ডিসেম্বর ২৩, ২০২৪

আফ্রিকান বর্ষসেরা ফুটবলার নির্বাচিত হয়েছেন নাপোলির নাইজেরিয়ান স্ট্রাইকান ভিক্টর ওশিমেন। সোমবার মরক্কোর মারাক্কেশ শহরে আফ্রিকান ফুটবল কনফেডারেশন (সিএএফ) আয়োজিত এক আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানে ওশিমেনের হাতে পুরস্কার তুলে দেয়া হয়।
গত মৌসুমে ইতালিয়ান সিরি-এ লিগ শিরোপা জয়ে নাপোলিকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন ওশিমেন। আফ্রিকার সর্বোচ্চ এই পুরস্কার পেতে ওশিমেন পিছনে ফেলেছেন লিভারপুলের মিশরীয় উইঙ্গার মোহাম্মেদ সালাহ ও পিএসজির মরোক্কান রাইট-ব্যাক আচরাফ হাকিমিকে।
পুরস্কার হাতে নিয়ে ২৪ বছর বয়সী ওশিমেন বলেছেন, ‘এটা আমার কাছে স্বপ্ন সত্যি হবার মত ঘটনা। আমার প্রতি সমর্থনের জন্য নাইজেরিয়ানদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি। একইসাথে পুরো আফ্রিকার প্রতি কৃতজ্ঞ, যে কারনে বিশ্ব এখন আমাকে চিনে। আমার অনেক ভুল-ত্রুটি থাকা সত্ত্বেও বিভিন্নভাবে আমাকে উৎসাহিত করার জন্য, প্রতিরোধ করার জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে অনেক ধন্যবাদ।’
গত মৌসুমে নাপোলির হয়ে সব ধরনের প্রতিযোগিতায় ওশিমেন ৩১ গোল করেছেন। ৩৩ বছর পর প্রথমবারের মত নাপোলির ইতালিয়ান লিগ শিরোপা জয়ের পিছনে ওশিমেনের অবদান ছিল সর্বাগ্রে। এই পারফরমেন্সের পরপরই ওশিমেনের জন্য ট্রান্সফার ফি বাবদ নাপোলি রাতারাতি ২০০ মিলিয়ন ইউরো হাঁকানো শুরু করেছে।
২০১৫ সালে চিলিতে অনুষ্ঠিত অনুর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপ থেকেই ওশিমেনের প্রতি ইউরোপীয়ানদের নজড় পড়ে। ঐ বছর তিনি জার্মান ক্লাব উল্ফসবার্গে যোগ দেন। এরপর তাকে ধারে বেলজিয়ান ক্লাব চার্লেরোই চুক্তি করে। কিছুদিন পর সেই চুক্তি স্থায়ী জয়। ২০১৯ সালে ওশিমেন ফরাসি ক্লাব লিলিতে যোগ দিয়ে ২৭ ম্যাচে ১৩ গোল করেন। এক বছর পর ৭০ মিলিয়ন ইউরোতে নাপোলি তাকে চুক্তিবদ্ধ করে। কিন্তু নাইজেরিয়া সফরে গিয়ে কোভিডে আক্রান্ত হবার পর মাথার ইনজুরিতে পড়ে ওশিমেনের নাপোলির হয়ে অভিষেক কিছুটা বিলম্ব হয়। ঐ ইনজুরির পর থেকে ওশিমেন প্রতিরক্ষামূলক মাস্ক পড়ে খেলতে নামেন। কিছুদিন পরেই গণমাধ্যমে তাকে ‘‘মুখোশধারী ঘাতক” হিসেবে আ্যাখ্যা দেয়া শুরু হয়।
ইনজুরির কারনে ক্যামেরুনে অনুষ্ঠিত ২০২২ আফ্রিকান নেশন্স কাপ খেলা হয়নি ওশিমেনের। তিউনিশিয়ার কাছে হতাশাজনক হারে শেষ ষোল থেকে বিদায় নেয় নাইজেরিয়া।
২০২৪ আফ্রিকান নেশন্স কাপের বাছাইপর্বে ওশিমেন সর্বোচ্চ ১০ গোল করেছেন। আগামী ১৩ জানুয়ারি থেকে আইভরি কোস্টে মূল পর্ব শুরু হচ্ছে। বাছাইপর্বে সাও টোমে ই প্রিন্সিপকে ১০-০ গোলে বিধ্বস্ত করে রেকর্ড গড়েছে নাইজেরিয়া। ঐ ম্যাচে ওশিমেন হ্যাট্রিকসহ চার গোল করেছেন।
দুই মাস আগে সৌদি আরবের বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচে হ্যামস্ট্রিং ইনজুরিতে পড়ে আবারো সাইডলাইনে চলে যান ওশিমেন। নিয়মিত বিরতিতে এই অনুপস্থিতির কারনে নাপোলি সভাপতি অরেলিও ডি লরেনটিস ওশিমেনের উপর ক্ষেপেছেন। নাপোলি সভাপতি এতটাই ক্ষুব্ধ হয়েছেন যে এ ব্যপারে মন্তব্য করতে গিয়ে তিনি বলেছেন নেশন্স কাপ থেকে নাম প্রত্যাহার না করলে তিনি আর কোন আফ্রিকান খেলোয়াড়ের সাথে চুক্তি করবেন না।


গত বছর প্রথম আফ্রিকান ও আরব দেশ হিসেবে বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে খেলার কৃতিত্ব দেখিয়েছিল মরক্কো। মারাক্কেশে এ কারনে মরক্কো জাতীয় দলের গোলরক্ষক ইয়াসিন বুনু ও তার সতীর্থসহ কোচ ওয়ালিদ রেগ্রাগুইকে সম্মাননা দেয়া হয়েছে। বর্ষসেরা গোলরক্ষক মনোনীত হয়েছেন বুনু, রেগ্রাগুই হয়েছেন বর্ষসেরা কোচ ও বর্ষসেরা দল হিসেবে মনোনীত হয়েছে মরক্কো।
বার্সেলোনার নাইজেরিয়ান ফরোয়ার্ড আসিসাত ওশোয়ালা রেকর্ড ষষ্ঠবারের মত আফ্রিকান বর্ষসেরা নারী খেলোয়াড় মনোনীত হয়েছেন। এর আগে ২০১৪, ২০১৬, ২০১৭, ২০১৯ ও ২০২২ সালে ওশোয়ালা সেরার পুরস্কার পেয়েছিলেন। নাইজেরিয়ান ক্লাব রোবো ও রিভার্স এ্যাঞ্জেলসে খেলার পর লিভারপুল, আর্সেনাল ও ডালিয়ান কুয়াজিয়ানে খেলার পর চার বছর আগে তিনি বার্সেলোনার সাথে স্থায়ী চুক্তি করেছেন। এ বছর নারী বিশ্বকাপে নাইজেরিয়া শেষ ষোলতে খেলেছে। ইংল্যান্ডের কাছে পেনাল্টিতে পরাজিত হয়ে বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিতে হয় নাইজেরিয়াকে। গ্রুপ পর্বে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে জয়ের ম্যাচটিতে ওশোয়ালা গোল করেছিলেন।
আফ্রিকান বর্ষসেরা পুরস্কার :
পুরুষ
বর্ষসেরা খেলোয়াড় : ভিক্টর ওশিমেন (নাইজেরিয়া)
বর্ষসেরা ক্লাব খেলোয়াড় : পার্সি টাউ (আল আহলি, মিশর)
বর্ষসেরা গোলরক্ষক : ইয়াসিন বুনু (মরক্কো)
বর্ষসেরা তরুণ খেলোয়াড় : লামিন কামারা (সেনেগাল)
বর্ষসেরা কোচ : ওয়ালিদ রেগ্রাগুই (মরক্কো)
বর্ষসেরা জাতীয় দল : মরক্কো
বর্ষসেরা ক্লাব : আল আহলি (মরক্কো)

নারী :
বর্ষসেরা খেলোয়াড় : আসিসাত ওশোয়ালা (নাইজেরিয়া)
বর্ষসেরা ক্লাব খেলোয়াড় : ফাতিমা তাগনাউত (এফএআর রাবাত,মরক্কো)
বর্ষসেরা গোলরক্ষক : চিয়ামাকা এননাডোজি (নাইজেরিয়া)
বর্ষসেরা তরুণ খেলোয়াড় : নেসরিন এল চাড (মরক্কো)
বর্ষসেরা কোচ : ডিসাইরি এলিস (দক্ষিণ আফ্রিকা)
বর্ষসেরা জাতীয় দল : নাইজেরিয়া
বর্ষসেরা ক্লাব : মামেলোদি সানডাউন
উল্লেখ্য জাতীয় দলের কোচ ও অধিনায়ক, ২০২৪ চ্যাম্পিয়ন্স লিগের বাছাইপর্বে ও কনফেডারেশন কাপের গ্রুপ পর্বে খেলা ক্লাব, সিএএফ টেকনিক্যাল কমিটির সদস্য ও বাছাইকৃত কিছু গণমাধ্যমের ভোটে বর্ষসেরা খেলোয়াড় নির্বাচন করা হয়। খবর বাসস।

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন...