নভেম্বর ১৬, ২০২৪

বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ মন্তব্য করেছেন, আর্থিক খাত অর্থনীতির জন্য সবচেয়ে সংবেদনশীল খাত। অথচ এ খাত সবচেয়ে অরক্ষিত অবস্থায় আছে। অনিয়ম, দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার কারণে ব্যাংক খাত চরম ঝুঁকিতে পড়েছে। ব্যাংক খাত এখন অরক্ষিত।

আজ সোমবার (১০ জুন) রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে ‘অর্থনীতির চালচিত্র ও প্রস্তাবিত বাজেট ২০২৪–২৫’ শীর্ষক এক আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এ মন্তব্য করেন। সম্পাদক পরিষদ ও সংবাদপত্র মালিকদের সংগঠন নিউজ পেপার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (নোয়াব) যৌথভাবে এ আলোচনার সভার আয়োজন করে।

সভায় সভাপতিত্ব করেন সম্পাদক পরিষদের সভাপতি ও দ্যা ডেইলি স্টরের সম্পাদক মাহফুজ আনাম।

তিনি বলেন, আর্থিক খাত অর্থনীতির জন্য সবচেয়ে সংবেদনশীল খাত। অথচ এ খাত সবচেয়ে অরক্ষিত অবস্থায় আছে। অনিয়ম, দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার কারণে ব্যাংক খাত চরম ঝুঁকিতে পড়েছে। ব্যাংক খাত এখন অরক্ষিত। বিভিন্ন অনুগত স্বার্থগোষ্ঠীকে ব্যাংক থেকে অন্যায় সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়েছে, যার সঙ্গে ক্ষমতার রাজনীতি সম্পৃক্ত। এ ধরনের পরিস্থিতিতে অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা ভেঙে পড়ে, বিনিয়োগের পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং সৎ উদ্যোক্তারা নিরুৎসাহিত হন। সুতরাং পরিস্থিতির উত্তরণ ঘটাতে হলে আর্থিক খাতসহ কিছু সংবেদনশীল খাতকে ক্ষমতার রাজনীতি থেকে দূরে রাখতে হবে।

তিনি বলেন, প্রশাসনের সর্বস্তরে অনিয়ম, দুর্নীতির কারণে সরকারি ব্যয়ে প্রচুর অপচয় হয়েছে। অর্থনীতিতে আস্থার পরিবেশ তৈরি হয়নি। অবাধে কালো টাকার সঞ্চালন ও পুঁজিপাচার হচ্ছে। দেশ একটি নৈতিকতাহীন অর্থনৈতিক ব্যবস্থার মধ্যে ঢুকে পড়েছে। এবারের বাজেটে স্মার্ট বাংলাদেশের কথা বলা হয়েছে। তবে স্মার্ট মানুষ যদি নীতিহীন হয় তা আরও ভয়ঙ্কর হতে পারে।

তিনি বলেন, সময়মতো সঠিক পদক্ষেপের অভাবে মূল্যস্ফীতি আমাদের ওপর গেড়ে বসেছে। ঠিক সময়ে বিশ্বাসযোগ্য নীতি নেওয়া হয়নি। দীর্ঘদিন থেকে ভুল নীতির কারণে মৌলিক অনেকগুলো দুর্বলতা সামনে এসেছে। সঠিক নীতির অভাবে অর্থপাচার, খেলাপি ঋণ বৃদ্ধি, রিজার্ভের ধারাবাহিক পতন, রাজস্ব আয় হ্রাস, কালো টাকা তৈরি হচ্ছে। মৌলিক নীতিগত পরিবর্তন না আনলে এসব সমস্যা থেকে উত্তরণ সম্ভব নয়।

তিনি আরও বলেন, বাজেট ঘাটতি পূরণ করতে আমরা দেশ এবং বিদেশ থেকে উচ্চ সুদে একের পর এক ঋণ নিয়েই চলেছি। ঋণ নির্ভরতা কমাতে সরকারের কোনো পদক্ষেপ আছে নাকি গা ছাড়া বাজেট প্রস্তাব করা হয়েছে তা বিবেচনা করা দরকার। ঋণের উপর নির্ভর করে এভাবে অর্থনীতি চলতে থাকলে একসময় দেউলিয়া না হলেও বাস্তবায়ন অসম্ভব হয়ে পড়বে। এই মুহূর্তে আমাদের অর্থনীতির সবগুলো সূচক খারাপ। যতদিন সূচকগুলো ভালো ছিল মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ছিল রেমিট্যান্স ভালো ছিল রিজার্ভের অবস্থাও ভালো ছিল। তখন অর্থনৈতিক ত্রুটি হজম করার শক্তিও ছিল।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পিপিআরসির নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. হোসেন জিল্লুর রহমান, পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর, সাবেক অর্থসচিব ও সাবেক কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল (সিএজি) মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী ও বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন। স্বাগত বক্তব্য দেন নোয়াবের সভাপতি এ. কে. আজাদ এমপি। সমাপনী বক্তব্য দেন সম্পাদক পরিষদের সভাপতি মাহফুজ আনাম। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সম্পাদক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও বণিক বার্তার সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ।

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন...