নভেম্বর ১৫, ২০২৪

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে মোস্তাফিজের উত্থানটা হয়েছিল ধূমকেতুর মতো। গোটা বিশ্বে হইচই ফেলে দিয়েছিলেন ২০ বছরের এক ছিপছিপে গড়নের তরুণ পেসার। যে মুখে কথা বলার চেয়ে বল হাতেই বেশি পারঙ্গম।

দারুণ বোলিংয়ে প্রতিপক্ষ ব্যাটারদের নাস্তানাবুদ করে ছাড়েন। স্লোয়ার-কাটারে বোকা বানিয়ে নিজের শিকারে পরিণত করেন। ম্যাচ গড়ে দেন একার হাতেই।

লম্বা সময় পর হলেও চলতি বিশ্বকাপে মিলেছে সেই মোস্তাফিজের দেখা। দারুণ বোলিংয়ে মুগ্ধতা ছড়িয়ে দলকে এনে দিচ্ছেন সাফল্য। এই মোস্তাফিজের দিকেই এখন তাকিয়ে গোটা বাংলাদেশ।

মাঝে বেশ খারাপ সময় পার করতে হয়েছে টাইগার এই পেসারকে। সর্বশেষ শ্রীলংকা সিরিজের একাদশ থেকে তো বাদই পড়ে গিয়েছিলেন। সেই মোস্তাফিজের যেন পুনর্জন্ম হলো আইপিএলের দল চেন্নাই সুপার কিংসের হয়ে খেলতে গিয়ে!

মাহেন্দ্র সিং ধোনি, স্টিফেন ফ্লেমিং ও ডোয়াইন ব্রাভোরা ফিরিয়ে আনলেন সেই পুরোনো মোস্তাফিজকে। কাটার মাস্টারকে তারা নিজেদের স্বার্থে দীক্ষা দিলেও লাভটা আসলে হয়েছে মোস্তাফিজের নিজের এবং দিনশেষে বাংলাদেশেরও।

রাতারাতি বদলে যাওয়া ফিজ আইপিএল শেষ হওয়ার আগেই মাত্র ৯ ম্যাচে ১৪ উইকেট নিয়ে ছিলেন সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি। এরপর জিম্বাবুয়ে ও যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে সিরিজে দারুণ বোলিংয়ের পর ফিজ এখন বিশ্বকাপেও বল হাতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন দলকে। হয়ে উঠেছেন দলের আস্থার প্রতীক। বুঝতে দিচ্ছেন না আরেক পেসার শরিফুল ইসলামের অভাব।

কিপটে বোলিংয়ে যেমন রান আটকে দিচ্ছেন, তেমনি দলের প্রয়োজনের মুহূর্তে উইকেট এনে দিচ্ছেন দলকে। ডেথ ওভারে তো এই মুহূর্তে বিশ্বের সেরা বোলারদেরই একজন মোস্তাফিজ। স্লোয়ার-কাটারে বোকা বানিয়ে দিচ্ছেন প্রতিপক্ষের ব্যাটারদের। শেষ দিকে যেখানে ঝড়ের বেগে ব্যাট চালায় ব্যাটাররা, সেখানে মোস্তাফিজ তাদের দমিয়ে রাখছেন দারুণ বোলিংয়ে। যা দিন শেষে পার্থক্য গড়ে দিচ্ছে ম্যাচে।

যেখানে মোস্তাফিজ রানে লাগাম না টানলে হয়তো প্রতিপক্ষের স্কোরবোর্ডে অনায়াসেই যোগ হতে পারত আরও ১৫-২০ রান। তবে সেটি এবার কোনোভাবেই হতে দিচ্ছেন না ফিজ।

এই যেমন যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে শেষ ম্যাচে মাত্র ১০ রানে নিয়েছেন ৬ উইকেট, এরপর শ্রীলংকার বিপক্ষে ১৭ রানে ৩ উইকেট। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে উইকেট না পেলেও দিয়েছেন মাত্র ১৮ রান এবং সর্বশেষ নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ম্যাচে ১২ রান দিয়ে নিয়েছেন ১ উইকেট।

এখন গ্রুপের শেষ ম্যাচে নেপালের বিপক্ষে জয় পেলেই সুপার এইটে চলে যাবে বাংলাদেশ। সেখানেও নিশ্চয়ই এমন মোস্তাফিজকেই চাইবে বাংলাদেশ। অন্যদিকে এই ম্যাচটি হতে যাচ্ছে মোস্তাফিজের আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের শততম ম্যাচ। তাই নিজের মাইলফলকের এই ম্যাচটি অবশ্যই অন্যরকমভাবে রাঙাতে চাইবেন ফিজ, সেই সঙ্গে তার সতীর্থরাও।

এর আগে, মোস্তাফিজ তার আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে ৯৯ ম্যাচের ৯৮ ইনিংসে হাত ঘুরিয়ে ২১.২৫ গড়ে এবং ৭.৪২ ইকোনমি রেটে উইকেট নিয়েছেন ১২৪টি। দুবার পাঁচ বা তার বেশি উইকেট নেওয়া মোস্তাফিজের সেরা বোলিং ফিগার ১০ রানে ৬ উইকেট। সামনের দিনে দ্য ফিজ নিজের এই পরিসংখ্যানকে আরও সমৃদ্ধ করবেন এবং সেইসঙ্গে দলকেও উপহার দেবেন দারুণ সব জয়, সেই প্রত্যাশাই সমর্থকদের।

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন...