নভেম্বর ২৩, ২০২৪

দক্ষিণ ভারতীয় রাজ্য কেরালার ওয়েনাড়েতে ভয়াবহ ভূমিধসে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১৪৩ জনে দাঁড়িয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার ভোরের এই দুর্ঘটনায় এখনো নিখোঁজ আছেন বহু মানুষ।

ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনও বহু মানুষ চাপা পড়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই বিপর্যয়ের মধ্যে দুঃসংবাদ দিয়েছে আবহাওয়া অফিস। দেশটির সংস্থাটির জানিয়েছে, আগামী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বৃষ্টি চলবে কেরালায়। ভারী বৃষ্টি, দুর্যোগ মাথায় নিয়েই পুলিশ ও প্রশাসনের সঙ্গে উদ্ধারে নেমেছে সেনাবাহিনী। উদ্ধার অভিযানে বিমান বাহিনীর হেলিকপ্টারও ব্যবহার করা হচ্ছে। ভূমিধসের কারণে রাস্তাঘাট ভেঙে পড়ায় বহু এলাকায় পৌঁছতে পারেনি উদ্ধারকারী দল। প্রশাসনের আশঙ্কা, বৃদ্ধি পেতে পারে মৃতের সংখ্যা।

গত কয়েকদিন ধরেই ভারী বৃষ্টি হচ্ছে কেরালায়। ভারী বৃষ্টির কারণে মঙ্গলবার রাত ২টা থেকে ভোর ৪টার মধ্যে ওয়েনাড়ের মেপ্পাড়ি এলাকায় পরপর ধসের ঘটনা ঘটে। তার জেরে প্রায় কাদায় মিশে গিয়েছে গোটা এলাকা। ঘুমের মধ্যেই মৃত্যু হয়েছে বহু মানুষের। কিছু বুঝে ওঠার আগেই কাদামাটিতে চাপা পড়েছেন বাসিন্দারা।

একটি ভিডিওতে দেখা যায়, কাদার স্রোতে উপড়ে পড়ছে একের এক গাছ। ভেসে যাচ্ছে গাড়ি। কোথাও আবার তা আটকে যাচ্ছে বড় পাথরে। রাস্তায় একহাঁটু কাদাপানি। কোনও কোনও বাড়ির অর্ধেকেরও বেশি পানির নিচে। বহু বাড়ি ভেঙে পড়েছে।

ধসের কারণে মেপ্পাড়ি এলাকার বহু রাস্তা ভেঙে গেছে। ফলে বহু জায়গায় উদ্ধারের জন্য পৌঁছতে পারেনি প্রশাসন। আবহাওয়া খারাপ থাকায় গতকাল সকালের দিকে দীর্ঘক্ষণ হেলিকপ্টার ব্যবহার করেও উদ্ধারকাজ চালানো যায়নি। পরে দুটি হেলিকপ্টার, এমআই-১৭ এবং একটি ‘অ্যাডভান্সড লাইট হেলিকপ্টার’ উদ্ধারকাজে নামে।

পুলিশ ও প্রশাসনের সঙ্গে কাজে নেমেছে সেনাবাহিনী এবং নৌ সেনারা। ভারতীয় সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ২২৫ জন জওয়ান উদ্ধারকাজে নেমেছেন। তিরুঅনন্তপুরমে ১৪০ জন সেনা প্রস্তুত রয়েছেন। প্রয়োজনে তাঁদের আকাশপথে ওয়েনাড়ে আনা হবে।

কেরালার মুখ্যমন্ত্রীর দফতরের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, উদ্ধার এবং ত্রাণের জন্য কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। আগামী দুই দিন রাজ্যে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকবে।

মেপ্পাড়িতে মঙ্গলবার দিনভর কাদামাটি সরাতেই একের পর এক দেহ উদ্ধার হয়েছে। এখনও পর্যন্ত ৩৭ জনের পরিচয় শনাক্ত করা গেছে। বহু পরিবারের খোঁজ মেলেনি।

প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, এ পর্যন্ত ১২৮ জন আহত হয়েছেন। তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এর মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

মুদাক্কায়ি গ্রাম থেকে ১৫০ জনকে উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে সরানো হয়েছে। কেরালার মুন্ডাক্কাই, ছুরালমালা, আট্টামালা, নুলপুঝা এলাকা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বহু রাস্তা ধসে গেছে। ভেঙে গেছে একটি সেতুও।

কেরালার মুখ্যমন্ত্রী বিজয়নের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সব রকম সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রীর দফতরের পক্ষ থেকে মৃতদের পরিবারকে দুই লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথাও ঘোষণা করা হয়েছে। আহতদের ৫০ হাজার টাকা দেওয়া হবে।

বিজেপি সভাপতি নড্ডা জানিয়েছেন, আটকেপড়া মানুষদের উদ্ধার এবং ধ্বংসস্তূপ থেকে মৃতদের দেহ বের করে আনাই এখন লক্ষ্য সরকারের।

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন...