নভেম্বর ১৬, ২০২৪

যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগভিত্তিক গবেষণা সংস্থা হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ ফার্ম ভারতের শীর্ষস্থানীয় ধনকুবের ও শিল্পপতি গৌতম আদানির বাণিজ্যিক সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে জালিয়াতির অভিযোগ আনার পর দেশটির রাজনীতিতে তোলপাড় শুরু হয়েছে। সরকারি তদন্ত ও তা থেকে প্রাপ্ত তথ্য উপাত্ত প্রতিদিন প্রকাশের দাবি জানিয়ে বৃহস্পতি ও শুক্রবার— পর পর দু’দিন ভারতের পার্লামেন্টের দুই কক্ষ লোকসভা ও রাজ্যসভার অধিবেশন ভণ্ডুল করে দিয়েছেন কংগ্রেস ও অন্যান্য বিরোধী রাজনৈতিক দলের এমপিরা।

বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগের দিন বৃহস্পতিবার কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়্গে পার্লামেন্ট কক্ষে ২ দফায় বৈঠক করেছিলেন দেশটির বিরোধী ১৭টি রাজনৈতিক দলের নেতারা। তারপর শুক্রবার সকালের অধিবেশনে বিরোধী নেতারা অভিযোগের তদন্ত দাবি করলে ভারতীয় সংসদের উভয় কক্ষের অধিবেশন মুলতবি হয়ে যায়।

আদানি ইস্যুতে বৃহস্পতিবারও পার্লামেন্ট অধিবেশন চলার সময় বাধা দিয়েছিলেন কংগ্রেস এমপিরা। সরকারি দল বিজেপির প্রতি তাদের আহ্বান ছিল, আদানি গ্রুপের শেয়ার কেলেঙ্কারি নিয়ে সরকারিভাবে যে তদন্ত শুরু হয়েছে— সে সম্পর্কিত হালনাগাদ তথ্য পার্লামেন্টে আলোচনা করতে হবে। কংগ্রেসের সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়্গে বলেন, ‘এ বিষয়ে তদন্তে কী হচ্ছে তা প্রতিদিন (পার্লামেন্টে) জানাতে হবে।’

বিজেপি সেই আহ্বান প্রত্যাখ্যান করার পর পার্লামেন্ট অধিবেশন থেকে ওয়াকআউট করেন কংগ্রেস এমপিরা।

শুক্রবার পার্লামেন্ট অধিবেশন শুরু হওয়ার পর ফের সেই দাবি জানায় কংগ্রেস ও অন্যান্য বিরোধী দল। এমপিরা বলেন, দাবি মেনে না নেওয়া হলে তারা পার্লামেন্ট অধিবেশন চলতে দেবেন না।

এদিন কংগ্রেস এমপিরা আরো অভিযোগ করেন—নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকার বেশ কয়েকটি সরকারি প্রতিষ্ঠানকে আদানি গ্রুপে বিনিয়োগ করতে বাধ্য করেছে এবং তার ফলে সাধারণ মানুষের সঞ্চয় হুমকির মুখে পড়েছে।

তবে শুক্রবার কংগ্রেস ও অন্যান্য বিরোধী দলগুলোর অভিযোগ নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি।

গুজরাট থেকে উঠে আসা গৌতম আদানি ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত। শুক্রবার পার্লামেন্ট এমপিদের অনেকেই অভিযোগ করেন— এই সম্পর্ককে ব্যবহার করে অস্বাভাবিক দ্রুতগতিতে বিপুল ধনসম্পদের মালিক হয়েছেন আদানি।

গত ২৪ জানুয়ারি চাঞ্চল্যকর সেই অনুসন্ধানী প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ ফার্ম। সেখানে বলা, দশককাল ধরে শেয়ার কারসাজি এবং আর্থিক লেনদেনে প্রতারণা চালিয়ে আসছে আদানি গ্রুপ। কৃত্রিমভাবে শেয়ারের দর বহু গুণ বাড়িয়ে এ গ্রুপ বিশাল সম্পদ গড়েছে। গত কয়েক বছরে আদানি গ্রুপের কোম্পানির শেয়ার ৫০০ শতাংশেরও বেশি বেড়েছে।

প্রতিবেদনটি প্রকাশের পর থেকেই আদানি গ্রুপের সব কোম্পানির শেয়ারের দাম পড়তে শুরু করে; এখনও সেই পতন অব্যাহত আছে। এই দরপতনের জেরে ইতোমধ্যে ১০ হাজার কোটি ডলারেরও বেশি অর্থ খুইয়েছেন গৌতম আদানি।

হিন্ডেনবার্গের যাবতীয় অভিযোগ অবশ্য দ্ব্যর্থহীনভাবে অস্বীকার করেছে আদানি গ্রুপ। গ্রুপের পক্ষ থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, হিন্ডেনবার্গ রিসার্চের প্রতিবেদন ‘মিথ্যা’, ‘ভিত্তিহীন’ এবং ‘শত্রুতাপূর্ণ’। আরও বলা হয়েছে, ভারতের শেয়ারবাজার সম্পর্কে ‘কোনো ধারণা নেই’ হিন্ডেনবার্গ রিসার্চের। এমনকি এই প্রতিবেদন প্রকাশের মাধ্যমে হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ ভারত, তার স্বাধীনতা ও সংহতিকে ‘আক্রমণ’ করেছে বলেও অভিযোগ করেছে আদানি গ্রুপ।

ইতোমধ্যে শুক্রবার হিন্ডেনবার্গ রিসার্চের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে ভারতের সুপ্রিম কোর্টে। জনস্বার্থে মামলাটি দায়ের করেছেন সুপ্রিম কোর্টোর আইনজীবী এমএল শর্মা।

কিন্তু আদানি গ্রুপের এই তাৎক্ষণিক ও শক্ত এই প্রতিক্রিয়ার পরেও তাদের শেয়ারের দরপতন বন্ধ হয়নি।

আদানি গ্রুপের শেয়ার কেলেঙ্কারির প্রতিবাদে ইতোমধ্যে ভারতজুড়ে আন্দোলনের ডাক দিয়েছে কংগ্রেস। ভারতের প্রধান এই বিরোধী দলটির নেতারা জানিয়েছেন সোমবার আদানিদের অফিস, জীবন বিমা ও এলআইসির শাখার সামনে বিক্ষোভ করবেন কংগ্রেসের নেতা-কর্মীরা।

কংগ্রেসের নেতা কে সি ভেনুগোপাল বিবিসিকে বলেন, ‘বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকার সাধারণ মানুষের কাছ থেকে অর্থ নিয়ে তাদের ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের সাহায্য করছে।’

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন...