

নাটোরের সিংড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী দেলোয়ার হোসেন ও তার ভাইকে অপহরণ করে মারধরের ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে ক্ষমা চেয়েছেন তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। তিনি বলেন, ‘এ ঘটনায় আমি লজ্জিত, দুঃখিত ও ক্ষমাপ্রার্থী। ঘটনায় সাথে যারা জড়িত, তাদের সুষ্ঠু বিচার হবে। কেউ ছাড় পাবে না।’
আজ শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) সকালে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন দেলোয়ার হোসেনকে দেখতে এসে প্রতিমন্ত্রী পলক এসব কথা বলেন।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৮ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন দেলোয়ার হোসেনকে দেখতে আজ সকালে ঢাকা থেকে বিমানে রাজশাহী আসেন তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। হাসপাতালে তাঁর সঙ্গে সিংড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতাও ছিলেন। প্রতিমন্ত্রী অসুস্থ দেলোয়ার হোসেন ও তাঁর দুই ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলেন। এ ছাড়া তিনি দায়িত্বরত চিকিৎসকের কাছে চিকিৎসাধীন দেলোয়ারের শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নেন এবং সর্বোত্তম চিকিৎসাসেবা দেওয়ার আহ্বান জানান।
পরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী পলক বলেন, ঘটনার সময় তিনি বিদেশে ছিলেন। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ১টায় দেশে ফিরেই সকালে দেলোয়ারকে দেখতে রাজশাহীতে এসেছেন।
বিদেশে থেকেও ঘটনার খোঁজখবর নিয়েছেন উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমি ভাবতেও পারিনি নাটোরের মাটিতে এ ধরনের ঘটনা ঘটবে। এ ঘটনায় আমি লজ্জিত, দুঃখিত এবং ক্ষমাপ্রার্থী। প্রধানমন্ত্রী এ ঘটনার খোঁজখবর রাখছেন। এ ঘটনায় যারা জড়িত, তাদের সুষ্ঠু বিচার হবে। কেউ ছাড় পাবে না।’
দেলোয়ার অপহরণের ঘটনায় তাঁর বড় ভাই মজিবর রহমান বাদী হয়ে অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করে সিংড়া থানায় মামলা করেছেন। পুলিশ এরই মধ্যে দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে। এর মধ্যে একজন আদালতে দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন। ওই জবানন্দিতে তিনি জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগনেতা ও নির্বাচনের প্রার্থী লুৎফুল হাবীবের পক্ষ হয়ে তাঁরা ওই ঘটনা ঘটিয়েছেন। লুৎফুল হাবীব আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের শ্যালক।
অপহরণ ও নির্যাতনের সঙ্গে শ্যালক রুবেলের নাম ভুক্তভোগীদের পক্ষ থেকে বলা হলেও মামলায় আসামি হিসেবে তাঁর নাম না থাকার বিষয়ে সাংবাদিকেরা জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী পলক বলেন, ‘যিনি হামলার শিকার তাঁর আপন ভাই মামলাটির বাদী। তাঁর সঙ্গে আমার দল বা ব্যক্তিগতভাবে যোগাযোগ হয়নি। বাধা দেওয়া হয়নি। তারা মামলাটা করেছে। পুলিশ মামলাটি তদন্ত করছে। কারা জড়িত তা আপনারা দেখেছেন। আদালতে দুজন ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। প্রাথমিক যে তথ্য-প্রমাণ, ভিডিও ফুটেজ আছে, যারাই ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকুক, পুলিশ প্রভাবমুক্ত-নিরপেক্ষভাবে ব্যবস্থা নেবে। আমরা দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে চাই, কারও নাম ভাঙিয়ে কেউ যেন কোনো অপরাধ করতে না পারে।’
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে পলক আরও বলেন, ‘লুৎফুল হাবীব আমার আত্মীয়, তা অস্বীকার করব না। তবে আত্মীয়তার সুবাদে বা রাজনৈতিক কারণে সে বা অন্য কেউ বাড়তি সুবিধা পাবে না। বরং এমন ব্যবস্থা নেওয়া হবে, যা এমপি-মন্ত্রীর স্বজনদের জন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। অভিযুক্ত ব্যক্তিদের ব্যাপারে আমরা দলের পক্ষ থেকেও খুব অল্প সময়ের মধ্যে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেব।’
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ অনুযায়ী একটি উন্মুক্ত নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে গিয়ে দেলোয়ার রাজনৈতিক কারণে হামলার শিকার হয়েছেন, সে কারণে আমার দ্রুত আসাটা দায়িত্ব মনে করেছি। যারা এই হামলার সঙ্গে সরাসরি জড়িত এবং পেছনে যারা আছে, তাদের যেন দ্রুত গ্রেপ্তার করা হয়। পাশাপাশি আমি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গেও কথা বলেছি। আমাদের আওয়ামী লীগের উপজেলা কিংবা পৌর শাখার যদি কেউ জড়িত থাকে, তাদের বিরুদ্ধে যেন সাংগঠনিকভাবে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়। যারা অন্য সহযোগী সংগঠনের আছে, তাদেরও যেন বহিষ্কারের সুপারিশ করা হয়।’
এর আগে গত সোমবার নাটোর জেলা প্রশাসক ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনে থেকে দেলোয়ার হোসেন ও তাঁর ভাইসহ দুই আওয়ামী লীগনেতাকে অপহরণ করে নিয়ে মারধর করে দুর্বৃত্তরা। পরে তারা দেলোয়ার হোসেনকে মুমূর্ষু অবস্থায় তাঁর গ্রামের বাড়ির সামনে ফেলে রেখে যায়। রাতেই তাঁকে নাটোর সদর হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে তাঁর শারীরিক অবস্থা উন্নতির দিকে।