বিজ রিপোর্ট
তথ্য-প্রযুক্তির বর্তমান সময়ে সিএমএসএমই স্টার্টআপ খাতের প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে। তবে দক্ষ মানবসম্পদ ও আধুনিক যন্ত্রপাতির অভাব, দুর্বল সাপ্লাইচেইন অবকাঠামো, ইনোভেটিভ চিন্তা-চেতনা এবং আর্থিক সহায়তার অনিশ্চিয়তার কারণে আমরা এ খাতে থেকে কাঙ্ক্ষিত সাফল্য প্রাপ্তিতে বঞ্চিত হচ্ছি।
শনিবার (২৯ অক্টোবর) ঢাকা চেম্বার আয়োজিত ‘সিএমএসএমই স্টার্টআপদের সফলতার পথে প্রতিবন্ধকতা ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক সেমিনারে ডিসিসিআই সভাপতি রিজওয়ান রাহমান এসব কথা বলেন।
রাজধানীর মতিঝিল ডিসিসিআই অডিটোরিয়ামে সেমিনারটি অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেমিনারে তথ্য ও প্রযুক্তি বিভাগের সিনিয়র সচিব এন এম জিয়াউল আলম প্রধান অতিথি এবং বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের কমিশনার ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
তিনি বলেন, সিএমএসএমইরাই আমাদের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি। দেশের জিডিপিতে এ খাতের অবদান ৩০ শতাংশ। দেশের মোট কর্মসংস্থানের প্রায় ৪০ শতাংশ মানুষ এ খাতের সাথে জড়িত।
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে আমাদের স্টার্টআপের সংখ্যা প্রায় ১২০০ এবং প্রতিবছর প্রায় ২০০ স্টার্টআপ এ খাতের সাথে যুক্ত হচ্ছে।
তথ্য ও প্রযুক্তি বিভাগের সিনিয়র সচিব এন এম জিয়াউল আলম বলেন, ১৭টি স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠানকে সরকারের স্টার্টআপ বাংলাদেশ লিমিটেড থেকে প্রণোদনা সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। এটুআই (ইন্সপায়ার টু ইনোভেশন) প্রকল্পের ‘চ্যালেঞ্জ ফান্ড’ এর মাধ্যমে যেসব স্টার্টআপ উদ্যোক্তারা কার্যক্রম পরিচালনায় নানাবিধ চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে, তাদের প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, সরকার প্রতিটি জেলায় ‘শেখ কামাল আইটি অ্যান্ড ইনোভেশন সেন্টার’ স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। যার মাধ্যমে স্টার্টআপ উদ্যোক্তাদের প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করা হবে। এছাড়াও ‘হাই-টেক পার্ক’গুলোতে স্টার্টআপ এবং ফ্রিল্যান্সারদের জন্য বিনামূল্য অফিস ও জায়গা বরাদ্দের পাশাপাশি প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও আর্থিক সহায়তার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, দেশের ফিনটেক খাতের উদ্যোক্তাদের জন্য সরকার ‘বিনিময়’ নামে পেমেন্ট গেটওয়ের জন্য একটি প্লাটফর্ম স্থাপনের কাজ চূড়ান্ত করেছে। যা এখাতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করবে এবং বৃদ্ধি পাবে দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগ।
তিনি জানান, বর্তমান সরকার ‘ডাটা প্রটেকশন অ্যাক্ট’- এর খসড়া চূড়ান্তকরণের পথে রয়েছে। যেটি বাস্তবায়ন হলে বহির্বিশ্বে তথ্য-প্রযুক্তি খাতে আমাদের অবস্থানের আরও উন্নয়ন ঘটবে।
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের কমিশনার ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, নতুন শিল্পনীতিতে সিএমএসএমই খাতের সংজ্ঞায়ন সুনিদিষ্টকরণ করা হয়েছে। যেটি এখাতের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
তিনি জানান, বাংলাদেশ সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন ইতোমধ্যে ‘এসএমই বোর্ড’ গঠন করেছে। যদিও এখাতের উদ্যোক্তাদের সেখানে প্রতিনিধিত্ব তেমন আশানুরূপ নয়। এমতাবস্থায় ক্ষুদ্র ও মাঝারী উদ্যোক্তাদের বেশি হারে এই বোর্ডে অন্তর্ভুক্তির আহ্বান জানান তিনি। সেই সাথে দেশের বৃহৎ প্রতিষ্ঠানগুলোর সহায়তায় একটি ‘এসএমই বন্ড’ প্রবর্তনেরও প্রস্তাব করেন তিনি।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পাঠাও এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফাহিম আহমেদ। তিনি বলেন, ২০২১ সালে বাংলাদেশে স্টার্টআপ খাতে বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ৪১ কোটি ৫০ লাখ মার্কিন ডলার। যেখানে বিদেশি বিনিয়োগ ছিল ৪১ কোটি ২০ লাখ ডলার। এই বিনিয়োগের ফলে দেশে প্রায় ১৫ লাখ লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়েছে।
তিনি বলেন, এখাতের উদ্যোক্তারা প্রয়োজনীয় নীতি সহায়তা ও রেগুলেটরি ফ্রেমওয়ার্কের অনুপস্থিতি, আর্থিক সহায়তার ঘাটতি, দক্ষ মানবসম্পদ এবং আন্তর্জাতিক বাজারের সাথে যোগাযোগ স্থাপনের প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হয়ে থাকেন।
তিনি স্টার্টআপ খাতের উদ্যোক্তাদের বিদ্যমান সমস্যা সমাধানে ‘স্টার্টআপ পলিসি’ প্রণয়ন শিক্ষা ও শিল্পখাতের সমন্বয় বৃদ্ধি, সরকারি সেবা ও সহযোগিতা প্রাপ্তি আরও তরান্বিত করার পাশাপাশি আর্থিক সহায়তা প্রাপ্তি নিশ্চিতকরণের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।