্রস্তুতি সম্পন্ন করে। শপথ অনুষ্ঠান পরিচালনা করবেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব। শপথ গ্রহণের পরপরই কার্যভার গ্রহণসংক্রান্ত দুটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে।নতুন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন শপথ নেওয়ার পর আনুষ্ঠানিক বিদায় জানানো হবে মো. আবদুল হামিদকে। পরপর দুই মেয়াদে ১০ বছর শেষ করে ইতিহাস সৃষ্টি করে বঙ্গভবন ত্যাগ করছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। রোববার (২৩ এপ্রিল) রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের শেষ কার্যদিবস।
বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবন কাটিয়ে আসা কিশোরগঞ্জের মিঠামইন উপজেলার কামালপুর গ্রামের সন্তান মো. আবদুল হামিদ প্রথম দফায় ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল দেশের ২০তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেন। এরপর ২০১৮ সালে দ্বিতীয়বার ২১ তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। এর আগে তিনি সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রয়াত মো. জিল্লুর রহমান বিদেশে চিকিৎসাধীন থাকার সময় জাতীয় সংসদের স্পিকার হিসেবে কিছুদিন ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি এবং জিল্লুর রহমানের মৃত্যুর পর বেশ কিছুদিন অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির দায়িত্বও পালন করেন।
১৯৭০ সালে ময়মনসিংহ-১৮ আসন থেকে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সর্বকনিষ্ঠ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন বর্তমান রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ। এরপর আর তাকে পেছনে তাকাতে হয়নি। কিশোরগঞ্জের হাওর এলাকা থেকে সাতবার আওয়ামী লীগের হয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন তিনি।
এদিকে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের বিদায় অনুষ্ঠান ঘিরে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। রাজকীয় বিদায়ের জন্য প্রায় সব প্রস্তুতি শেষ। বঙ্গভবনের ক্রেডেনশিয়াল গ্রাউন্ডে বিদায়ী গার্ড অব অনার প্রদানের মধ্য দিয়ে মূল অনুষ্ঠান শুরু হবে। ক্রেডেনশিয়াল গ্রাউন্ডে গার্ড অব অনার এবং প্রধান ফটকে স্যালুট গার্ড প্রদান করবে প্রেসিডেন্সিয়াল গার্ড রেজিমেন্ট। অন্যদিকে অনুষ্ঠানের অংশ হিসাবে সাবেক রাষ্ট্রপতিকে বহন করবে সুন্দর সাজানো গাড়ি। বঙ্গভবনের সব কর্মকর্তা দুই দলে ভাগ হয়ে গাড়ির সামনে দড়ি ধরে দাঁড়াবেন। তারপর গাড়ি সামনে অগ্রসর হবে। বঙ্গভবনে দীর্ঘ অবস্থানের সমাপ্তি শেষে আবদুল হামিদ বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনীর (এসএসএফ) তত্ত্বাবধানে রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের প্রধান ফটক থেকে একটি ভিভিআইপি মোটর শোভাযাত্রায় নিকুঞ্জ এলাকায় তার নতুন বাসভবনের উদ্দেশে রওয়ানা হবেন।