পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ কোম্পানিকে (বিএটিবিসি) বিধিবহির্ভূতভাবে আড়াই হাজার কোটি টাকার মূল্য-সংযোজন কর (ভ্যাট) মওকুফ করা হয়েছিল বলে অভিযোগ উঠেছে। আর এ অভিযোগ করেছে খোদ জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), যাদের দায়িত্ব হচ্ছে সরকারের হয়ে আয়কর, মূল্য সংযোজন কর ও আমদানি শুল্কসহ বিভিন্ন ধরনের রাজস্ব আহরণ করা।
ভ্যাট মওকুফের দুই বছর পর বিষয়টি তদন্ত করে দেখার উদ্যোগ নিয়েছে এনবিআর। এ লক্ষ্যে সংস্থাটি ছয় সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে। কমিটিকে তদন্ত শেষে রিপোর্ট জমা দেওয়ার জন্য ৩০ কার্যদিবস সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে।
এনবিআর সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।
সূত্র অনুসারে, এনবিআরের বৃহৎ করদাতা ইউনিট (এলটিইউ-ভ্যাট) ২০২১ সালের ১৯ আগস্ট বিএটিবিসির ২ হাজার ৫০৪ কোটি টাকার ভ্যাট মওকুফ করে।
এনবিআর বলছে, ওই সময় ভ্যাট মওকুফে আইনের যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়নি। তাছাড়া এত বড় পরিমাণ রাজস্ব মওকুফের ঘটনা এর আগে কখনো ঘটেনি। এছাড়া তখনকার সময়ে সাত সদস্যের একটি কমিটি মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলো। তারপরেও কর মওকুফের এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিলো বলে জানা যায়।
এদিকে সম্প্রতি গঠিত তদন্ত কমিটিকে বিএটিবিসি-তে সম্পূরক শুল্ক এবং মূল্য সংযোজন কর মওকুফের বৈধতা পর্যালোচনা করতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি বিষয়টির পুঙ্খানুপুঙ্খ বিচার বিশ্লেষণ সহ প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
কর মওকুফের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে আগের কমিটির মতামত যথাযথভাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে কিনা তাও খতিয়ে দেখবে এনবিআর।
এনবিআরের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা বলেন, বিএটিবিসির কর মওকুফের বিষয়টি অত্যন্ত টেকনিক্যাল। সার্বিক বিষয় পর্যালোচনা করার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে এনবিআর পরবর্তী ব্যবস্থা নেবে।
বিএটিবিসির কোম্পানি সেক্রেটারি মো. আজিজুর রহমান বলেন, রাজস্ব মওকুফের বিষয়গুলো দেখার জন্য আমাদের কোম্পানির আলাদা বিভাগ রয়েছে। সেই বিভাগের কর্মকর্তারা এবিষয়ে ভালো বলতে পারবেন।
এরপরে অর্থসূচকের প্রতিবেদককে তিনি আরও বলেন, আপনার নাম এবং উপাধি লিখে হোয়াটসঅ্যাপে পাঠান। আমি ঐ ডিপার্টমেন্টকে আপনার সঙ্গে যোগযোগ করতে বলছি।
তবে হোয়াটসঅ্যাপে ম্যাসেজ করার এক ঘণ্টা পরও বিএটির কোনো কর্মকর্তা প্রতিবেদকের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি।
পেছনের ঘটনা-
বিএটিবিসি’র ২০১৬ সালের অডিট রিপোর্ট যাচাই করে এলটিইউ-ভ্যাট। তখন জানা যায়, কোম্পানিটি সিগারেট উৎপাদনে ২০০কোটি টাকার বেশি তামাক পাতা ব্যবহার করেছে। ওই তামাক পাতা দিয়ে সিগারেট বানিয়ে তা বাজারে বিক্রি করা হয়েছে কিনা সেটি যাচাইয়ের জন্য ২০১৮ সালের ২৯ মার্চ একটি কমিটি গঠন করা হয়।
কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিএটিবিসি প্রকৃতপক্ষে অতিরিক্ত ১৯১ কোটি টাকার তামাক পাতা ব্যবহার করে ১ হাজার ৮১১ কোটির বেশি সিগারেট উৎপাদন ও সরবরাহ করেছে। এর ফলে সরকার রাজস্ব হারিয়েছে ২ হাজার ৫৪০ কোটি টাকার (৪৮ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক এবং ১৫ শতাংশ ভ্যাট)। পরে ডিমান্ড নোটিশ দিতে সাত সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়।
তবে চূড়ান্ত ডিমান্ড নোটিশে বলা হয়েছে, কমিটি বিএটিবিসির অতিরিক্ত সিগারেট উৎপাদন ও বাজারজাতকরণের প্রমাণ পায়নি। এ কারণে রাজস্ব ফাঁকির বিষয়টিও নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। এর পরিপ্রেক্ষিতে তামাক কোম্পানির বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
কিভাবে বিষয়গুলো সামনে এসেছে-
এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, এনবিআর এলটিইউ-ভ্যাটের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ তদন্ত করছে। সুদের ছাড় এবং বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি (এডিআর) স্কিমের আওতায় যেসব অনিয়ম হয়েছে তা খতিয়ে দেখা হবে।
তদন্তে এনবিআর চেয়ারম্যান দেখেন, রাজস্ব বোর্ডের অনুমোদন ছাড়াই ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকোকে ২ হাজার ৫৪ কোটি টাকার কর মওকুফ করা হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে তিনি এনবিআর সদস্য শহিদুল ইসলামকে আহ্বায়ক করে বিষয়টি পর্যালোচনার জন্য ছয় সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেন।
এলটিইউ-ভ্যাটের পজিশন পেপারের মাধ্যমে বিষয়টি ইতিমধ্যেই এনবিআরকে বিস্তারিতভাবে জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়, এলটিইউ-ভ্যাট বিষয়টি পর্যালোচনা করতে সাত সদস্যের কমিটি গঠন করলেও এনবিআরের অনুমোদন নেওয়া হয়নি।