পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ইসলামী ব্যাংক থেকে ঋণের নামে প্রায় ৮৮ হাজার কোটি টাকা বের করে নিয়েছে এস আলম গ্রুপ। এস আলমের ঋণের বিপরীতে বন্ধকী সম্পদের দামও অনেক বেশি দেখানো হয়েছে। গ্রুপটির কাছ থেকে ঋণের এ অর্থ ফেরত পাওয়া নিয়ে সন্দিহান খোদ বাংলাদেশ ব্যাংক। এমন অবস্থায় ব্যাংকটিতে থাকা এস আলম গ্রুপের শেয়ার বিক্রি করে ঋণ সমন্বয়ের ঘোষণা দিয়েছেন গভর্নর। এ লক্ষ্যে ইতোমধ্যে এস আলমের সব শেয়ার সরকারের জিম্মায় নেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, ইসলামী ব্যাংকের ৮২ শতাংশ শেয়ারের মালিক এস আলম গ্রুপ। বর্তমানে ইসলামী ব্যাংকের মোট শেয়ার সংখ্যা ১৬০ কোটি ৯৯ লাখ। এ হিসেবে এস আলম গ্রুপের কাছে রয়েছে ১৩২ কোটি ১ লাখ ৯২ হাজার ৩৪৮ টি শেয়ার। বর্তমান বাজার দর অনুযায়ী (শেয়ার প্রতি ৬২ টাকা ২০ পয়সা) এস আলমের মালিকানায় থাকা শেয়ারের মূল্য দাঁড়ায় ৮ হাজার ২১১ কোটি ৫৯ লাখ টাকা।
অর্থাৎ, এই মুহুর্তে যদি ইসলামী ব্যাংকের এস এলমের শেয়ার বিক্রি করে ব্যাংকটির তারল্য সংকট মেটানোর চেষ্টা করা হয়, তাহলে মাত্র ৮ হাজার ২১১ কোটি ৫৯ লাখ টাকা পাওয়া সম্ভব হবে। কারণ ইতিমধ্যে আলোচিত এ ব্যাংকটি তারল্য সংকট কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে ৫ হাজার কোটি টাকা চেয়েছে।
২০১৭ সালে ইসলামী ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ নেয় চট্টগ্রামভিত্তিক ব্যবসায়ী গোষ্ঠী এস আলম গ্রুপ। ব্যাংকটির চেয়ারম্যান ছিলেন এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলমের ছেলে আহসানুল আলম। ব্যাংকটির ঋণের পরিমাণ ১ লাখ ৭৫ হাজার কোটি টাকা। নতুন চেয়ারম্যানের দেওয়া হিসাব মতে, ব্যাংকটি থেকে প্রায় ৮৮ হাজার কোটি টাকা একাই বের করে নিয়েছে এস আলম গ্রুপ।
দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ডিএসই’র তথ্য মতে, ইসলামী ব্যাংকের মোট ১৬০ কোটি ৯৯ লাখ ৯০ হাজার ৬৬৮ টি। এর মধ্যে এস আলম (সাইফুল আলম) গ্রুপের নামে-বেনামে থাকা বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান দখলে রেখেছিল ১৩২ কোটি ১ লাখ ৯২ হাজার ৩৪৮ টি বা ৮২ শতাংশ শেয়ার। এস আলম গ্রুপের জব্দ হওয়া শেয়ারের বর্তমান বাজার (শেয়ার প্রতি ৬২ টাকা ২০ পয়সা) মূল্য ৮ হাজার ২১১ কোটি ৫৯ লাখ ৬৪ হাজার ৩০ টাকা ৬৭ পয়সা।
গণঅভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর শেয়ার বিক্রি করে অর্থ লুট করার পাঁয়তারা করছিল ব্যাপক সমালোচিত গ্রুপটি। এমন পরিস্থিতিতে প্রভাবশালী গ্রুপটির শেয়ার বিক্রি ঠেকাতে বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ইসলামী ব্যাংকের ৮২ শতাংশ শেয়ারই অবরুদ্ধ করে।
গত ২১ আগস্ট বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বলেছিলেন, এখন ইসলামী ব্যাংকে এস আলম গ্রুপ বা তার স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি প্রতিষ্ঠান ছাড়া অন্য কারো নামে এককভাবে দুই শতাংশের বেশি শেয়ারধারী নেই। তাই পরবর্তীতে যখন কোনো শেয়ারহোল্ডার দুই শতাংশ শেয়ারের মালিক হবেন তখন তাদের মধ্য থেকে পরিচালক নিয়োগ দেওয়া হবে।
গভর্নরের এমন বক্তব্যের পরপরই ইসলামী ব্যাংকের শেয়ার দর বাড়তে শুরু করে। পুঁজিবাজার বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ইসলামী ব্যাংকের শেয়ার দর দুটি কারনে বাড়ছে। প্রথমত, ব্যাংকটি এখন এস আলম বা ব্যাংক লুটেরাদের হাত থেকে মুক্ত হয়েছে। দ্বিতীয়ত, দুই শতাংশ শেয়ার নেই এমন ব্যক্তিরা পরিচালক হওয়ার জন্য শেয়ার কিনতে বেশ আগ্রহী। অর্থাৎ এখানে শেয়ারের চাহিদা বেশি থাকার কারণে দাম বাড়ছে বলে তারা মনে করছেন।
ইসলামী ব্যাংকের শেয়ার দর অস্বাভিক হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় গত ২৫ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ডিএসই কর্তৃপক্ষকে মূল্যবৃদ্ধির কারণ তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে। ডিএসইকে ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি ব্যাংকটির শেয়ারের সন্দেহজনক লেনদেন থেকে বিরত থাকার জন্য ব্রোকারেজ হাউসের প্রধান ও অনুমোদিত প্রতিনিধি বা ট্রেডারদের সতর্ক করতেও ডিএসইকে নির্দেশ দিয়েছে বিএসইসি।
ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, ৬ আগস্ট থেকে ২৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ে অর্থাৎ মাত্র দেড় মাসে ইসলামী ব্যাংকের শেয়ার দর ৩৭ টাকা ৮০ পয়সা (১১৫.৯৫%) বেড়ে ৭০ টাকা ৪০ পয়সায় দাঁড়িয়েছিলো।
এরপর ব্যাংকটির শেয়ারের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির কারণ তদন্তের বিএসইসির নির্দেশের পর থেকে বুধবার (২ অক্টোবর) পর্যন্ত শেয়ারের দাম কমে দাঁড়িয়েছে ৬২ টাকা ২০ পয়সায়।
সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বলেছেন, এস আলম গ্রুপের সম্পদ বিক্রি করে আমানতকারীদের অর্থ ফেরত দেওয়া হবে। এ জন্য এস আলমের সম্পদ কাউকে না কেনার আহ্বান জানিয়েছেন গভর্নর।