ঢাকা শহরে অনিবন্ধিত, অবৈধ রিকশা আর চলতে দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস।
ধাপে ধাপে এসব অনিবন্ধিত, অবৈধ রিকশা সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী বন্ধ করা হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
বুধবার (২ অগাস্ট) সকালে ধানমন্ডি ২/এ এলাকায় রিকশা স্ট্যান্ডের জন্য নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন শেষে গণমাধ্যমের সাথে মতবিনিময়কালে তিনি এ কথা বলেন।
মেয়র বলেন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় নিবন্ধিত রিকশা ছাড়া আমরা অন্যান্য সব রিকশাকে অবৈধ ঘোষণা করেছি। সুতরাং অবৈধ রিকশা-ব্যাটারিচালিত হোক কিংবা অনিবন্ধনকৃত পায়ে চালিত রিকশা হোক-এগুলো ঢাকা শহরে চলতে পারবে না। এই কার্যক্রম একদিনে করা সম্ভব নয়। ধাপে ধাপে কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী আমরা এটি বাস্তবায়ন করব। রিকশা মালিক সমিতিও রাজি হয়েছে যে, নিবন্ধিত রিকশা ছাড়া ঢাকা শহরে তারা আর কোনো রিকশা পরিচালনা করবেন না।
রিকশা মালিক সমিতিই নিবন্ধিত রিকশা ছাড়া অন্যান্য রিকশা পরিচালনা বন্ধ করবে জানিয়ে তিনি বলেন, এরই মাঝে আমরা রিকশা নিবন্ধন করেছি। আমরা আরও রিকশা নিবন্ধন করব। আমরা চাইব, ঢাকা শহরে শুধু বৈধ নিবন্ধনকৃত রিকশায় পরিচালিত হবে। সেজন্য আমরা রিকশা মালিক সমিতির সাথে বসেছি। আজও ওনারা উপস্থিত আছেন। তারাও রাজি হয়েছেন, এখন হতে নির্ধারিত স্থান থেকেই তারা রিকশা সেবা পরিচালনা করবেন। তারই পরিপ্রেক্ষিতে সড়ক নম্বর-২ এর ভেতরে ১০টি রিকশা রাখার স্থান আমরা নির্ধারণ করে দেব। জায়গাটা রং দিয়ে, স্ট্যান্ড দিয়ে সুন্দর একটি পরিবেশ আমরা করে দেব এবং ওনারাই এটা পরিচালনা করবেন। আমরা এই দায়িত্বটা ওনাদেরকে দিচ্ছি। ওনারা এটা শৃঙ্খলাবদ্ধভাবে পরিচালনা করবেন। এছাড়াও অন্য জায়গা থেকে তখন আর রিকশা ওঠানামা হবে না। সবাই জানবে, যাত্রীরাও জানবে-কোথা থেকে আমরা উঠব, কোথায় আমরা নামব। যান চলাচল ব্যবস্থাপনাকে এভাবেই আমরা শৃঙ্খলবদ্ধভাবে নিয়ে আসব।
যান চলাচল ব্যবস্থাপনা আধুনিকায়নের অংশ হিসেবে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে জানিয়ে তাপস বলেন, আমরা মনে করি, ঢাকা শহরে রিকশা অত্যন্ত কার্যকরি এবং ফলপ্রসূ একটি বাহন। যা দিয়ে এখনো ঢাকা শহরে প্রায় ৩০ ভাগ মানুষ যাতায়াত করে। সুতরাং এই গণপরিবহনকে আমাদের শৃঙ্খলাবদ্ধ করতে হবে। যাতে করে মানুষ সেখান থেকে আরো সুফল পায়। আমরা চাই, নির্ধারিত জায়গা থেকে যাত্রীরা রিকশায় ওঠবে এবং নির্ধারিত জায়গায় আবার নেমে যাবে। সুতরাং তাদের যাতায়াতের পূর্ণ যে কার্যক্রম রয়েছে তা শৃঙ্খলার আওতায় আসবে। সেই প্রেক্ষিতে আমরা এই সাত মসজিদ সড়ক, ধানমন্ডির পশ্চিম প্রান্তের জিগাতলা, হাজারীবাগে ব্যাপক জনগোষ্ঠীর যে যাতায়াত ব্যবস্থা, সেটিকে আরও সুষ্ঠু ও শৃঙ্খলাবদ্ধ করার জন্য আমরা নির্ধারিত স্থানে রিকশা রাখার স্থান তথা স্ট্যান্ডের ব্যবস্থা করছি। সাত মসজিদ সড়কে যান চলাচলের ব্যবস্থা আধুনিকায়নের জন্য যে ব্যাপক কার্যক্রম চলছে, তারই অংশ হিসেবে আমরা এটা করেছি।
এ সময় যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মেয়র বলেন, বড় বড় বহুতল যে ভবনগুলো রয়েছে, তাদের নির্ধারিত গাড়ি পার্কিংয়ের বাইরেও তারা রাস্তার উপরে যত্রতত্র গাড়ি রাখে। যত্রতত্র পার্কিং করে। এটাও আমরা শৃঙ্খলার মধ্যে নিয়ে আসব ইনশাল্লাহ। যত্রতত্র যারা গাড়ি রাখে সেটার বিরুদ্ধেও আমরা অবশ্যই অভিযান পরিচালনা করব।
এ সময় ডেঙ্গু নিয়ে সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নের জবাবে তাপস বলেন, ডেঙ্গু প্রতিরোধে জাদুকরি কোনো সমাধান নেই। সুনির্দিষ্ট একটি কাজ করলে এডিস মশা পুরোটা বিলুপ্ত হবে, এ ধরনের কোনো সমাধান নেই। আজ পর্যন্ত এ ধরনের কোনো সমাধান সারাবিশ্বে কেউ দিতে পারেনি। সুতরাং এডিস মশার প্রজননস্থল ধ্বংসের মাধ্যমে ডেঙ্গু রোগ প্রতিরোধের যে স্বীকৃত পদ্ধতি আমাদেরকে সেটিই অনুসরণ করতে হচ্ছে। কিন্তু উৎস নিধনে সফল এবং আরও কার্যকর ও ফলপ্রসূ করতে হলে, জনসচেতনতা বাড়াতে হবে। নাগরিকেরা যদি দায়িত্বশীল না হন এবং উৎসগুলো চিহ্নিত করে না দেন, তাহলে সিটি করপোরেশন সেই জায়গায় গিয়ে এডিস মশার উৎসস্থল ধ্বংস করতে পারবে না। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে আমাদেরকে যে তথ্য প্রেরণ করা হয় এবং আমাদের নিয়ন্ত্রণ কক্ষে যারা তথ্য দেন, সে তথ্যের ভিত্তিতে আমরা নিয়মিত এডিস মশার উৎসস্থল ধ্বংস করছি।
পরে মেয়র ধানমন্ডি ৮/এ এর কেয়ারী প্লাজা এবং শংকর বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন এলাকায় রিকশা স্ট্যান্ডের জন্য নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করেন।
এ সময় অন্যান্যের মধ্যে করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো মিজানুল রহমান, সচিব আকরামুজ্জামান, প্রধান প্রকৌশলী আশিকুর রহমান, প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা রাসেল সাবরিন, প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা মো. ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. খায়রুল বাকের ও কাজী বোরহান উদ্দিন, সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর শিরিন গাফফার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।