চলতি বছরের গ্রীষ্মে ইউরোপের বিভিন্ন অংশে প্রথমে রেকর্ড মাত্রায় উষ্ণতা দেখা গেছে৷ তাপপ্রবাহের পাশাপাশি প্রবল বৃষ্টি, বন্যা ও ভূমিধসের কারণেও সাধারণ মানুষের দুর্দশা বেড়ে চলেছে৷
বর্তমানে স্লোভেনিয়া, অস্ট্রিয়া ও ক্রোয়েশিয়া চরম আবহাওয়ার শিকার হচ্ছে৷ স্লোভেনিয়ায় বিধ্বংসী বন্যার কারণে দেশের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে৷ আন্তর্জাতিক ত্রাণ সহায়তার মাধ্যমে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে৷ ১৯৯১ সালে স্বাধীনতার পর থেকে দেশটি এমন বিপর্যয় দেখেনি৷ দেশটির প্রধানমন্ত্রী রবার্ট গোলোবের মতে ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা পাঁচ কোটি ইউরো ছাড়িয়ে গেছে৷ তবে দেশটির এই দুর্দিনে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ন্যাটো ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো সংগঠন ও দেশের সহায়তা সম্পর্কে তিনি সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন৷ জার্মানি স্লোভেনিয়ায় আগে থেকে তৈরি দুটি সেতু এবং ফ্রান্স মাটি খোঁড়ার দুটি বিশেষ যন্ত্র পাঠাচ্ছে৷
ক্রোয়েশিয়ার বেশ কিছু অংশ এখনো জলমগ্ন রয়েছে৷ দেশের বিভিন্ন অংশে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে৷ তবে আবহাওয়ায় কিছুটা উন্নতি হওয়ায় স্লোভেনিয়া, ক্রোয়েশিয়া ও অস্ট্রিয়ায় পানির স্তর কমে গেছে৷ চেক প্রজাতন্ত্রেও বৃষ্টিপাত কিছুটা কমলেও প্রতিবেশী স্লোভাকিয়ায় সোমবার মাত্রাতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে বন্যার আশঙ্কা দেখা দিচ্ছে৷ সপ্তাহান্তে প্রবল ঝড়বৃষ্টির কারণে পোল্যান্ডে বেশ কিছু বাড়িঘরে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে৷ সোমবার ও মঙ্গলবার বাল্টিক সাগর উপকূলে প্রবল ঝড়ের পূর্বাভাস দিয়েছে জার্মানির আবহাওয়া দফতর৷ ফলে জার্মানির উত্তরে দুটি দ্বীপে ফেরি পরিষেবা বন্ধ রাখা হয়েছে৷ ‘হান্স’ নামের সেই ঝড়ের কারণে সুইডেন ও নরওয়েও প্রবল ঝড়বৃষ্টির কবলে পড়েছে৷ সেই দুই দেশেও ক্ষয়ক্ষতি ও অনেক পরিষেবায় বিঘ্ন ঘটেছে৷ এস্টোনিয়া ও লাটভিয়ায় অনেক বাড়িঘর বিদ্যুৎ সংযোগ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে৷
ইউরোপের মধ্য ও উত্তর অংশে ঝড়বৃষ্টি ও বন্যার তাণ্ডব সত্ত্বেও দক্ষিণের অনেক অংশে তাপপ্রবাহ চলছে৷ স্পেনে চলতি মরসুমে চতুর্থবার এমন তাপপ্রবাহ শুরু হয়েছে৷ জঙ্গলে দাবানলের ঝুঁকিও বেড়ে গেছে৷ বুধবার রাজধানী মাদ্রিদ ও আন্দালুসিয়া প্রদেশের এক অংশে ৪৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত তাপমাত্রার পূর্বাভাস দেওয়া হচ্ছে৷ প্রতিবেশী দেশ পর্তুগালের জঙ্গলে বেশ কয়েকটি দাবানল পরিস্থিতি আরো কঠিন করে তুলছে৷ দেশের কেন্দ্রস্থলে বিশাল এলাকা জুড়ে গাছপালা নষ্ট হয়ে গেছে৷ সেখানকার পরিস্থিতি সোমবার কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এলেও দেশের অন্যান্য কিছু প্রান্তে জঙ্গলে আগুন ছড়িয়ে পড়ছে৷
২০২৩ সালে ইউরোপের বিভিন্ন প্রান্তে চরম আবহাওয়া যে বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, অনেক বিজ্ঞানী এমনটা দাবি করছেন৷ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আরো ঘনঘন এবং আরো তীব্র মাত্রায় তাপপ্রবাহ বড় এলাকা গ্রাস করে ফেলছে৷ ফলে সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যের জন্যও ঝুঁকি বাড়ছে৷ তাছাড়া পর্যটনের সেরা মরসুমের সময়ে এমন বিপর্যয় অর্থনীতিরও ব্যাপক ক্ষতি করছে৷ ক্ষয়ক্ষতি সামলাতে ইইউ ও অন্যান্য সংগঠনের বিপুল অর্থসাহায্যের প্রয়োজন হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে৷ সূত্র: ডিডাব্লিউ, ডিপিএ, রয়টার্