নভেম্বর ২৪, ২০২৪

ফের অশান্ত হয়ে উঠেছে শিল্পাঞ্চল আশুলিয়া। বকেয়া বেতনের দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ করে রেখেছে বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের শ্রমিকরা। বন্ধ হয়ে গেছে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে যান চলাচল। উদ্ভুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ঘটনাস্থলে রয়েছেন পুলিশ, শিল্প পুলিশ, আর্মড পুলিশ, র‍্যাব, বিজিবি ও সেনা সদস্যরা। মহাসড়ক জুড়ে সৃষ্টি হয়েছে তীব্র যানজটের। ভোগান্তিতে পড়েছেন অসংখ্য মানুষ।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শিল্প পুলিশের আশুলিয়া জোনের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সারোয়ার আলম।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বেতনের দাবিতে আজ বুধবার সকাল থেকেই ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের মালিকানাধীন বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের শ্রমিকরা অবস্থান নেন নবীনগর কালিয়াকৈর মহাসড়কের চক্রবর্তী এলাকায়।

গতকাল মঙ্গলবার প্রতিশ্রুত সময়ের মধ্যে বেতন দিতে না পারায় পূর্ব ঘোষণা দিয়েই বুধবার বন্ধ রাখা হয় ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের ৩৩টি কারখানা। এসব কারখানায় কাজ করেন প্রায় আটচল্লিশ হাজার শ্রমিক। তাদের পেছনে মাসিক বেতন হিসেবে গুনতে হয় প্রায় ৮৫ কোটি টাকা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, মাসের প্রথম সপ্তাহে বেতন দেওয়ার কথা থাকলেও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা বিভাগ বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)‌ বেক্সিমকোর প্রাতিষ্ঠানিক অ্যাকাউন্ট জব্দ করায় বেতন দেওয়া সম্ভব হয়নি। মঙ্গলবার ভিন্ন একটি উৎস থেকে মাত্র ৪০০ জনের বেতন দেওয়া হলেও অবশিষ্টদের বেতন পরিশোধ করা যায়নি। যে কারণে এদিনও কাজ বন্ধ রেখে বিক্ষোভ করেন শ্রমিকরা। এক পর্যায়ে মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে প্রায় চার ঘণ্টা অবরোধ করে রাখেন তারা।

গত ১৩ আগস্ট গ্রেপ্তার করা হয় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা ও বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সালমান ফজলুর এফ রহমানকে।

গত ২৯ আগস্ট তাঁর ব্যক্তিগত ও মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যাংক হিসাব জব্দ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা বিভাগ বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)‌।

তবে গত ৮ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর জানান, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে কোন প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করা হয়নি। সেটা যারই মালিকানা হোক না কেন তাদের কোনো ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করা হয়নি। প্রতিষ্ঠান চলবে। সেখানে কর্মকর্তা-কর্মচারিরা কাজ করবে।

তবে বেক্সিমকো শিল্প পার্কের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের এই বক্তব্যের পরিপত্র না পাওয়ায় জনতা ব্যাংক শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতনের অর্থ ছাড় করেনি। যে কারণে ক্ষুব্ধ শ্রমিকরা কাজ বন্ধ রেখে পথে নেমেছেন। শ্রমিকদের বেতন দেওয়া হয় বিকাশের মাধ্যমে। মঙ্গলবার মাত্র ৪০০ জনকে ভিন্ন একটি উৎস থেকে তারা বেতন পরিশোধ করতে পেরেছেন।

ওই কর্মকর্তা আরও জানান, আজ বুধবার (১১ সেপ্টেম্বর) সকালে তারা নিশ্চিত হয়েছেন অবরুদ্ধ প্রাতিষ্ঠানিক হিসাব অবমুক্ত করা হয়েছে। বিকেলের মধ্যে শ্রমিকদের বেতন দেওয়া সম্ভব হলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে।

এদিকে আশুলিয়ার পলাশবাড়িতে বেতন বৈষম্যের প্রতিবাদে কর্মবিরতি করছেন ভারতীয় মালিকানাধীন তৈরি পোশাক কারখানা পার্ল গার্মেন্টস।

যৌথ বাহিনীর সমন্বয়ে তৈরি পোশাকশিল্প কারখানাগুলোর নিরাপত্তায় নিয়োজিত রয়েছেন পুলিশ, আর্মড পুলিশ, শিল্প পুলিশ, র‍্যাব বিজিবি ও সেনা সদস্যরা। ঝুঁকিপূর্ণ বিভিন্ন কারখানার সামনে মোতায়েন করা হয় সেনাবাহিনীর সাঁজোয়া যান, র‍্যাব ও পুলিশের রায়ট কার।

তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠনের (বিজিএমইএ) সভাপতি খন্দকার রফিকুল ইসলাম, উদ্ভুত পরিস্থিতির দিকে নজর রাখা হচ্ছে। পরিস্থিতি শান্ত রাখতে সকলের সহযোগিতা কামনা করছি।

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন...