ভারতের দুই রাজ্য হরিয়ানা ও জম্মু-কাশ্মীরের বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করেছে দেশটির নির্বাচন কমিশন। ফলাফলে দেখা যাচ্ছে, হরিয়ানায় বুথফেরত জরিপকে উল্টে দিয়ে জয় পেলেও জম্মু-কাশ্মীরে পরাজিত হয়েছে নরেন্দ্র মোদির দল বিজেপি। মুসলিম প্রধান এই রাজ্যে সরকার গঠন করতে যাচ্ছে জম্মু-কাশ্মীর ন্যাশনাল কনফারেন্স (জেকেএনসি)।
মঙ্গলবার (৮ অক্টোবর) সন্ধ্যার পর দেশটির নির্বাচন কমিশনের বরাতে হিন্দুস্তান টাইমস এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
নির্বাচনী ফলাফলে দেখা যায়, জম্মু-কাশ্মীরের বিধানসভার ৯০টি আসনের মধ্যে ফারুক আবদুল্লাহ ও তার ছেলে ওমর আবদুল্লাহর নেতৃত্বাধীন জম্মু ও কাশ্মীর ন্যাশনাল কনফারেন্স (জেকেএনসি) ৪২টি আসন জিতেছে। বিজেপি পেয়েছে ২৮টি আসন এবং জাতীয় কংগ্রেস জিতেছে ৮টি আসনে। বাকি ১২টি আসনে জয় পেয়েছে স্বতন্ত্রসহ অন্যান্য দল।
এদিকে সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় ৪৬টি আসনে জেকেএনসি এককভাবে জয়লাভ করতে না পারলেও, কংগ্রেসের সঙ্গে মিলে জোট সরকার গঠন করতে কোনো সমস্যা হবে না। কারণ, দল দুইটি জম্মু ও কাশ্মীর বিধানসভা নির্বাচনে জোট বেঁধে লড়েছে এবং উভয় দলই বিজেপিবিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র শরিক।
অন্যদিকে, হরিয়ানার নির্বাচনে ৯০টি আসনের মধ্যে বিজেপি জিতেছে ৪৮টি আসনে, যেখানে সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজন ৪৬টি আসন। কংগ্রেস পেয়েছে ৩৭টি আসন এবং বাকি ৫টি আসনে জয়ী হয়েছে অন্যান্য দল। বুথফেরত জরিপে কংগ্রেস কিছুটা আশা দেখালেও, শেষ পর্যন্ত ভোটাররা বিজেপির ওপর আস্থা রেখেছে।
হরিয়ানায় গত ১০ বছর ধরে ক্ষমতায় রয়েছে বিজেপি। তবে ২০২১ সালের কৃষক আন্দোলনের সময় দলটির ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। তাই এবারের নির্বাচনে বিজেপির ফলাফল নিয়ে সংশয় ছিল, যা ফলাফল প্রকাশের পর দূর হয়েছে।
জম্মু-কাশ্মীরে জেকেএনসির এই জয়কে অনেক বিশ্লেষক ‘মহাকাব্যিক’ বলে অভিহিত করেছেন। কারণ, ২০১৯ সালের ৫ আগস্ট ভারতের সংবিধানের ৩৭০ ধারা বাতিলের মাধ্যমে জম্মু-কাশ্মীরের স্বায়ত্তশাসিত মর্যাদা বাতিল করা হয়। সেই সময় জেকেএনসি ব্যাপকভাবে এই পদক্ষেপের প্রতিবাদ করেছিল। দলটির অনেক নেতা-কর্মী গ্রেপ্তার হয়েছিলেন এবং মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ দীর্ঘদিন গৃহবন্দি ছিলেন। এই পরিস্থিতির পর জেকেএনসির এই জয়কে একটি বড় সাফল্য হিসেবে দেখা হচ্ছে।
৩৭০ ধারা বাতিলের পর এই প্রথম জম্মু-কাশ্মীরে বিধানসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় এবং বিজেপি যেকোনো মূল্যে এই নির্বাচন জিততে চেয়েছিল। জম্মু-কাশ্মীরে সরকার গঠন করা বিজেপির দীর্ঘদিনের স্বপ্ন ছিল। নরেন্দ্র মোদি রাজ্যের বিভাজন, নির্বাচনী কেন্দ্র পুনর্বিন্যাস এবং হিন্দু প্রধান এলাকার আসন বৃদ্ধি করার মতো নানা পদক্ষেপ নিয়েছিলেন।
তাই জম্মু-কাশ্মীরের এই নির্বাচনকে মোদির জন্য একটি অগ্নিপরীক্ষা বলা হচ্ছিল। নানা সমীকরণ মিলে বিজেপি কিছুটা আশা করলেও, শেষ পর্যন্ত নির্বাচনী ফলাফলে তাদের হতাশ হতে হলো। উপত্যাকায় জেকেএনসি- কংগ্রেসের সঙ্গে মিলে জোট সরকার গঠন করবে।