মার্চ ২৯, ২০২৪

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ থাইল্যান্ডে বায়ু দূষণ চরম আকার ধারণ করেছে। দেশটিতে বায়ু দূষণ এতোটাই প্রকট আকার নিয়েছে যে, গত সপ্তাহে থাইল্যান্ডে প্রায় ২ লাখ লোককে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছে। এছাড়া রাজধানী ব্যাংককও কার্যত ক্ষতিকারক কুয়াশায় আচ্ছন্ন হয়ে আছে।

শনিবার (১১ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা এএফপি। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত সপ্তাহে বায়ু দূষণের কারণে থাইল্যান্ডে প্রায় ২ লাখ লোক হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন বলে দেশটির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

এএফপি বলছে, থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংকক মোটামুটি ১ কোটি ১০ লাখ মানুষের আবাসস্থল এবং বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্য। কিন্তু গত কিছুদিন ধরে যানবাহনের ধোঁয়া, শিল্প-কারখানা থেকে নির্গত ধোঁয়া এবং খড়সহ কৃষি-ভিত্তিক নানা জিনিস পোড়ানোর জেরে সৃষ্ট ধোঁয়ার অপ্রীতিকর হলুদ-ধূসর বায়ুতে শহরটি আচ্ছন্ন রয়েছে।

থাইল্যান্ডের জনস্বাস্থ্য বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মতে, বায়ু দূষণের ফলে বছরের শুরু থেকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এই দেশটিতে ১৩ লাখেরও বেশি মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। আর মধ্যে প্রায় ২ লাখ মানুষ শুধুমাত্র গত সপ্তাহে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।

থাই জনস্বাস্থ্য বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের চিকিৎসক ক্রিয়াংক্রাই নামথাইসোং গত বুধবার শিশু ও গর্ভবতী নারীদের ঘরে থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। সেসময় তিনি জানান, যারাই ঘরের বাইরে যাবেন তাদের উচিত দূষণ বিরোধী উচ্চ মানের এন৯৫ মাস্ক পরা।

এর আগে চলতি বছরের জানুয়ারির শেষের দিকে এবং ফেব্রুয়ারির শুরুতে ব্যাংককে বায়ু দূষণ চরমে পৌঁছায়। পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে সেসময় শহর কর্তৃপক্ষ লোকেদের বাড়ি থেকে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছিল।

এএফপি বলছে, গত বছর শহরের পরিবেশ উন্নত করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ব্যাংককের গভর্নর নির্বাচিত হয়েছিলেন চ্যাডচার্ট সিট্টিপুন্ট। তবে শহরের বায়ু পরিস্থিতির খুব বেশি উন্নতি হয়নি এবং গভর্নর সিট্টিপুন্টের একজন মুখপাত্র বলেছেন, চলমান পরিস্থিতির আরও অবনতি হলে তারা আবারও অনুরূপ আরেকটি আদেশ জারি করতে দ্বিধা করবেন না।

একভারুন্যু আম্রপালা নামের ওই মুখপাত্র এএফপিকে বলেছেন, শহরের পরিচালিত নার্সারি স্কুলগুলোতে ছোট বাচ্চাদের সুরক্ষার জন্য এয়ার পিউরিফায়ারসহ বিশেষ ‘নো ডাস্ট রুম’ স্থাপন করা হয়েছে। এর পাশাপাশি যানবাহন থেকে নির্গত ধোঁয়া নিরীক্ষণের জন্য চেকপয়েন্ট স্থাপন করা হয়েছে।

থাইল্যান্ডের জনস্বাস্থ্য বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের বলেছে, গত বুধবার ব্যাংককের ৫০টি জেলায় সবচেয়ে বিপজ্জনক পিএম-২.৫ কণার অনিরাপদ মাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। এই কণা এতো ছোট যে সেগুলো রক্তপ্রবাহে প্রবেশ করতে পারে।

এদিকে থাই সরকারের দূষণ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের তথ্য অনুসারে, গত তিন দিন ধরে ব্যাংককের বেশিরভাগ এলাকায় পিএম-২.৫ এর মাত্রা নিরাপদ সীমার ওপরে রয়েছে। এছাড়া থাইল্যান্ডের উত্তরাঞ্চলীয় শহর চিয়াং মাইতে পরিস্থিতি আরও খারাপ। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কৃষিনির্ভর এই অঞ্চলে কৃষকরা বছরের এই সময়ে ফসলের খড় আগুনে পুড়িয়ে থাকেন।

উল্লেখ্য, বস্তুকণা পিএম-২.৫ হলো বাতাসে থাকা সব ধরনের কঠিন এবং তরল কণার সমষ্টি, যার বেশিরভাগই বিপজ্জনক। মানব স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক বিভিন্ন ধরনের রোগ যেমন— প্রাণঘাতী ক্যান্সার এবং হৃদযন্ত্রের সমস্যা তৈরি করে পিএম-২.৫।

এছাড়া বায়ু দূষণকারী এনও২ প্রধানত পুরোনো যানবাহন, বিদ্যুৎ কেন্দ্র, শিল্প স্থাপনা, আবাসিক এলাকায় রান্না, তাপদাহ এবং জ্বালানি পোড়ানোর কারণে তৈরি হয়।

২০২১ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) তার বায়ুমান নির্দেশক গাইডলাইন পরিবর্তনের পর জানায়, পিএম-২.৫ নামে পরিচিত ছোট এবং বিপজ্জনক বায়ুকণার গড় বার্ষিক ঘনত্ব প্রতি ঘনমিটারে ৫ মাইক্রোগ্রামের বেশি হওয়া উচিত নয়। তবে এরচেয়েও কম ঘনত্ব উল্লেখযোগ্য স্বাস্থ্য ঝুঁকির কারণ হতে পারে।

ডব্লিউএইচও’র মতে, বায়ু দূষণে বিশ্বব্যাপী প্রতি বছর আনুমানিক ৭০ লাখ মানুষ প্রাণ হারান। মূলত স্ট্রোক, হৃদরোগ, দীর্ঘস্থায়ী পালমোনারি রোগ, ফুসফুসের ক্যান্সার এবং তীব্র শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণের কারণে মৃত্যুহার বৃদ্ধি পায়।

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *