আসন্ন ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের জন্য বরাদ্দ কিছুটা বাড়ানোর প্রস্তাব রাখা হয়েছে। এ বাজেটে মন্ত্রণালয়টির জন্য ১১ হাজার ৩ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী। যা চলতি অর্থবছরে ছিল ১০ হাজার ১১৮ কোটি টাকা।
বৃহস্পতিবার (৬ জুন) জাতীয় সংসদে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাবকালে অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী জানান বড় দুর্যোগে সার্বিক সমন্বয়ের জন্য জাতীয় দুর্যোগ সমন্বয় কেন্দ্র স্থাপনের কার্যক্রম নেয়া হয়েছে। পাশাপাশি দুর্যোগের ক্ষেত্রে সঠিক অর্থায়ন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে দুর্যোগ ঝুঁকি অর্থায়ন নীতিমালা প্রণয়নে কাজ করছে সরকার।
অর্থমন্ত্রী বলেন, প্রায় প্রতিবছর বন্যা, ঘূর্ণিঝড়সহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করে আমাদের জনগণ। এসব বিপর্যয়ের সঙ্গে খাপ খাইয়ে উন্নয়নের ধারা সচল রাখার একটি সহজাত সক্ষমতা অর্জন করেছে। তাদের দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস এবং এটি মোকাবেলার সক্ষমতা আরো বৃদ্ধির লক্ষ্যে সরকার প্রয়োজনীয় নীতি প্রণয়ন এবং কার্যক্রম গ্রহণ করছে। দুর্যোগে প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতি উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস করতে সক্ষম হওয়ায় বাংলাদেশ এখন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার রোল মডেল হিসেবে বিশ্বে স্বীকৃত। অতি সম্প্রতি আমরা রেমাল ঘূর্ণিঝড়কে দক্ষতার সঙ্গে মোকাবেলা করতে সক্ষম হয়েছি।
তিনি আরো বলেন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইন, ২০১২ এর আলোকে জাতীয় স্বেচ্ছাসেবা নীতিমালা-২০২৩ প্রণয়ন করা হয়েছে। এরই মধ্যে ৭৭ হাজার ২০০ জনকে ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির (সিপিপি) স্বেচ্ছাসেবককে প্রশিক্ষণ ও উদ্ধার সরঞ্জাম দেয়া হয়েছে এবং তাদের ডাটাবেজ তৈরি করা হয়েছে। তৃণমূল পর্যায়ে কার্যকর ও দ্রুত সবার সমন্বয়ে পূর্ব সতর্কীকরণ ও দুর্যোগ সম্পর্কিত তথ্য সবাইকে জানানোর জন্য জাতীয় দুর্যোগ সাড়াদান সমন্বয় কেন্দ্র (এনডিআরসিসি) স্থাপন করা হয়েছে। আইভিআর প্রযুক্তির মাধ্যমে মোবাইল ফোনে টোল ফ্রি ১০৯০ নম্বরে ডায়াল করে দুর্যোগের পূর্বাভাস ও আবহাওয়া বার্তা জানানোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। বড় ধরনের দুর্যোগে সার্বিক সমন্বয়ের জন্য জাতীয় দুর্যোগ সমন্বয় কেন্দ্র স্থাপনের কার্যক্রম নেওয়া হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী বলেন, দুর্যোগ ঝুঁকি নিরূপণ এবং ঝুঁকি হ্রাসে স্থানীয় কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন এবং ব্যবহারিক গাইড তৈরি করা হয়েছে। ভূমিকম্প ঝুঁকি মানচিত্র এরই মধ্যে প্রকাশিত হয়েছে এবং সম্ভাব্য ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতি কমানোর লক্ষ্যে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেট সিটি করপোরেশন এলাকার ওয়ার্ড পর্যায়ের কন্টিনজেন্সি প্ল্যান প্রস্তুত করা হয়েছে। ঝুঁকি হ্রাসকে উন্নয়নের মূল ধারার সঙ্গে সম্পৃক্ত করার লক্ষ্যে ১২টি মন্ত্রণালয়ের ১৬টি বিভাগ ও অধিদফতরের সঙ্গে যৌথ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। ওই ১২টি মন্ত্রণালয়কে তাদের পরিকল্পনা ও বাজেট প্রণয়ন প্রক্রিয়ায় দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস নীতি অন্তর্ভুক্ত করতে সহায়তা করা হয়েছে। সরকার দুর্যোগ ঝুঁকি অর্থায়ন নীতিমালা প্রণয়নে কাজ করছে।
২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার বাজেট পেশ করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। তিনি দেশের ১৮তম অর্থমন্ত্রী। আবুল হাসান মাহমুদ আলী অর্থমন্ত্রী হিসেবে এবারই প্রথম বাজেট পেশ করলেন। এটি দেশের ৫৩তম বাজেট।
আসছে অর্থবছরের বাজেটের আকার বাড়লেও ঘাটতির পরিমাণ কমছে। চলতি অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের তুলনায় আগামী অর্থবছরের বাজেটে ঘাটতি কম ধরা হচ্ছে ৫ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। অনুদান ছাড়া বাজেট ঘাটতি ধরা হচ্ছে ২ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা। তবে অনুদানসহ সামগ্রিক ঘাটতি দাঁড়াবে ২ লাখ ৫১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। অর্থাৎ আগামী অর্থবছর ৪ হাজার ৪০০ কোটি টাকা অনুদান পাওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে।
ঘাটতি মেটাতে বৈদেশিক ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে ১ লাখ ২৭ হাজার ২০০ কোটি টাকা। বৈদেশি ঋণ পরিশোধ করা হবে ৩৬ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এতে নিট বৈদেশিক ঋণ দাঁড়াবে ৯০ হাজার ৭০০ কোটি টাকা।
অভ্যন্তরীণ ঋণ নেওয়া হবে ১ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে নেওয়া হবে ১ লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ কোটি, যার ৭২ হাজার ৬৮২ কোটি টাকা দীর্ঘমেয়াদি ঋণ এবং ৬৪ হাজার ৮১৮ কোটি টাকা স্বল্পমেয়াদি। ব্যাংকবহির্ভূত ঋণ নেওয়া হবে ২৩ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। সঞ্চয়পত্র বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে ১৫ হাজার ৪০০ কোটি টাকা।