শীতকালীন হলেও ভেষজ ও পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ এ সজনের ডাঁটা এখন ফলবে সব মৌসুমে। সজনে ডাঁটা ভোজন রসিকদের বেশ পছন্দের খাবার। তাই দাম ও চাহিদাও রয়েছে বেশ। প্রথমবারের মতো বাণিজ্যিকভাবে টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী উপজেলায় শুরু হয়েছে থ্রি-স্ট্রার জাতের উচ্চ ফলনশীল বারোমাসি সজনে চাষ।
ধনবাড়ী উপজেলার মুশুদ্দি ইউনিয়নের মুশুদ্দি মধ্যপাড়া গ্রামের কৃষি উদ্যোক্তা রেজাউল করিম ওরফে আব্দুল হক বছরজুড়ে এই সজনের চাষ শুরু করছেন। এটি চাষে খরচ ও সময় কম লাগায় ৪০ শতক জমিতে সজনে বাগান করছেন তিনি। তাঁর দেখাদেখি এটি চাষে আগ্রহী হচ্ছেন অনেকেই।
মাঠ পর্যায়ে বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে উন্নত জাতের সজনের আবাদ বাড়াতে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ ও উদ্যানতত্ত্ববিদ কার্যালয়। তাঁরা আরও জানায়, বারোমাসি সজনের গাছ দ্রুত বাড়ে। চারা রোপণের সাত থেকে আট মাসেই ডাঁটা ধরে এবং সারা বছরই ডাঁটা সংগ্রহ করা যায়। লাগেনা তেমন কোনো পরিচর্যা। থ্রি-স্ট্রার এই জাতের সজনে খেতেও সু-স্বাদু। পূর্ণবয়স্ক একটি গাছে দেড় হাজারের অধিক ডাঁটা হয়। ১০ থেকে ১২টিতে কেজি। অতি সহজে চারা উৎপাদন করা যায়। বিঘা প্রতি (৩০ শতক) জমিতে ৯০-১০০টি গাছের চারা রোপণ করা যায়।
বাজারে সজনের চাহিদা ও দাম থাকায় এর চাষ শুরু করছেন বলে জানান সজনে চাষি রেজাউল। তিনি বলেন, চারা লাগানোর আট মাস পর থেকেই গাছের ডগায় ডগায় সজনের ডাঁটা আসে। রোগবালাই ও উৎপাদন খরচ নেই বললেই চলে। প্রতি বিঘা সজনে বাগান করতে সর্বোচ্চ খরচ হয় ২০ হাজার টাকা। প্রতি কেজি সজনে ১০০ থেকে ১১০ টাকা দরে পাইকাররা বাগান থেকেই কিনে নিচ্ছেন। তিনি আরও বলেন, পরিবারিকভাবে বাগানটি দেখভাল করা হচ্ছে। আশা করি প্রথমবারই বাম্পার ফলন পাব। একটি গাছের গড় আয়ূ ১০ থেকে ১২ বছরের বেশী।
ধনবাড়ী হর্টিকালচার সেন্টার কার্যালয়ের উদ্যানতত্ত্ববিদ রাসেল পারভেজ তমাল জানান কৃষক ও কৃষি উদ্যোক্তাদের উদ্বুদ্ধ করতে সজনে ‘মাতৃ বাগান’ গড়ে তোলা হয়েছে। তিনি বলেন, নতুন এই সজনের বিশেষত্ব হচ্ছে, এটি সারাবছরই ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন জাত। বাছাই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এ জাতটি অবমুক্ত করা হয়েছে। দেশে সজনের অত্যধিক চাহিদা আছে। এটি বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদের পর্যাপ্ত সুযোগ রয়েছে।
এ বিষয়ে ধনবাড়ী উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের কৃষি কর্মকর্তা মাসুদুর রহমান বলেন, প্রথমবারের মতো রেজাউল করিম বারোমাসি এ সজনের চাষ শুরু করছেন। এটি একটি সুপার ফুড। সজনের পাতাও মানবদেহের জন্য খুবই উপকারী। জেলা খামারবাড়ী টাঙ্গাইলের পক্ষ থেকে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বাগানটি ইতিমধ্যে পরিদর্শন করেছে। যদি কোনো কৃষক বা কৃষি উদ্যোক্তা এই জাতের সজনের চাষ করতে চায়, তাহলে আমরা সব ধরণের সহযোগিতা করবো।