ডিসেম্বর ২৫, ২০২৪

জগতের প্রতিটি মুমিন-মুসলমানের সমস্ত আবেগ-অনুরাগ প্রাণোত্সারিত ভালোবাসা আর উচ্ছ্বাসে একাকার হওয়া প্রাণ-মন-মনন আকুল করা দিন আজ। উৎসবের রোশনাইঘেরা ১২ই রবিউল আউয়াল। আজ বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) পালিত হবে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবি (সা.)। বিশ্ব মানবতার মুক্তির দিশারি রহমাতুল্লি­ল আলামিন সর্বশ্রেষ্ঠ নবি হজরত মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলা আলিহি ওয়া সাল্লামের জন্ম ও ওফাত দিবস বলে চিহ্নিত করা হয়।

আবেগাপ্লুত কবির ভাষায়, ‘তিনি আলোর মিনার, নূর মদিনার জান্নাতি বুলবুল/ তিনি যষ্টি মুকুল মিষ্টি বকুল বৃষ্টি ভেজা ফুল/ নিখিলের চির সুন্দর সৃষ্টি আমার মুহাম্মদ রাসুল…।’ ‘তুমি প্রিয়তম, আমিনা নন্দন/ কুল-মুসলিমের হৃদয় স্পন্দন/ তুমি বিনে সবি অন্ধকার…।’

আজ থেকে প্রায় সাড়ে চৌদ্দ শ বছর আগে আইয়ামে জাহেলিয়াতের ঘনঘোর তমসা ছাওয়া ৫৭০ খ্রিষ্টাব্দের সুবহে সাদিকের সময় জাজিরাতুল আরবের মক্কা নগরীর সম্ভ্রান্ত কুরাইশ বংশে মা আমেনার কোল আলো করে ‘ত্রিভুবনের প্রিয় মোহাম্মদ এলো রে দুনিয়ায়…।’

‘তৌহিদেরই মুর্শিদ’ অসভ্য, বর্বর ও পথহারা মানবজাতিকে সত্যের সংবাদ দিতে তাদের কাছে তুলে ধরেন মহান রাব্বুল আলামিনের তাওহীদের বাণী। কিন্তু অসভ্য-বর্বর আরব জাতি তার দাওয়াত গ্রহণ না করে তার ওপর নিপীড়ন শুরু করে। বহুমাত্রিক শয়তানি চক্রান্ত আর ষড়যন্ত্র করতে থাকে একের পর এক। মহান আল্লাহর সাহায্যের ওপর ভরসা করে বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য জীবন বাজি রেখে সংগ্রাম চালিয়ে যান তিনি।

বিদায় হজের ভাষণে তিনি আল্লাহর বাণী শুনিয়েছেন মানবজাতিকে :‘আজ থেকে তোমাদের জন্য তোমাদের দিন তথা জীবনব্যবস্থা পরিপূর্ণ করে দেওয়া হলো। তোমাদের জন্য দিন তথা জীবনব্যবস্থা হিসেবে একমাত্র ইসলামকে মনোনীত করা হয়েছে।’

হজরত মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইতিহাসের অতুলনীয় ব্যক্তিত্ব। অন্য ধর্মাবলম্বীরাও তাকে মানবজাতির সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ সংস্কারক ব্যক্তিত্ব হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন। খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী বিখ্যাত পণ্ডিত মাইকেল এইচ হার্ট তার বহুল আলোচিত ‘দ্য হান্ড্রেড’ গ্রন্থে হজরত মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ‘সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ’ হিসেবে স্থান দিয়েছেন। ব্রিটিশ মনীষী সাহিত্যিক জর্জ বার্নার্ড শ বলেছেন, এই অশান্ত পৃথিবীতে তার মতো একজন মানুষের প্রয়োজন। তিনি বেঁচে থাকলে পৃথিবী জুড়ে সুখের সুবাতাস বইত। তার আগমনে যে বিপ্লবের সূচনা হয়েছিল, দুনিয়া জুড়ে তা বিস্তৃত হয়েছে।

বিশ্বনবি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্মদিন ও ওফাত দিবস এক দিনেই বলেই কথিত আছে। তবে তারিখ-সময় এবং বার নিয়ে বিস্তর মতভেদ আছে।

পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (স.) বা আনন্দঘন রাসুলের জন্মদিন উপলক্ষে আজ বিভিন্ন ধর্মীয়, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে। রসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সিরাতের ওপর আলোচনা, সিম্পোজিয়াম, সেমিনার, মিলাদ মাহফিলসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। কয়েকটি ধর্মীয় সংগঠন শোভাযাত্রা বের করবে। দিবসটির তাৎপর্য তুলে ধরে বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশনসহ বিভিন্ন টিভি চ্যানেল বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার করছে। আজ সরকারি ছুটির দিন। জাতীয় দৈনিকগুলো বিশেষ ক্রোড়পত্রও প্রকাশ করেছে। আজ সংবাদপত্রসমূহে ছুটি পালিত হবে। তাই আগামীকাল দৈনিক পত্রিকাসমূহ প্রকাশিত হবে না।

পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (স.) উপলক্ষ্যে প্রেসিডেন্ট মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক পৃথক বাণী দিয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাণীতে বলেছেন, ‘আমার দৃঢ় বিশ্বাস, ধর্মীয় ও পার্থিব জীবনে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (স.)-এর সুমহান আদর্শ ও সুন্নাহ বিশ্ববাসীর জন্য সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ, উৎকৃষ্টতম অনুসরণীয় ও অনুকরণীয় এবং এর মধ্যেই মুসলমানদের অফুরন্ত কল্যাণ, সফলতা ও শান্তি নিহিত রয়েছে।’

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব, বিশ্বমানবতার মুক্তির দিশারি, মহানবী হজরত মুহাম্মদ (স.)-এর জন্ম ও ওফাতের পবিত্র স্মৃতিবিজড়িত ১২ই রবিউল আউয়াল তথা ঈদে মিলাদুন্নবী (স.) বিশ্ববাসী বিশেষত মুসলমানদের জন্য অত্যন্ত পবিত্র ও মহিমান্বিত দিন। এ উপলক্ষে আমি বাংলাদেশসহ বিশ্ব মুসলিম উম্মাহকে আন্তরিক মোবারকবাদ জানাচ্ছি।’

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন...