নভেম্বর ১৫, ২০২৪

ঈদের চিরায়ত আকর্ষণ গ্রামেই বেশি। এ জন্য নাড়ির টানে ছুটে চলা। হোক না তা শত ঝক্কি-ঝামেলার। স্বজনের সঙ্গে ঈদুল ফিতর উদযাপনে বাস, ট্রেন ও লঞ্চ টার্মিনালে ভিড় বেড়েছে ঘরমুখো মানুষের। ট্রেনে আপাতত নির্বিঘ্ন যাত্রা হলেও চাপ মহাসড়কে, গাড়ি চলছে ধীরগতিতে। রাজধানী ক্রমশ হচ্ছে ফাঁকা। যাওয়ার আগে সবাই সারছেন কেনাকাটা।

ঈদুল ফিতরের ছুটি শুরু হতে চার দিন বাকি থাকলেও, গতকাল শুক্রবার থেকে যাত্রীর ভিড় বেড়েছে রাজধানীর বাস টার্মিনালগুলোতে। এর প্রভাব পড়েছে মহাসড়কে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে মেঘনা ও গোমতী সেতুর টোল প্লাজায় গাড়ির চাপে ১৩ কিলোমিটার অংশে ধীরগতি ছিল। ঢাকা-উত্তরবঙ্গ এবং ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের গাজীপুর অংশে চাপ বেড়েছে যানবাহনের। নির্বিঘ্ন ছিল ট্রেনের ঈদযাত্রা।

চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ১১ এপ্রিল বৃহস্পতিবার পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপিত হবে। ৩০ রোজা ধরে এবার ছুটি নির্ধারণ করা হয়েছে। এবারই প্রথম ২৯ রমজানে অফিস-আদালত খোলা থাকবে। ঈদের ছুটি শুরু হবে ১০ এপ্রিল থেকে। ধারণা করা হচ্ছে, ৯ এপ্রিল শেষ কর্মদিবসের বিকেল থেকে ঘরমুখী যাত্রীর ঢল নামবে।

চাপ কমাতে ঢাকার আশপাশের শিল্প এলাকার কারখানায় ধাপে ধাপে ছুটি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আগামী রোববার থেকে ছুটি শুরু হবে। পরের দিন ৮ এপ্রিল সোমবার বড় সংখ্যক কলকারাখানায় ছুটি শুরু হবে। সেদিন ঈদযাত্রার আসল ভিড় শুরু হবে বলছেন পরিবহন সংশ্লিষ্টরা।

গতকাল ছিল সাপ্তাহিক ছুটি। আজ শনিবারও ছুটি। আগামীকাল রোববার পবিত্র শবে কদরের ছুটি। ৮ এবং ৯ এপ্রিল যারা ছুটির ব্যবস্থা করতে পেরেছেন, তারা ঈদ উদযাপনে আগেভাগে ঢাকা ছাড়ছেন। গতকাল গাবতলী এলাকা এবং মহাখালী বাস টার্মিনাল ঘুরে দেখা যায়, স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে যাত্রী কয়েকগুণ বেড়েছে। তবে সাধারণত ঈদযাত্রায় যেমন উপচেপড়া ভিড় হয়, তা এখনও নেই।

শ্যামলী, কল্যাণপুর, কলেজগেট এবং গাবতলী টার্মিনাল ঘুরে দেখা যায়, বড় কোম্পানির বাসে যাত্রী বেড়েছে। তবে লোকাল বা কম ভাড়ায় চলা ছোট কোম্পানির বাসে এখনও তেমন চাপ নেই। চাঁপাইনবাবগঞ্জ রুটের রজনীগন্ধা পরিবহনের কাউন্টার কর্মী আবদুল খালেক বলেন, যারা শহরে ছোট চাকরি, কারখানায় কাজকর্ম করেন, তাদের ছুটি এখনও শুরু হয়নি। তাই টার্মিনালের কাউন্টারে খুব একটা ভিড় নেই। তবে বিপরীত চিত্র টার্মিনালের বিপরীতে হানিফ পরিবহনের উত্তরবঙ্গের এবং শ্যামলী এনআর পরিবহনের কাউন্টারে। সেখানে অর্ধশত অপেক্ষমাণ যাত্রী দেখা গেল। শ্যামলীর কর্মী শহিদুল ইসলাম বললেন, বৃহস্পতিবার ইফতারের পর থেকে যাত্রী বেড়েছে।

হানিফের কাউন্টারে কথা হয় ঠাকুরগাঁওয়ের যাত্রী মনজুর হোসেনের সঙ্গে। তিনি জানালেন, বেসরকারি চাকরি করেন। ৯ এপ্রিল অফিস শেষে ছুটি হবে। সেদিন প্রচণ্ড যানজট হতে পারে আশঙ্কায় স্ত্রী-সন্তানদের আগেভাগে পাঠিয়ে দিচ্ছেন। নিজে যাবেন ৯ এপ্রিল রাতের বাসে।

গাজীপুর ও কালিয়াকৈর প্রতিনিধি জানিয়েছেন, মহাখালী থেকে বৃহত্তর ময়মনসিংহের ৬ জেলা এবং উত্তরবঙ্গে কয়েকটি জেলার বাস চলে। এসব বাসের আগাম টিকিট বিক্রি হয় না। যাত্রার আগে টিকিট দেওয়া হয়। গতকাল দুপুর ১২টার দিকে দেখা যায়, এনা পরিবহনের কাউন্টারের সামনে টিকিটপ্রত্যাশী অন্তত ৩০০ যাত্রীর দীর্ঘ সারি। এনার মহাব্যবস্থাপক আতিকুল আলম বলেন, যাত্রী বেড়েছে। কিন্তু ঠিক ঈদে যেমন ভিড় থাকে তা এখনও হয়নি। ময়মনসিংহগামী যাত্রী মাহবুব হাসান জানান, সকাল সাড়ে ১০টায় লাইনে দাঁড়িয়ে দেড় ঘণ্টায় টিকিট পেয়েছেন।

মহাখালী থেকে চলা বাসের চালক ও শ্রমিকরা জানান, সাতটি ফ্লাইওভার এবং ওভারপাস চালু হলেও গাড়ির গতি আটকে যাচ্ছে বিমানবন্দর থেকে গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তার ব্যস্ত সড়কে। ফ্লাইওভার, ওভারপাস থেকে নামার মুখে জটলা করে থাকে বাস, অটোরিকশা, ইজিবাইকসহ নানা যান। এতে গতি কমছে। শৃঙ্খলা না এলে, কলকারখানায় ছুটির দিন থেকে তীব্র যানজট হতে পারে। অবশ্য চান্দনা চৌরাস্তার পর থেকে মহাসড়কে গাড়ির চাপ থাকলেও যানজট নেই।

সায়েদাবাদ টার্মিনাল থেকে চট্টগ্রাম এবং সিলেট বিভাগের জেলার বাস চলে। মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি জানিয়েছেন, গতকাল সকালে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলায় ১৩ কিলোমিটারে থেমে থেমে যানজট ছিল। তবে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকামুখী লেইন ছিল যানজটমুক্ত।

দাউদকান্দি হাইওয়ে থানার ওসি শাহীনুল আলম জানান, গজারিয়ার ভবেরচর এলাকা থেকে দাউদকান্দির শহীদনগর পর্যন্ত ৫ কিলোমিটার যানজট ছিল দুপুরে। ১টার পর মহাসড়ক স্বাভাবিক ছিল।

গজারিয়া হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ হুমায়ুন কবির জানান, মেঘনা সেতু থেকে কুমিল্লার দাউদকান্দি মেঘনা-গোমতী সেতু পর্যন্ত যানবাহন ধীর গতিতে চলাচল করছে।

গতকাল দুপুরে ঢাকা-উত্তরবঙ্গ যানজটপ্রবণ এলাকা পরিদর্শন করেন হাইওয়ে পুলিশের প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি শাহাবুদ্দিন খান। তিনি চন্দ্রায় সাংবাদিকদের বলেন, আগের বছরগুলোর চেয়ে এবারের ঈদযাত্রা স্বস্তির হবে। ফিটনেসবিহীন গাড়ি রাস্তায় উঠলেই কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন তিনি।

ঢাকা-উত্তরবঙ্গ মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করা হচ্ছে। দুর্ভোগ কমাতে আজ শনিবার এ মহাসড়কের পাঁচটি ওভারপাস, ফ্লাইওভার যান চলাচলের জন্য খুলে দেবেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি জানিয়েছেন, চাপ বেড়েছে দক্ষিণবঙ্গের পথেও। ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ে নামে পরিচিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মহাসড়কের এবং পদ্মা সেতুর মাওয়া প্রান্তের টোলপ্লাজায় ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত ধীরগতি ছিল। সেতু কর্তৃপক্ষের পদ্মা সেতুর সাইট অতিরিক্ত পরিচালক আমিরুল হায়দার চৌধুরী জানান, ভোর থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত চাপ ছিল।

এদিকে সড়কের তুলনায় ট্রেনে নির্বিঘ্নে বাড়ি ফিরছেন যাত্রীরা। এবার টিকিটে অনিয়ম বন্ধে কড়াকড়ি করেছে রেলওয়ে। প্রকৃত টিকিটধারীকে তল্লাশি করে স্টেশনে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে। তবে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা আশঙ্কা করেছেন, ছুটি শুরুর পর যাত্রীর ঢল নামলে শৃঙ্খলা ধরে রাখা কঠিন হবে। অবশ্য রেলমন্ত্রী জিল্লুল হাকিম বলেছেন, এবারে ঈদযাত্রা দুর্ভোগমুক্ত হবে। টিকিট কালোবাজারি পুরোপুরি বন্ধ করা সম্ভব হয়েছে।

সরেজমিনে ট্রেন অনেকটাই সময়সূচি মেনে চলতে দেখা যায়। প্রকৃত টিকিটধারীদের তল্লাশি করে স্টেশনে প্রবেশ করতে দেওয়ায় প্ল্যাটফর্মে উপচেপড়া ভিড় নেই। বিনা টিকিটের যাত্রী না থাকায়

ঈদযাত্রার ট্রেনগুলো স্টেশনে নির্ধারিত সময়ের চেয়ে দুই মিনিট বেশি যাত্রাবিরতি করছে। কমলাপুর স্টেশন ম্যানেজার মাসুদ সারওয়ার বলেন, নিরাপত্তার জন্যই এ ব্যবস্থা। এতে ১০-১৫ মিনিট বিলম্ব হলেও এখন পর্যন্ত শিডিউল

বিপর্যয় হয়নি।

 

 

 

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন...