ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম অর্গানাইজেশনের (আইএমও) মহাসচিব আর্সেনিও অ্যান্টোনিও ডোমিনগেজ ভেলাসকো জানিয়েছেন, লোহিত সাগরে সোমালি জলদস্যুদের প্রতিরোধে রাষ্ট্রগুলোকেই উদ্যোগ নিতে হবে। এক্ষেত্রে আইএমও’র আইনগত পদক্ষেপ নেওয়ার কোনো ক্ষমতা নেই। বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে তিনি এ কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে এক প্রশ্নের উত্তরে আইএমও মহাসচিব বলেন, লোহিত সাগরে সোমালি জলদস্যুদের দ্বারা বিভিন্ন সময়ে জাহাজ আক্রমণ হয়েছে। সম্প্রতি আমরা দেখেছি, বাংলাদেশের জাহাজ এম আব্দুল্লাহ’র নাবিকদের জিম্মি করা হয়েছে। তবে সোমালি জলদস্যুদের প্রতিরোধে রাষ্ট্রগুলোকেই উদ্যোগ নিতে হবে। এক্ষেত্রে আইএমও’র আইনগত পদক্ষেপ নেওয়ার কোনো ক্ষমতা নেই।
আর্সেনিও অ্যান্টোনিও ডোমিনগেজ ভেলাসকো বলেন, আমরা জানি বাংলাদেশ জলবায়ু ঝুঁকিতে রয়েছে। সে কারণে সমুদ্রে কার্বন নিঃসরণ কমালে বাংলাদেশেও ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। আইএমও’র ১৬৭টি দেশ কার্বন নি:সরণ আগামী ২০৫০ সালের মতো কমাতে চায়। এর মধ্যে ২০৩০ সালের মধ্যে অন্তত ২০ শতাংশ কমানোর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এরপর পর্যায়ক্রমে ২০৪০ ও ২০৫০ সালের মধ্যে আরও বেশি কমানোর উদ্যোগ নেওয়া হবে।
ভেলাসকো আরও জানান, আইওএম নৌখাতে টেকনোলজি উন্নয়নের লক্ষ্যে নানা প্রকল্প বাস্তবায়নে কাজ করছে। একই সঙ্গে ধাপে ধাপে সমুদ্রে জিরো কার্বন নিঃসরণেও কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে আইএমও। তিনি আরও বলেন, আইএমও শুধুমাত্র নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার রাখে। আর সেটি হতে হয় আন্তর্জাতিক শিপিংয়ের ক্ষেত্রে। অভ্যন্তীরন শিপিংয়ের বিষয়গুলো সংশ্লিষ্ট দেশের ওপর নির্ভর করে। তিনি আরও বলেন, লোহিত সাগরে সর্বশেষ পরিস্থিতির কারণে সেখানে শিপিংয়ের ঘুরপথ ব্যবহার করার কারণে চার্জ বাড়ছে। আগামীতে বাংলাদেশ আইওএমের সদস্য হিসেবে শিপিংয়ের ক্ষেত্রে অগ্রনী ভূমিকা রাখবে।
অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, আন্তর্জাতিক শিপিং বিশ্বের অর্থনীতিকে সচল রাখে, সমস্ত বিশ্ব বাণিজ্যের ৮০ শতাংশ বন্দর থেকে বন্দরে হয়ে থাকে। এ কারণে এই পথ ধরে যথেষ্ট গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গত হয়। আশা করা হচ্ছে, ২০৫০ সালের মধ্যে সামুদ্রিক বাণিজ্যের পরিমাণ তিনগুণ হবে। এর ফলে এই শিল্পটি সংশোধনমূলক ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হলে নির্গমনও বাড়বে। শিল্প নেতারা ইতোমধ্যে জলবায়ুবান্ধব জ্বালানি বিকল্প এবং জ্বালানি দক্ষতা নিয়ে কাজ শুরু করেছেন।
তিনি বলেন, আমি বিশ্বাস করি, নেট জিরো ভিশন অর্জন করার সময় আইএমও সমস্ত সদস্য রাষ্ট্রের স্বার্থ রক্ষা করবে। গত বছরের জুনে বাংলাদেশ জাহাজের নিরাপদ এবং পরিবেশগতভাবে সঠিক পুনর্ব্যবহার করার জন্য হংকং কনভেনশন অনুমোদন করেছে। আমরা এই কনভেনশনের বিধি ও আমাদের রিসাইক্লিং শিল্প অর্জনে আইএমও’র অব্যাহত সমর্থন আশা করি।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মেরিটাইমস অ্যাফেয়ার্স ইউনিটের সচিব রিয়ার অ্যাডমিরাল (অব.) খুরশেদ আলম। ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম অর্গানাইজেশনের (আইএমও) মহাসচিব আর্সেনিও অ্যান্টোনিও ডোমিনগেজ ভেলাসকো গত মঙ্গলবার চার দিনের সফরে ঢাকায় আসেন।