স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ ভূমিকম্পের কবলে পড়ার পর তুরস্কের একটি বিশাল অংশ কার্যত বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। আর এর মধ্যেই সেখানে দেখা দিয়েছে বন্যা। আকস্মিক এই বন্যায় এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ১৪ জনের প্রাণহানি হয়েছে।
ভূমিকম্পে বাড়ি-ঘর হারিয়ে এসব মানুষ তাঁবু এবং কন্টেইনারে বসবাস করছিলেন। বুধবার (১৫ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা এএফপি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আকস্মিক বন্যায় বুধবার তুরস্কের ভূমিকম্প-বিধ্বস্ত অঞ্চলজুড়ে তাঁবু ও কন্টেইনার আবাসনে বসবাসকারী কমপক্ষে ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর ফলে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের আগে তুরস্কের বর্তমান প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের ওপর আরও চাপ সৃষ্টি হলো বলে মনে করা হচ্ছে।
এদিকে বন্যায় প্রাণহানির তথ্য নিশ্চিত করে তুর্কি কর্মকর্তারা বলেছেন, গত মাসের ৭.৮ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার রাস্তাগুলো কার্যত কর্দমাক্ত নদীতে পরিণত হয়েছে এবং এতে করে বন্যার পানির স্রোতে আরও অনেক লোক ভেসে গেছেন।
গত ৬ ফেব্রুয়ারি ৭ দশমিক ৮ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে তুরস্কের দক্ষিণাঞ্চল ও উত্তর-পশ্চিম সিরিয়া। এতে এখন পর্যন্ত প্রায় ৫৪ হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে কেবল তুরস্কেই প্রাণ হারিয়েছেন ৪৮ হাজারের বেশি মানুষ। অন্যদিকে সিরিয়ায় প্রাণহানির সংখ্যা প্রায় ৬ হাজার।
এএফপি বলছে, ভয়াবহ ওই ভূমিকম্পের পর তুরস্কের দক্ষিণ-পূর্বে ১১টি প্রদেশজুড়ে বিপর্যস্ত অঞ্চলগুলোতে ভূমিকম্প থেকে বেঁচে যাওয়া কয়েক হাজার তুর্কি নাগরিককে তাঁবু এবং কন্টেইনার হোমে স্থানান্তরিত করা হয়। মঙ্গলবার এই এলাকায় মুষলধারে বৃষ্টিপাত হয় এবং আবহাওয়া পরিষেবা বুধবার রাত পর্যন্ত তা স্থায়ী হবে বলে জানিয়েছিল।
তুর্কি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সিরিয়ার সীমান্ত থেকে প্রায় ৩০ মাইল (৫০ কিলোমিটার) উত্তরে সানলিউরফায় বন্যায় ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া এক বছর বয়সী এক শিশুসহ আরও দু’জন লোক কাছাকাছি আদিয়ামানে মারা গেছে। এছাড়া সেখানে আরও পাঁচজন নিখোঁজ রয়েছেন।
এদিকে তুরস্কের ভূমিকম্প-বিধ্বস্ত অঞ্চলে বন্যার কিছু ছবি অনলাইনে ছড়িয়ে পড়েছে। এসব ছবিতে বন্যার পানিতে বহু গাড়িকে ভেসে যেতে এবং ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্তদের বসবাসের জন্য স্থাপন করা অস্থায়ী আবাসন প্লাবিত হতে দেখা যায়।
অন্যদিকে ভাইরাল এক ভিডিওতে বেইজ স্যুট এবং টাই পরা একজন ব্যক্তিকে ক্রমবর্ধমান স্রোতে ভেসে যাওয়ার সময় সাহায্যের আবেদন করতে দেখা গেছে। তবে তার ভাগ্যে ঠিক কী ঘটেছে তা এখনও অজানা।
এছাড়া অন্যান্য ছবিতে ডাল এবং দড়ি দিয়ে বন্যার্তদের পানি থেকে টেনে তুলতে দেখা যায় লোকেদের।
সানলিউরফা গভর্নরের কার্যালয় জানিয়েছে, সর্বশেষ এই বন্যা ওই অঞ্চলের একটি প্রধান হাসপাতালের নিচতলায় পর্যন্ত পৌঁছে গেছে।