ভারতের জাতীয় নির্বাচনের (লোকসভা নির্বাচন) ফলাফলকেন্দ্রীক অনিশ্চয়তার প্রভাবে সাম্প্রতিক সময়ে সবচেয়ে বাজে শেয়ার লেনদেন দেখেছে ভারতীয় পুঁজিবাজার। আজ মঙ্গলবার (০৪ জুন) দেশটির পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত ৮৪৮ কোম্পানির শেয়ারে ক্রেতাশূন্যতা দেখা গেছে। বিশেষ করে পাবলিক সেক্টর কোম্পানি, ব্যাংক, অবকাঠামো-সম্পর্কিত কোম্পানির শেয়ার এবং আম্বানি, আদানি গ্রুপের স্টকগুলিও ছিলো ক্রেতাশূন্য । খবর: বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড।
মঙ্গলবার (০৪ জুন) লেনদেন শুরুর কিছুক্ষণের মাঝেই এস অ্যান্ড পি বিএসই সেনসেক্স ৪ হাজার পয়েন্টে কমে যায়। এরপর সময়ের সাথে সাথে সূচক পতন বাড়তে থাকে। সোয়া ১১টা নাগাদ সূচকটি ৭৩ হাজারের নিচে নেমে আসে। এসময় সূচক কমে যায় প্রায় ৬ হাজার ২৩৪ পয়েন্ট বা সাড়ে ৮ শতাংশ।
অন্যদিকে পতনের মুখে পড়ে এনএসইর মূল্যসূচক নিফটি৫০। লেনদেনের প্রথম আড়াই ঘণ্টায় সূচকটি প্রায় ১ হাজার ৯৮২ পয়েন্ট হারিয়ে দিনের সর্বনিম্ন অবস্থান ২১ হাজার ২৮১ পয়েন্টে চলে যায়। পরবর্তি সময়ে ধ্বস কিছুটা সামলে উঠলেও চার বছরের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ৫ দশমিক ৯৩ শতাংশ বা ১ হাজার ৩৭৯ পয়েন্ট পতনে লেনদেন শেষ করে পুঁজিবাজারটি। লেনদেন শেষে এর সূচক নিফটি৫০ এর অবস্থান দাঁড়ায় ২১ হাজার ৮৮৪ পয়েন্টে।
হিন্দুস্তান জিঙ্ক, ভারত বিজলী, ভারত ডায়নামিক্স, কোচিন শিপইয়ার্ড, ডিদেভ প্লাস্টিকস ইন্ডাস্ট্রিজ, আইনক্স উইন্ড, গার্ডেন রিচ শিপবিল্ডার্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ার্স, প্রাভেগ, ইলেকন ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি, এসএমএল আইসুজু, এনবিসিসি (ইন্ডিয়া), কীস্টোন রিয়েলটরস, আইএফসিআই এবং গোদরেজ প্রপার্টিজ সহ ৭৮ টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারদর ১০ শতাংশ পতনের পর সার্কিটে ব্রেকারে এসে আটকে যায়। গত চার বছরের ইতিহাসে এতো বাজে দিন দেখেনি ভারতের পুঁজিবাজার।
সার্কিট ব্রেকার হল কোন কোম্পানির শেয়ার দরের ব্যাপক পতন বা বৃদ্ধি রোধ করার একটি পরিমাপ। সার্কিট ব্রেকারের ধারণাটি প্রথম ১৯৮৭ সালে ১৯ অক্টোবর মার্কিন বাজার বিপর্যয়ের ফলে প্রবর্তিত হয়েছিল, যখন ডো জন্স ইন্ডাস্ট্রিয়াল এভারেজ (ডিজেআইএ) একদিনে ৫০৮ পয়েন্ট বা ২২দশমিক ৬ শতাংশ কমে গিয়েছিল। ঘটনাটি জনপ্রিয়ভাবে ব্ল্যাক মান্ডে বা কালো সোমবার নামে পরিচিত।
বাংলাদেশের পূঁজিবাজারেও রয়েছে সার্কিট ব্রেকার। তবে বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের তুলনায় ভারতের সার্কিট ব্রেকারে কিছুটা ভিন্নতা রয়েছে। দুইটি সার্কিট ব্রেকারের কাজ একই হলেও তাদের শেয়ার ফ্রিজ করার পদ্ধতি ভিন্ন। বাংলাদেশে সার্কিট ব্রেকারের দরবৃদ্ধির বর্তমান লিমিট ১০ শতাংশ এবং পতনের ৩ শতাংশ। কোন শেয়ার যদি এ পরিমান দরবৃদ্ধি বা পতনের শিকার হয় তবে দেশের বাজারে থাকা সার্কিট ব্রেকার সেই শেয়ারের লেনদেন ঐ দিনের জন্য বন্ধ করে দেয়। অর্থাৎ একবার সার্কিট ব্রেকারে কোন শেয়ার আটকে গেলে সেদিনের মতো তার লেনদেন বন্ধ।
অন্যদিকে ভারতীয় পুঁজিবাজারের বিদ্যমান সার্কিট ব্রেকারও নির্ধারিত লিমিটের বেশি দরবৃদ্ধি বা পতন হলে শেয়ারের লেনদেন ফ্রিজ করে, তবে তা কিছু সময়ের জন্য। দেশটির পুঁজিবাজারে দুপুর ১ টার আগে কোন স্টক ১০ শতাংশ বেড়ে গেলে বা কমে গেলে ৪৫ মিনিটের জন্য লেনদেন বন্ধ করে দেয়া হয়। যদি দুপুর ১টা থেকে ২ টা ৩০ মিনিটের মাঝে সার্কিট কার্যকর হয় তবে ট্রেডিং ১৫ মিনিটের জন্য বন্ধ হয়ে যায়। দুপুর আড়াইটার পর আর লেনদেন বন্ধ থাকে না। আর ভারতীয় পুঁজিবাজারের স্বাভাবিক লেনদেনের সময় সকাল ৯ টা ১৫ থেকে বিকাল ৩ টা ৩০ মিনিট অব্দি।