ইসরায়েলের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের কারণে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ড, অধিকৃত পশ্চিম তীর ও জেরুজালেমের পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি ঘটেছে বলে মন্তব্য করেছে ফ্রান্স।
একইসঙ্গে এসব ঘটনায় গভীর উদ্বেগও প্রকাশ করেছে দেশটি। শনিবার (৩১ আগস্ট) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা আনাদোলু।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলি বিভিন্ন পদক্ষেপ গাজা, পশ্চিম তীর এবং জেরুজালেমে পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি ঘটিয়েছে বলে শুক্রবার ফরাসি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় উল্লেখ করেছে।
মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘সাম্প্রতিক ইসরায়েলি কর্মকাণ্ডের জেরে ফিলিস্তিনি এসব অঞ্চলে পরিস্থিতির অবনতির বিষয়ে দৃঢ় উদ্বেগ প্রকাশ করছে ফ্রান্স।’
গাজা সম্পর্কে মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বাস্তুচ্যুত ব্যক্তিদের আশ্রয়স্থল হিসেবে ব্যবহৃত স্কুল এবং আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে ইসরায়েলি হামলার ফলে অগ্রহণযোগ্য সংখ্যক বেসামরিক হতাহতের ঘটনা ঘটেছে।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক মানবিক আইনকে সম্মান করার বাধ্যবাধকতা ইসরায়েলসহ সকলের জন্যই প্রযোজ্য বলে ফ্রান্স দৃঢ়ভাবে পুনর্ব্যক্ত করছে। এই ক্ষেত্রে, মানবিক বা জাতিসংঘের কর্মীদের লক্ষ্য করে হামলাও অগ্রহণযোগ্য। ফ্রান্স গত ২৮ আগস্ট গাজায় বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিউএফপি) গাড়িতে ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিবর্ষণেরও তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে। ওই হামলার ফলে গাজা উপত্যকায় ডব্লিউএফপি তাদের কার্যক্রম স্থগিত করেছে।
অন্যদিকে ফিলিস্তিনের অধিকৃত পশ্চিম তীরে বৃহৎ আকারের ইসরায়েলি সামরিক অভিযানের নিন্দা করেছে ফরাসি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তারা বলেছে, ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর এই অভিযান অভূতপূর্ব অস্থিতিশীলতা এবং সহিংসতা সৃষ্টি করছে। এছাড়া পশ্চিম তীরে উপনিবেশ স্থাপন অবিলম্বে বন্ধ করা উচিত বলেও মন্তব্য করেছে ফ্রান্স।
২০২২ সালের পর থেকে গত বুধবার ইসরায়েলি সেনাবাহিনী পশ্চিম তীরের তুলকারম এবং জেনিনের মতো শহরগুলোর পাশাপাশি তুবাসের কাছে আল-ফারা শরণার্থী শিবিরে তার বৃহত্তম সামরিক আক্রমণ শুরু করে। এই অভিযানে এখন পর্যন্ত ১৬ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে ইসরায়েল।
১৯৬৭ সালের যুদ্ধে পশ্চিমতীর দখল করে নেয় ইসরায়েল। আর গত বছরের শুরু থেকে পশ্চিম তীরে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছে। তবে গত বছরের ৭ অক্টোবর গাজায় যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে এটি আরও বেড়েছে।
ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়া তথ্যের ওপর ভিত্তি করে প্রস্তুতকৃত এএফপির পরিসংখ্যান অনুসারে, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় সহিংসতা শুরু হওয়ার পর থেকে ইসরায়েল পশ্চিম তীরে কমপক্ষে ৬৭০ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে।
এছাড়া বর্বর এসব হামলায় আহত হয়েছেন প্রায় ৫ হাজার ৪০০ ফিলিস্তিনি। সেই একই সময়ে ১০ হাজার ৩০০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনিকে আটক করেছে ইসরায়েল।
এদিকে জেরুজালেমের বিষয়ে ফ্রান্সের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জোর দিয়ে বলেছে, আল-আকসা মসজিদের বর্তমান স্থিতাবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তোলা উচিত নয়।
মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ‘ইসরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তা মন্ত্রী বেন-গভিরের দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্যেরও নিন্দা করছে ফ্রান্স। ইসরায়েলি এই মন্ত্রী প্রকাশ্যে এবং বারবার স্থিতাবস্থার বিপরীতে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে চলেছেন। এছাড়া ইসরায়েলি সরকারকে এই ধরনের অগ্রহণযোগ্য মন্তব্যের দৃঢ়তার সাথে নিন্দা করার আহ্বানও জানিয়েছে ফ্রান্স।’
প্রসঙ্গত, গত সোমবার এক বিবৃতিতে বেন-গভির জোর দিয়ে বলেন, আল-আকসা মসজিদে ইহুদিদের প্রার্থনা করার অধিকার রয়েছে। এসময় মুসলিমদের পবিত্র এই স্থানের অভ্যন্তরে একটি ইহুদি উপাসনালয় নির্মাণের অভিপ্রায়ও ব্যক্ত করেন তিনি।
তার এই ধরনের বিতর্কিত মন্তব্য আরও ধর্মীয় সংঘাত উসকে দিতে পারে বলে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছ থেকে নিন্দার সম্মুখীন হয়েছে।
ইসরায়েলের অতি-কট্টরপন্থি এই মন্ত্রী সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বারবার মুসলিমদের পবিত্র এই স্থানে ইহুদিদের প্রার্থনার আহ্বান জানিয়েছেন। তবে এবারই প্রথম তিনি আল-আকসা মসজিদ কমপ্লেক্সের মধ্যে ইহুদি উপাসনালয় নির্মাণের বিষয়ে খোলা
মেলা মন্তব্য করেন।