নভেম্বর ১৬, ২০২৪

দেশে ডিজিটাল ব্যাংক চালুর উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এ লক্ষ্যে ইতিমধ্যে আবেদন গ্রহণও শুরু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর সকল কাজ হবে প্রযুক্তি নির্ভর। ব্যাংকটি আমানত গ্রহণ, ঋণ দেয়া থেকে অন্যান্য সব কাজই করবে।

ডিজিটাল ব্যাংক কি?

ডিজিটাল ব্যাংক হলো পুরোপুরি একটি প্রযুক্তি নির্ভর ব্যবস্থা। এই ব্যাংকের কোনো শাখা, উপশাখা, এটিএম বুথ বা সশরীরে লেনদেনের কোনো ব্যবস্থা থাকবে না।

ডিজিটাল ব্যাংক বলতে স্বচ্ছতার কথা মাথায় আসে। এখানে শীর্ষ পর্যায় থেকে শুরু করে গ্রাহক পর্যন্ত সব জায়গায় স্বচ্ছতা থাকতে হবে। স্বচ্ছতা নিয়ে আসতে হলে প্রযুক্তি লাগবেই।

ডিজিটাল ব্যাংক যেভাবে কাজ করবে-

প্রচলিত ব্যাংকগুলোতে এখনো টাকা লেনদেন, হিসাব দেখার মতো কিছু সেবা ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে করা যায়। কিন্তু নতুন যে ব্যাংক চালুর কথা হতে যাচ্ছে, সেখানে সকল কাজ হবে প্রযুক্তি নির্ভর। ব্যাংকটি আমানত গ্রহণ, ঋণ দেয়া থেকে অন্যান্য সকল কাজই করবে।

ডিজিটাল ব্যাংক ছোট আকারের ঋণ দিতে পারবে তবে বড় বা মাঝারি শিল্পে কোনো ঋণ দিতে পারবে না। বৈদেশিক বাণিজ্যের লেনদেনের জন্য ঋণপত্রও খুলতে পারবে না এসব ব্যাংক।

প্রযুক্তিনির্ভর সেবা হওয়ায় এসব ব্যাংকের কোনো কোনো সেবা দিন রাত ২৪ ঘণ্টাই পাওয়া যাবে।

লেনদেন হবে যেভাবে-

মোবাইল বা অ্যাপ ব্যবহার করে গ্রাহকরা এই ব্যাংকে লেনদেন করতে পারবেন। তাদের সশরীরে ব্যাংকের কোনো শাখায় যেতে হবে না। এছাড়া ব্যাংকের নিজস্ব কোনো শাখা বা উপশাখা, এটিএম, সিডিএম ইত্যাদি থাকবে না। তবে প্রধান একটি কার্যালয় থাকতে পারে।

ডিজিটাল ব্যাংকের এটিএম কার্ড বা অ্যাজেন্ট ব্যাংকিংও থাকবে না। তবে ভার্চুয়াল কার্ড, কিউআর কোড বা অন্য প্রযুক্তিনির্ভর সেবা থাকবে।

জাতীয় পরিচয়পত্রসহ নিজস্ব তথ্যাদি আপলোড করে একজন হিসাব খুলতে পারবেন। একইভাবে ঋণ নেয়ার জন্যও প্রয়োজনীয় নথিপত্র আপলোড করে ঋণের আবেদন করতে পারবেন। যারা বেতন-ভাতা বা ব্যবসার টাকা গ্রহণ করবেন, তারা অনলাইনে নিজের হিসাব নিতে পারবেন। অন্য ব্যাংকের অ্যাজেন্ট ব্যাংকিং ব্যবহার করেও টাকা জমা করা যাবে। আবার অন্যদের অ্যাকাউন্টে সরাসরি টাকা পাঠিয়ে দেয়ার পাশাপাশি অন্য ব্যাংকের এটিএম বুথ বা অ্যাজেন্টদের সেবা ব্যবহার করে নগদ অর্থ উত্তোলন করা যাবে।

গ্রাহকদের জন্য যেসব সুবিধা-

ব্যাংকে যেতে না হওয়ায় গ্রাহকদের সময় সাশ্রয় হবে। অনেক সময় সেবা নিতে গ্রাহকদের ব্যাংকে গিয়ে সিরিয়ালে বসে থাকতে হয়। কিন্তু এখানে সেটা করতে হবে না। তাদের ব্যাংকে যাতায়াতের সময়ও বাঁচবে।

ব্যাংকের শাখা খুলতে না হওয়ায় সেখানে ভাড়া-কর্মীদের পেছনে ব্যয় অনেক কমে যাবে। ফলে ব্যাংকগুলো সাশ্রয়ে কম খরচে গ্রাহকদের সেবা দিতে পারবে। এছাড়া বাংলাদেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে গ্রাহক অ্যাকাউন্ট খুলতে এবং ব্যাংকিং সেবা নিতে পারবেন। এদিকে ২৪ ঘণ্টার যেকোনো সময় এই ব্যাংকের সেবা নেয়া যাবে।

গ্রাহকদের জন্য যেসব অসুবিধা-

প্রযুক্তি ব্যবহারে অনেকের দক্ষতার অভাব রয়েছে। অনেকের কাছে প্রযুক্তি নির্ভর আধুনিক মোবাইল ফোন না থাকায় তাদের এ ধরনের ব্যাংকিংয়ের সেবা নেয়া কঠিন হয়ে পড়বে।

বিশেষ করে প্রান্তিক মানুষ, নগর জীবনের বাইরের মানুষকে এই সেবার আওতায় আনা যাবে কিনা- তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে বিশেষজ্ঞদের। তবে তারা অনেকে বলছেন, বাংলাদেশে মোবাইল ব্যাংকিং সেবার সাথে যেভাবে মানুষজন অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে, তাতে ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবার সাথেও কয়েক বছরের মধ্যেই মানুষ খাপ খাইয়ে নেবে।

এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গাইডলাইনে বলা হয়েছে, প্রচলিত সব ব্যাংকের মতো এসব ডিজিটাল ব্যাংকেও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সব বিধিবিধান, নির্দেশনা মেনে চলতে হবে। তারাও বাংলাদেশ ব্যাংকের নজরদারির মধ্যে থাকবে। এসব ব্যাংকের আমানতের একটা অংশ বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা রাখতে হবে।

আরও জানা যায়, ডিজিটাল ব্যাংকের শাখা না থাকলেও একটি প্রধান শাখা থাকবে। গ্রাহকের অভিযোগ বা অসন্তুষ্টির ব্যাপারে প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি ব্যবহার করতে হবে। গ্রাহক চাইলে প্রধান কার্যালয় বা বাংলাদেশ ব্যাংকে অভিযোগ দিতে পারবেন।

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন...